স্বপ্ন আমরা প্রত্য়েকেই দেখি। আর তার চেয়েও বেশি দেখি দুঃস্বপ্ন। অনেকেই ভাবেন, দুঃস্বপ্ন দেখা মানে বোধহয় খারাপ কিছু। কিন্তু অনেক সময়েই কিন্তু তা নয়। কেন জানেন? বলি তাহলে।
বিংশ শতকের একেবারে গোড়ায় সিগমু্ড ফ্রয়েজ তাঁর ড্রিম অ্য়ানালিসিসের মাধ্য়মে স্বপ্ন বিষয়টার ব্য়াখ্য়া দেওয়ার চেষ্টা করেন। বলে রাখা ভাল, এর আগে স্বপ্ন নিয়ে আধুনিক কোনও মতবাদ বা মতামত পাওয়া যায়নি। তাই ফ্রয়েডের তত্ত্বকে পরে যারা নাকচও করেছেন, তাঁরাও কিন্তু পুরোপুরি ফ্রয়েডকে এড়িয়ে যেতে পারেন না।
স্বপ্ন নিয়ে ফ্রয়েড অনেক কথাই বলেছিলেন। বিস্তারিত সেই ব্য়াখ্য়ায় না-গিয়ে খুব ছোট্ট করে এটুকু বলা যেতেই পারে, আমাদের অবচেতন মনের আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া, ভয় বা উদ্বেগ, সবই স্বপ্নের মধ্য়ে দিয়ে বেরোতে চায়। তবে কিছুটা ছদ্মবেশে। যেমন ধরা যেতে পারে, একজন স্কুল পড়ুয়া একরাতে স্বপ্ন দেখলো, সে একটি লোককে মারছে। কে সেই লোকটি? দেখা গেল, সেই লোকটিকে দেখতে অনেকটা সেই মাস্টারমশাইয়ের মতো, স্কুলে যিনি তাঁকে প্রায়দিনই মারধর করেন। এখন কথা হল কী যে, স্বপ্নে যে লোকটিকে সে দেখলো, তিনি কিন্তু পুরোপুরি মাস্টারমশাইয়ের মতো দেখতে নন। তিনি অন্য় এক লোক। তবে তাঁর চশমার ফ্রেম আর গোঁফজোড়া হুবহু ওই মাস্টারমশাইয়ের মতো। এর ফলে যা ঘটল, তা হল, মাস্টারমশাইয়ের ওপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ স্বপ্নের মধ্য়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। আবার যেহেতু মাস্টারমশাইয়ের গায়ে হাত তোলা রীতিমতো অপরাধ, সমাজ থেকে শুরু করে বাড়ির লোক, কেউই তা মেনে নেবে না, তাই মাস্টারমশাইয়ের চেহারাটা পাল্টে গেল। কিন্তু ওই গোঁফজোড়়া আর চশমার ফ্রেম দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হল, লোকটি আদতে কিন্তু ওই মাস্টারমশাই। সোজা কথায়, স্বপ্নের মধ্য়ে দিয়ে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না।
ওপরের স্বপ্নটিকে সেঅর্থে দুঃস্বপ্ন বলা যায় না। এই উদাহরণটি দেওয়া হল এই কারণে যে, অবচেতন মনের ক্ষোভ কীভাবে বেরোয় স্বপ্নের মধ্য়ে দিয়ে। দুঃস্বপ্নেও কিন্তু, অবচেতন মনের ভয় একভাবে বেরিয়ে যায়। এ-ও একধরনের রেচন। তাতে করে আচমকা ঘুম ভাঙলে একটু সমস্য়া হয় ঠিকই, কিন্তু মনের ভেতর থেকে ওই দুশ্চিন্তাও কিন্তু সাময়িকভাবে নির্গত হয়। এতে করে কিন্তু এক ধরনের লাভও হয়। যৌনতার ক্ষেত্রেও কিন্তু অনেক সময়ে একই ঘটনা ঘটে। অবদমিত কাম স্বপ্নে দেখা নারী বা পুরুষের মধ্য়ে দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। তাতে করে মন হাল্কা হয়।
তাই মাঝেমধ্য়ে দুঃস্বপ্ন দেখলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে, এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার। প্রায়ই যদি নিয়ম করে দুঃস্বপ্ন দেখা দেয়, তবে তা কিন্তু অ্য়াংজাইটি বা ডিপ্রেসনের লক্ষণও হতে পারে। তাই যদি ঘনঘন দুঃস্বপ্ন দেখেন, তাহলে একজন মনোবিদের সঙ্গে দেখা করুন। লাভ বইকি ক্ষতি হবে না।