সিঙ্গাপুরে (Singapore) আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগিতায় কালনার অনিমা তালকুদার (Anima Talukdar)। ৭৯ বছর বয়সেও সোনা জিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করলেন তিনি।
বয়স যে কেবল সংখ্যা মাত্র। এই কথা এর আগেও একাধিকবার প্রমাণ করেছেন অনেকেই। কিন্তু বয়স ৮০-র দোড়গোড়ায় পৌছে তা প্রমাণ করার কথা অনেকেই ভাবেননি। ইচ্ছে, জেদ, আগ্রহ, হার না মানা মনোভাব, কোনও কিছুর প্রতি ভালোলাগা-ভালোবাসা এই বিষয়গুলি থাকলে যে কোন বাধা অতিক্রম করে বা কোনও কিছু অর্জন করাটা যে যে কোনও বয়সে সম্ভব তা আরও একবার প্রমাণ করলেন কালনার অণিমা তালুকদার। বিদেশের মাটিতে দেশের হয়ে সোনা জিতে গড়লেন অনন্য নজির। হাঁটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন অনিমা তালুকদার। সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন তিনি। বিশ্বের সাতটি দেশের প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে সোনা জিতেছেন ভারত তথা বাংলার অনিমা তালুকদার।
অনিমা তালুকদারের বয়স ৭৯ বছর। হাঁটতে ভালোবাসেন অনেক বছর ধরেই। তার পেছনে কারণ অবশ্য গ্রামের কষ্টসাধ্য জীবনযাপন। পেশায় স্কল শিক্ষিকা ছিলেন অনিমা তালুকদার। বর্ধমানের কালনার বাদাগাছি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। তার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ছিল অনেকটাই। সরাসরি কোনও বাসে স্কুলে যাওয়া যেত না । বাস যতদূর যেত সেখান থেকে নেমে এক ঘণ্টার মত পথ পায়ে হেঁটে যেতে হত। রাস্তা ছিল প্রায় দু কিলোমিটারের বেশি। এই পথ কর্মজীবনে বছরের পর বছর পায়ে হেঁটে পার করেছেন অনিমা তালুকদার। ছোট বেলা থেকেই খেলা ধুলোর প্রতি ভালোবাসা ছিল। কিন্তু সেই সখ পূরণ করা হয়নি তখন। কর্মজীবনকে বিদায় জানানোর পর নিজের হাঁটার অভ্যেসকেই নেশায় পরিণত করেন। বয়স্কদের বিভিন্ন হাঁটা প্রতিযোগিতায় নাম দিতে থাকেন। আস্তে আস্তে সেখান থেকেই ধীরে ধীরে খেল জগতে উপরের দিকে ওঠা তার।
আরও পড়ুনঃসুদীপের শতরান, অনুষ্টুপ-অভিমূণ্যর অর্ধশতরান, রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে দুরন্ত শুরু বাংলার
আরও পড়ুনঃশুধু সুনীল গাভাসকর নয়, মোট ৭ জন ক্রিকেটার একই টেস্টে করেছেন ডবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি
গ্রাম, জেলা, রাজ্য পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতে সাফল্য পান অনিমা। এর আগেও একাধিক মেডেল রয়েছে তার ঝুলিতে। এবার সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে খুশি তিনি। সোনা জিতে অণিমা বলেছেন,'কোনও দিন ভাবিনি এই বয়সে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা জিতব। প্রত্যেককে বলতে চাই, রোজ অন্তত ২০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। হাঁটার কোনও বিকল্প নেই।' হাঁটার কারনে কোনও রোগ নেই তার। এখনও সম্পূর্ণ ফিট তিনি। সুগার, রক্তচাপ, অ্যাজমা অন্য়ান্য কোনও অসুখই তাকে এখনও কাবু করতে পারেননি। তাক পরিবারের সদস্যরাও অনিমার এই সাফল্যে খুশি। বছর ঘুলেই বয়স আশি হব। তবে এখনও নিজের হাঁটা ও হাঁটার মাধ্যমে দেশের নাম উজ্জ্বল করা চালিয়ে যেতে চান কালনার অণিমা তালুকদার।