শেখ হেনাঃ রিও অলিম্পিকে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকে পদকের আশা জাগিয়েছিলেন ত্রিপুরার দীপা কর্মকার। তার প্রদুনোভা ভল্ট প্রশংসিত হয়েছিল বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু ফাইনালে অলিম্পিক পোডিয়ামে একটুর জন্য জায়গা হয়না দীপার। সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল চতুর্থ স্থান নিয়েই। কিন্তু এবার টোকিও অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি দীপা কর্মকার। তবে এবার জিমন্যাস্টে ১৩০ কোটি দেশবাসীর সোনা জয়ের স্বপ্নের, প্রত্যাশার ভার বহন করছেন এক বঙ্গ তনয়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার প্রণতি নায়েক। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামের ২৬ বছরের এই তরুণিই এখন বাংলা তথা দেশবাসীর আশা-ভরসা।
টোকিও যাওয়ার পথটা মোটেই সহজ ছিল না প্রণতি রায়ের। ছোট বেলা থেকেই জিমন্যাস্টিকের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। জিমনাস্টিকে দেশ-বিদেশের বহু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে একাধিক পদক জিতেছেন। অবশেষে ২০১৯ সালে এশিয়ান জিমনাস্টিক চাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতে জেলা, রাজ্য ও দেশকে গর্বিত করেছিলেন প্রণতি। কিন্তু ২০১৯ সালেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ্যতা অর্জন না করতে পেরে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তবে নিজের কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রণতি। আর কথায় বলে, ভাগ্য সবসময় বীরের সঙ্গ দেয়। ঠিক তেমনভাবেই মহাদেশীয় কোটায় টোকিও অলিম্পিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যান এই বঙ্গ তনয়া। কলকাতায় বর্তমানে নিজের ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছেন প্রণতি রায়।
শেষ পর্যন্ত টোকিওর প্লেনে ওঠার টিকিট পেয়ে খুশি প্রণতি। তবে দেশবাসীর প্রত্যাশার চাপও বুঝতে পারছেন তিনি। তাই দিন-রাত করে নিজের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছেন না এই জিমন্যাস্ট। তিনি জানিয়েছেন, '২০১৯-এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ্যতা মান অর্জন করতে না পারায় প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলাম। তারউপর অতিমারির কারণে একের পর এক প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। অতিমারির সময়ে কোনও প্রতিযোগিতা না থাকলেও নিজেকে ফিট রেখেছিলাম। তবে কোনওদিন ভাবিনি অলিম্পিক্সে যাওয়ার স্বপ্ন এভাবে পূরণ হবে।'
প্রণতি আগেই তার গ্রাম পিংলার মান বাড়িয়েছে। অলিম্পিকেও গ্রামের মেয়ে সাফল্য পাবে বলে আশাবাদী পিংলাবাসী। প্রণতির মা প্রতিমা নায়েক মেয়ের এই স্বপ্নপূরণ সম্পর্কে জানিয়েছেন,'ছোট বেলা থেকেই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়াত প্রণতি। সেই প্রণতি আজ কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন নিয়ে অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, এ যেন আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আশা করব, ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।' আগামি ২৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে অলিম্পিক। প্রণতিকে অলিম্পিক পোডিয়ামে দেখার অপেক্ষায় বঙ্গ তথা দেশবাসী।