প্রিয় চরিত্রদের কখনও বয়স বাড়ে না। শার্লক হোমস, এরকুল পোয়ারো, ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সী, জন র্যাম্বো, ব্রুস লি চিরকাল সপ্রতিভ। সচিন তেন্ডুলকরও তেমনই একজন নায়ক।
১৯৮৯ সালে ১৬ বছরের সচিন তেন্ডুলকর যখন ভারতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করেন, তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল ৮৫ কোটি। ২০১৩ সালে সচিন যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, তখন দেশের জনসংখ্যা ১২৯ কোটি পেরিয়ে গিয়েছে। ২৪ বছর ধরে দেশের হয়ে খেলেছেন মাস্টার ব্লাস্টার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর রান সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে প্রত্যাশার চাপ। ১৬ বছরের ছেলেটার উপর ছিল ৮৫ কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুরাগীর সংখ্যা বেড়েছে। সারা দেশের চাপ মাথায় নিয়ে খেলা একেবারেই সহজ ছিল না। কিন্তু সেই চাপ নিয়ে খেলেই সফল হয়েছেন সচিন। ডন ব্র্যাডম্যান যাঁর সম্পর্কে বলেছেন, 'ছেলেটা তো আমার মতোই খেলে,' তাঁকে তো কোনওভাবেই বাকিদের সঙ্গে একই সারিতে রাখা যায় না। সচিন সবার চেয়ে আলাদা। বিরল প্রতিভা। রাশিয়ায় ক্রিকেট জনপ্রিয় নয় বলে মারিয়া শারাপোভা তাঁর নাম না-ও শুনে থাকতে পারেন, কিন্তু পুরুষদের টেনিসের সর্বকালের অন্যতম সেরা রজার ফেডেরার সচিনের প্রিয় বন্ধু। গুণীজনই তো গুণের কদর করে।
ব্যোমকেশ বক্সীর চেয়ে বয়সে সামান্য বড় ছিলেন অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। সচিনের দাদা অজিতও বয়সে বড়। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের খ্যাতির পিছনে যেমন অজিতের লেখনীর অবদান ছিল, সচিনের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও তেমনই দাদা অজিতের অবদান রয়েছে। দাদা ক্রিকেট খেলা শেখায় উৎসাহ না দিলে হয়তো ভারতীয় ক্রিকেট এই প্রতিভার সন্ধানই পেত না। ছোটবেলায় টেনিসই বেশি প্রিয় ছিল সচিনের। জন ম্যাকেনরো ছিলেন প্রিয় তারকা। ৭-৮ বছর বয়সেই তাঁর মতো বড় চুল রাখার পাশাপাশি রিস্টব্যান্ড, হেডব্যান্ড পরে টেনিস র্যাকেট হাতে ঘুরতেন সচিন। এই সময় একদিন দাদারের শিবাজি পার্কে রমাকান্ত আচরেকরের কাছে ভাইকে নিয়ে যান অজিত। দাদার পাশাপাশি আর এক চালিকাশক্তি পেয়ে যান সচিন। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এরপর শুধুই ক্রিকেট। তাঁর জীবনে আর কিছু ঠাঁই পায়নি।
ন'য়ের দশকের গোড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ব্রায়ান লারার সঙ্গে সচিনের তুলনা করা হত। টেস্টে ইংল্যান্ডে বিরুদ্ধে ৩৭৫, প্রথম শ্রেণির ম্যাচে অপরাজিত ৫০১ লারাকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সচিন কখনও লড়াই ছাড়েননি। বন্ধু বিনোদ কাম্বলি হারিয়ে গিয়েছেন, লারাও পরবর্তীকালে অনেক পিছিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু সচিন ১২৯ কোটি মানুষের ভরসা হয়েই কেরিয়ার শেষ করেছেন। অবসরের ১০ বছর পরেও স্টেডিয়ামে কেক কেটে আগাম জন্মদিন পালন করতে হয় তাঁকে। গ্যালারি থেকে এখনও ধ্বনি ওঠে 'সচিন-সচিন'। এটাই তো ৫০ বছরের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন-
সচিনই টেকনিক্যালি সেরা ব্যাটার, মত দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ পন্টিংয়ের
২০০৩ বিশ্বকাপের সময় একদিনও নেটে অনুশীলন করেননি সচিন, স্মৃতিচারণায় হরভজন
Sachin Tendulkar: জীবনের ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরের