প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ মুর্শিদাবাদ জুড়ে 'সুপারি কিলার'দের রমরমা ঠেকানো, আতঙ্কে টতস্থ ইন্দো-বাংলা সীমান্ত।'তাদের' নামেই মুর্শিদাবাদের বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠছে। পোশাকি নাম 'সুপারি কিলার' নামে।তাতেই ঘুম উড়েছে পুলিশের ছোট থেকে বড় মেজো কর্তাদের।একসময় মুর্শিদাবাদের ‘মার্ডার সিন্ডিকেট’ কাল ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল তাবড় পুলিস আধিকারিকদের। এখন সেই সিন্ডিকেটের দাপট আর ততটা নেই। পরিবর্তে এখন তাদেরকেও টেক্কা দিচ্ছে প্রতিবেশী জেলা নদিয়া, বীরভূম, মালদার সুপারি কিলাররা।
ফিল্মি কায়দায় খুন
আরও পড়ুন, বেলেঘাটা কাণ্ডে রিপোর্ট তলব কমিশনের, কলকাতার একাধিক স্থানে আক্রান্ত BJP প্রার্থী.
বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলায় যে কয়েকটি খুন হয়েছে সেগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে নদীয়ার সুপারি কিলারদের নাম। সম্প্রতি নওদায় এক শিক্ষক তথা তৃণমূল নেতাকে পার্টি অফিসে ঢুকে খুন করে পেশাদার খুনিরা। সন্ধ্যাবেলা মুখে কাপড় বেঁধে পার্টি অফিসে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে শিক্ষকের শরীরে গুলি চালানো হয়। ফিল্মি কায়দায় খুন করার পরেই তারা চম্পট দেয়। তারপরেই একের পর এক সুপারি কিলার দিয়ে খুনের ঘটনা ঘটে থাকে মুর্শিদাবাদের কান্দি থানা এলাকাতেও একইভাবে এক তৃণমূল নেতাকে খুন করা হয়েছিল। থেমে থাকেনি ট্র্যাডিশন। ডোমকলের পারদিয়ার গ্রামে এক হাতুড়ে চিকিৎসককে ওষুধের দোকানের মধ্যে খুন করা হয়। তাঁর উপরেও একই কায়দায় হামলা চালানো হয়েছিল। ছ’জনের দুষ্কৃতীদল খুব কাছে থেকে নাইন এমএম জাতীয় পিস্তল দিয়ে তাঁকে পরপর পাঁচ থেকে ছ’টি গুলি করে চম্পট দেয়। তারা বাইক চালিয়ে নদীয়ার দিকে চলে যায়। সিসি ক্যামেরা থেকে পাওয়া একটি বাইকের নম্বর প্লেট দেখে পুলিস জানতে পেরেছে সেটির রেজিস্ট্রেশন নদীয়ায় হয়েছিল।
কীভাবে ‘অপারেশন’ করে সুপারি কিলাররা?
আরও পডুন, মহাজাতির পর বিধান সরণি-রবীন্দ্র সরণিতেও বোমাবাজি, রিপোর্ট তলব কমিশনের
জানা গিয়েছে, টার্গেট অনুযায়ী দর ঠিক হয়। হেভিওয়েট কাউকে খুন করার জন্য তারা ১০-১৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকায়। তার থেকে কম গুরুত্বের কাউকে ‘টপকানোর’ রেট চার-পাঁচ লক্ষ টাকা। আবার সাধারণ মানের কাউকে খতম করতে তারা এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা নেয়। সুপারি কিলাররা পাঁচ থেকে সাতজনের দলে কাজ করে। প্রথমে তারা শিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়। খুনের ১৫-২০দিন আগে থেকে তারা রেইকি শুরু করে। টার্গেটে থাকা ব্যক্তি কখন, কোথায়, কার সঙ্গে কীভাবে থাকেন সব কিছু তারা বিস্তারিত জেনে নেয়। এলাকার বিভিন্ন রাস্তা সম্পর্কেও তারা ভালোভাবে তথ্য জোগাড় করে। তারপরে নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে তারা অপারেশন চালায়। আরও জানা গিয়েছে, তাদের হাতে নাইন এমএম এবং ওয়ান শটার জাতীয় পিস্তল থাকে। তারা শিকারকে মুঙ্গেরে তৈরি নাইন এমএম জাতীয় পিস্তল থেকে গুলি করে। শ্যুটআউট হওয়ার পর গুলির শব্দ শুনে এলাকা থেকে লোকজন ছুটে আসে। সেই ভিড় সরাতে তারা ওয়ান শটার থেকে শূন্যে গুলি করে। এই পিস্তল থেকে গুলি করা হলে আওয়াজ বেশি। সেকারণে ভিড় হলেও গুলির শব্দে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
সুপারি কিলাররা বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, সুপারি কিলাররা বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে। অপারেশন চালানোর সময় তারা শব্দগুলি ব্যবহার করে। যেমন তাদের কাছে খুনের অর্থ টপকে দেওয়া। একসময় মুর্শিদাবাদ জেলার সুপারি কিলাররা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে অপারেশন সেরে আসত। জেলায় মার্ডার সিন্ডিকেটের সদস্যদের কদর ছিল অনেক বেশি। কিন্তু পুলিস ব্যবস্থা নিতে শুরু করায় তাদের অনেকেই শ্রীঘরে রয়েছে। আবার কেউ কেউ সেই পথ থেকে সরে এসেছে। অনেকে আবার নদীয়ার সুপারি কিলারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একের পর এক অপরেশন সারছে। পাশেই নদীয়া জেলা হওয়ায় খুন করার পর খুব সহজেই তারা সেখানে গিয়ে গা ঢাকা দেয়। তারা অত্যন্ত নিখুঁত কায়দায় অপারেশন করে। ফলতো বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদের পড়শী জেলার সুপারি কিলারদের নেটওয়ার্ক বানচাল করাই এখন পুলিশ কর্তাদের মূল লক্ষ্য তা বলাই যায়।