শমিকা মাইতি, প্রতিনিধিঃ- কোনও কিছুতেই বিচলিত হন না ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্টে বিরোধীদের প্রতিটা কথার বেছে বেছে জবাব দেন জনসভায়। কখনও জঙ্গলমহলে গিয়ে বিজেপি-র ‘মাজা ভেঙে’ দিতে বলেন, কখনও আবার ‘ভোটের ফল বেরোলে পদ্মফুল চোখে সর্ষেফুল দেখবে’ বলে ছড়া কাটেন।
আরও পড়ুন, 'আমাকে চাইলে সোহম-অদিতি ভূলে যান', শেষবেলায় প্রার্থীদের উপর ভরসা হারালেন কি 'দিদি'
বাংলায় ভোটের দামামা বাজার আগে থেকেই বিজেপি-র নিশানায় ছিলেন অভিষেক। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বারবার। বালি, কয়লার পর গরু চুরিতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। কয়লা-কাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরার নাম সিবিআইয়ের খাতায় ওঠার পর আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়েছে বিজেপি। অভিষেক এই সবে না-দমে বলছেন, ‘সিবিআই দেখিয়ে এক জনকে দলে নিয়েছে, সে শিরদাঁড়া বেচে দিয়েছে। আমার শিরদাঁড়া ফর সেল নয়। আমাকে কাটতে পারবেন না। কেটে দিলেও তৃণমূল জিন্দাবাদ বেরোবে।’ গরু আর কয়লা চুরি নিয়ে ওঠা অভিযোগের ‘ভিত্তিহীন’তা বোঝাতে অভিষেকের মন্তব্য, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে বর্ডার (বিএসএফ) আর কয়লাখনি (সিআইএসএফ) এলাকায়। তারা কেন থামাচ্ছে না কোটি কোটি টাকার চুরি হচ্ছে বলছে যখন।’ উল্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই কারণে পদত্যাগ করা উচিত বলে দাবি করেন অভিষেক।
আরও পড়ুন, 'কীভাবে কড়া ডোজ দিতে হয় জানি', সৌমেন্দুর গাড়ি হামলাকাণ্ডে বিস্ফোরক শিশির
এদিকে, দুর্নীতির পাশাপাশি অভিষেকের নামের পাশে ‘ভাইপো’ তকমাটাও ভাল ভাবেই সাঁটিয়ে দিয়েছে বিরোধীরা। ‘ভাইপো’ আর ‘দুর্নীতি’ যেন সমার্থক শব্দ। বস্তুত দলের থেকে মমতা ভাইপোকে বেশি গুরুত্ব দেন বলে অভিযোগ শুধু বিজেপি-র নয়, তৃণমূলের অন্দরেও। প্রাক্তন তৃণমূল মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি-তে যোগদানের আগে ও পরে এই নিয়ে প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। অভিষেক সেই অভিযোগেরও সপাট জবাব দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘মুকুল রায় নিজে বিজেপি-র সহ-সভাপতি ছিলেন আর তাঁর ছেলে বীজপুরের বিধায়ক। কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ছেলে আকাশ মধ্যপ্রদেশ থেকে বিধায়ক হয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী নিজে বিধায়ক, মন্ত্রী ছিল। বাবা ও ভাই সাংসদ। আরেক ভাই মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, আর একজন কাউন্সিলর। অথচ, আমাকে পরিবারতন্ত্র নিয়ে আক্রমণ করছে।’ এক ধাপ এগিয়ে, অভিষেক এ-ও বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি আমার পরিবার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ রাজনীতি করবে না। তোমার পরিবার থেকেও একজন রাজনীতি করবে কথা দাও।’
আরও পড়ুন, কমিশনের গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় উঠে এল নয়া তথ্য, কী বলছে পুলিশ
এই ভাবে, বিরোধীরা যত বেশি আক্রমণ করছে, অভিষেকের জিভের ধার তত বাড়ছে। অভিষেকের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাগযুদ্ধে সম্ভবত জড়িয়েছেন শুভেন্দু। মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে শুভেন্দু স্লোগান তুলেছিলেন ‘তোলাবাজ ভাইপো’ হঠাও। তবে অভিষেকের নাম করেননি তিনি। সেটা নিয়ে ব্যাঙ্গ করে অভিষেক বলেন, ভয়ে তাঁর নাম না নিয়ে ভাইপো বলে ডাকছে লোকে। অভিষেকের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই। নাম করলেই আইনি নোটিস খেতে হবে। শুভেন্দু এরপর বিজেপি-র একটা সমাবেশে রীতিমতো নাম করে বলেন, ‘তোলাবাজ ভাইপো অভিষেক হঠাও।’ অভিষেক সঙ্গে সঙ্গে আইনি পদক্ষেপ করেন। এদিকে, অভিষেক নিজে বিভিন্ন সভায় শুভেন্দুকে তোলাবাজ, ঘুষখোর, মীরজাফর বিশেষণে ভূষিত করছেন। শুভেন্দু যার প্রেক্ষিতে আবার মানহানির অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ বিধানসভা ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রকাশ্যে আসে নারদা স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ। যেখানে তৃণমূলের বড় বড় নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার সদস্য ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারী, সৌগত রায়, মুকুল রায়, শঙ্কুদেব পণ্ডাদের হাত পেতে টাকা নিতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে সরাসরি টাকা নিতে দেখা যায়নি বলে ‘অ্যাডভান্টেজে’ রয়েছেন অভিষেক। অন্য দিকে, মুকুল, শঙ্কু, শোভন, শুভেন্দু এখন বিজেপিতে। প্রতিটি জনসভায় নিয়ম করে তাই নারদা প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক মনে করিয়ে দেন, ‘নারদায় টাকা নিয়েছো তুমি। তোলাবাজ তুমি।’ তবে, অভিষেকের এই ধরনের কথাবার্তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি নেতারা। এক রাজ্য বিজেপি নেতার কথায়, ‘সৌগত রায়, ফিরহাদ থেকে শুরু করে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মতো নারদা-কাণ্ডে যুক্ত অনেকেই এখনও তৃণমূলে রয়েছে। আগে এদের দল থেকে তাড়ানো হোক, তারপর আমরা অভিষেকের কথা শুনব।’