একদিকে পুরাতন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা, পাশাপাশি শাসকদলের রাশ ও সেই সঙ্গে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ক্ষমতা জাহির।এই নিয়েই টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে রাজ্যের শেষ অষ্টম দফার ভোট সম্পন্ন হবে জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রে।গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পদ্মাপারের বাসিন্দা সকলে এখন অপেক্ষা করে বসে রয়েছেন এই এলাকার নির্বাচনের হালচাল দেখবার জন্য। যদিও একসময়ের সিপিএমের দখলে থাকা জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রে এখন ফিকে হয়ে গেছে লাল রং।
আরও পড়ুন, কমিশনকে ফাঁকি দিয়ে নজরবন্দী থাকাকালীন উধাও অনুব্রত, 'কেষ্টদা' নিয়ে শোরগোল বীরভূমে
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই দলে 'বিভীষণ' তৈরি হয়েছিল। লাল পার্টির ঝান্ডা ধরে দলের ক্ষতি করেছিল। নেতারা বুঝতে পারেনি। লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর ওদের হুঁশ ফিরেছিল। এমনটাই বলছেন এলাকার বাসিন্দারা। আর এবার বিভীষণরাই এই কেন্দ্রে সিপিএমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তারা প্রকাশ্যে লাল ঝান্ডা হাতে ঘুরেছে ঠিকই কিন্তু ভিতরে অন্য খেলা খেলেছে। প্রার্থী নিয়ে এই কেন্দ্রে সিপিএমের কোন্দল প্রকাশ্যে রয়েছে। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দলের চারবারের বিধায়ক ইউনুস সরকার সাংবাদিক বৈঠক করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। পরে জেলা নেতৃত্ব অবশ্য তাঁর অভিমান ভাঙিয়েছে। তারপর আর তিনি প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে হাঁটেননি। কিন্তু তাঁর অনুগামীদের অনেকেই শীর্ষ নেতৃত্বকে শিক্ষা দিতে ধনুক ভাঙা পণ করেছেন।
আরও পড়ুন, করোনা আক্রান্ত অধীর, আরোগ্য কামনায় কীরিটেশ্বরী মন্দিরে হোম যজ্ঞে অনুগামীরা
অন্যদিকে জোট সঙ্গী কংগ্রেসেরও অনেকেই বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নেতারা বাম প্রার্থীর হাত ধরে প্রচার করলেও তাদের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকরা বেঁকে বসেছেন। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তারা দ্বিতীয় স্থানে ছিল। সেই কারণে এখানে তারা প্রার্থী দিতে চেয়েছিল। কিন্তু জোটের শর্ত মেনে তা হয়নি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী এখান থেকে জয়ী হয়েছিলেন। যদিও তাদের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবু জোটের ফর্মুলা অনুযায়ী এখানে বামেরা প্রার্থী দেওয়ায় কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা তা মানতে চায়নি। কংগ্রেস নেতা আব্দুর রেজ্জাক বলেন, আমরা জোটের প্রার্থীর সঙ্গেই আছি। স্থানীয়রা আরও বলেন, ১৯৭৭সাল থেকে এই কেন্দ্রে সিপিএম জিতে এসেছে। কিন্তু এবার এখানে জটিল সমীকরণ তৈরি হওয়ায় বাম দুর্গে বড়সড় ফাটল ধরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন, Election Live Update- তারাপীঠে খোঁজ মিলল অনুব্রত-র, ওদিকে শেষ দফার আগে তৃণমূল ত্যাগ
এনআরসি হাওয়া এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য এই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মন জয় করেছে শাসকদল। তারপর বাম শিবিরে অন্তর্ঘাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তাদের পাল্লা আরও ভারী রয়েছে। যদিও জলঙ্গিতে শাসকদলেরও বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাদের প্রতীকে জিতে আসা জেলা পরিষদের এক সদস্যা রফিকা সুলতানা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, জেতার বিষয়ে আমি ১০০শতাংশ নিশ্চিত। তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক বলেন, এই এলাকায় নির্দল কোনও ফ্যাক্টর নয়। সাধারণ মানুষ নির্দল কে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেবে ।' বিজেপিও এই ভোটে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে এলাকাবাসীর একাংশ। যদিও সিপিএম প্রার্থী সইফুল ইসলাম মোল্লা শাসক দল তৃণমূলের দিকে অভিযোগ তুলে বলেন বলেন, ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের উপর হামলা করছে।যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অতীতে এমন অভিযোগ সিপিএমের বিরুদ্ধেই উঠত। তাই সব মিলিয়ে জলঙ্গি তে আটকে রয়েছে এলাকাবাসীর নজর।