এর আগে কোনওদিন এত ভোট পায়নি তৃণমূল কংগ্রেস
রেকর্ড ভাঙা জনমত পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
অন্যদিকে বিজেপি ধরে রাখতে পারল না ২০১৯-এর ফলও
২ বছরে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের ব্যবধান বাড়ল ৭ শতাংশ
রাজ্য জুড়ে উঠেছিল 'গেল গেল' রব। ২০২১-এ তৃণমূল কংগ্রেসকে 'সাফ' করার আওয়াজ তুলেছিল বিজেপি। শুধু বিজেপি কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় পাশ থেকে এক এক করে সরে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো একসময়ের বিশ্বস্ত সেনাপতিরাও। কিন্তু, তারপরেও বিজয়ী, সেই দিদি। বারবার 'পিসি পিসি' বলেও তাঁর পরিচয় গুলিয়ে দিতে পারেনি বিপক্ষ। তৃণমূল শুধু জেতেনি, আগের থেকে আরও বেশি সমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে।
সোমবার সকাল পর্যন্ত নির্বাচন হওয়া ২৯২টি আসনের পূর্ণ ফল সামনে আসেনি। হিসাব বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস ২১০টি আসন ইতিমধ্য়েই জিতেছে, আরও ৩টিতে এগিয়ে রয়েছে। বিজেপি জিতেছে ৭৭টি আসন, অন্যান্যরা ২টি আসন। বাম-কংগ্রেসের ভাগ্যে একটিও আসন জোটেনি। তবে শুধু নিছক আসন সংখ্য়াতেই নয়, রাজ্যে প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ হিসাবেও নিজেদের আগের সব ভোটের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ভোট প্রাপ্তির শতাংশ হার - প্রায় অর্ধেকই সবুজ, আর বাকি অংশের সিংহভাগেই রয়েছে গেরুয়া
২০২১ সালে এখনও পর্যন্ত যত ভোট গোনা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে, মোট ভোটের ৪৭.৯ শতাংশ। আর অনেকটা পিছনে রয়েছে বিজেপি, ৩৮.১ শতাংশ। অর্থাৎ, জয়ী দল এবং তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটপ্রাপ্তির ফারাকটা প্রায় ১০ শতাংশের। দল হিসাবে দেখলে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে এরপরই রয়েছে সিপিএম। তারা পেয়েছে মাত্র ৪.৭২ শতাংশ ভোট। এরপর আছে জাতীয় কংগ্রেস, তারা পেয়েছে ২.৯৪ শতাংশ ভোট। এছাড়া রাজ্যে ১ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে যে, সে কোনও রাজনৈতিক দল নয়, 'নোটা'। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলদের কাউকেই পছন্দ নয় বলে জানিয়েছেন ১.০৮ শতাংশ ভোটদানকারী।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন, রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রটা বদলে দিয়েছিল। ১৮টি আসন জিতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে উত্থান ঘটেছিল বিজেপির। সেই ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসন জিতেছিল, ভোট পেয়েছিল ৪৩.৬৯ শতাংশ। আর বিজেপি পেয়েছিল ৪০.৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ, সেই সময় রাজ্যের শাসক দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে ভোট প্রাপ্তির ফারাকটা ছিল মাত্র ৩ শতাংশের মতো। ৩ শতাংশেরএই ফারাকটা সামনের ২ বছরে মেটাতে তো পারেইনি বিজেপি, বরং তা বেড়ে ১০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এই কারণেই রাজ্যে বিজেপির ফল আশানুরূপ হয়নি। অন্যদিকে ২০২১-এ একটিও লোকসভা আসন না পেলেও ৬.৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল সিপিএম, আর ২টি আসন পাওয়া কংগ্রেস পেয়েছিল ৫.৬৭ শতাংশ ভোট। পরের দুই বছরে দুই দলই ভাল রকমের শক্তি খুইয়েছে।
আরও পড়ুন - গ্লুকোজ পাউডার দিয়ে 'নকল রেমডিসিভির', মোদী-রাজ্য থেকে ধৃত বড় সড় জালিয়াতি চক্র
আরও পড়ুন - দেশে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ হলেন মমতা, এক পায়ে বাংলা জেতার পর এবার কি দুই পায়ে দিল্লি
আরও পড়ুন - আর ভোট-কুশলী হিসাবে কাজ করবেন না প্রশান্ত কিশোর, বাংলার ফল বের হতেই বিরাট ঘোষণা
৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে মুখ্য়মন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইবার, অবশ্য একা লড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস। সঙ্গে ছিল কংগ্রেস, এসইউসিআই-এর মতো কয়েকটি দলও। ২২৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূল পেয়েছিল ১৮৪টি আসন। ভোট প্রাপ্তির শতাংশ হিসাব ছিল ৩৮.৯৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে একা লড়ে ২১১টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেইবার ঘাসফুল শিবির ভোট পেয়েছিল ৪৪.৯১ শতাংশ। এবার কিন্তু আরও বেশি মানুষের সমর্থন নিয়ে হ্যাটট্রিক করলেন মমতা।