বন্যাত্রাণে ৭৬ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ, গভীর রাতে থানায় আত্মসমর্পণ তৃণমূল নেতার

তৃণমূল নেতা বলেন, "আমাকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়েছে। বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে দলের বড় বড় রাঘববোয়াল জড়িয়ে আছে। প্রশাসন তদন্ত করছে। আইনের উপর আমার ভরসা আছে। আমি কোনও কেলেঙ্কারিতে জড়িত নই। তদন্তে কিছুদিনের মধ্যেই সব বেরিয়ে আসবে।"

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে (Malda Harishchandrapur) ২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে নয়া মোড়। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় আত্মসমর্পণ করলেন হরিশ্চন্দ্রপুর বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা (TMC Leader) আফসার হোসেন। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে অবিলম্বে হরিশ্চন্দ্রপুর বন্যার ত্রাণ (Flood Relief) কেলেঙ্কারিতে প্রধান অভিযুক্ত বরই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনা মনি সাহা, হরিশচন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাদক্ষ রোশনারা খাতুন, এবং বরই অঞ্চলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার তথা প্রাথমিক শিক্ষক আফসার হোসেনকে আত্মসমর্পণ (TMC Leader Surrender) করতে হবে। কিন্তু, এই তিনজন দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক ছিলেন। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের এক সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন অন্যতম অভিযুক্ত ফেরার হয়ে থাকা তৃণমূল নেতা আফসার হোসেন। 

থানায় দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমকে তৃণমূল নেতা বলেন, "আমাকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়েছে। বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে দলের বড় বড় রাঘববোয়াল জড়িয়ে আছে। প্রশাসন তদন্ত করছে। আইনের উপর আমার ভরসা আছে। আমি কোনও কেলেঙ্কারিতে জড়িত নই। তদন্তে কিছুদিনের মধ্যেই সব বেরিয়ে আসবে।" এদিকে দীর্ঘ কয়েক মাস বাদে দীর্ঘদিন ধরে ফেরার হয়ে থাকা তৃণমূল নেতা আত্মসমর্পণ করায় হরিশ্চন্দ্রপুর বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারি অন্য মাত্রা নিয়েছে। 

Latest Videos

আরও পড়ুন- ফের বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে ভাংচুর - দোলপূর্ণিমার রাতেই পরিকল্পিত হামলা, আহত ৩

প্রসঙ্গত হরিশচন্দ্রপুর বরই গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে এর আগে অভিযুক্ত তালিকায় ছিলেন হরিশচন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তথা বিরোধী দল-নেত্রী সুজাতা সাহা, হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাদক্ষ দক্ষ রোশন আরা খাতুন, বরই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনা মনি সাহা এবং বড়ই অঞ্চলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা প্রাথমিক শিক্ষক আফসার হোসেন। যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস এবং সুজাতা সাহা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যান। সুজাতা সাহার বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে মাস্টাররোলে তাঁর সই জাল করা হয়েছিল। এমনই অভিযোগও জানিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু বাকি তিন অভিযুক্ত পলাতক ছিলেন। এলাকার বিরোধীরাও পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর মধ্যে তৃণমূল নেতার আত্মসমর্পণ করে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়।

আরও পড়ুন- দলীয় রং নয়, নানা রঙের মিশেলে মাতলেন রত্না-কৃষ্ণারা

এলাকার বিরোধীদের অভিযোগ এই আফসার হোসেনের নির্দেশে বরই গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত হতো। সোনা মনি সাহাকে বাইরে থেকে পরিচালিত করতেন এই প্রভাব শালী তৃণমূল নেতা। এই নেতার পিছনে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বড় বড় রাঘব বোয়াল তৃণমূল নেতার হাত রয়েছে। এখন বিরোধীদের দাবি অবিলম্বে এই সমস্ত রাঘব বোয়ালদের ও অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। উল্লেখ্য, পাঁচ বছর আগে মালদহের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৭০ হাজার টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩,৩০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। ওই জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৩৯৪ জন।

আরও পড়ুন- বিজেপি হোক বা তৃণমূল, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কীভাবে দিনভর হোলিতে মেতে উঠলেন রাজনীতিবিদেরা

অভিযোগ, সেখানে বরাদ্দ ক্ষতি-পূরণের অর্থ থেকে প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই দাবিতে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন উচ্চ আদালতে। বৃহস্পতিবার ওই মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশ, আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবে ক্যাগ। এরপর আত্মসমর্পণ করে তৃণমূল নেতা আফসার হোসেন বলেন, "আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে। পুলিশ সঠিক তদন্ত করুক বড় বড় রাঘব-বোয়াল সব উঠে আসবে।"

মূল অভিযোগকারী তথা বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, "তৃণমূল নেতা আফসার হোসেন গভীর রাতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। পঞ্চায়েত সমিতির বহু টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাঁচার জন্য সুপ্রিম কোর্ট গেছিলেন কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জামিন খারিজ করে দেয়। তাই আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনা মনি সাহা এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য রোশনারা খাতুন ও অভিযুক্ত এই দুর্নীতিতে। তাদেরকেও আত্মসমর্পণ করতে হবে।"

হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, "বন্যা ত্রাণ দুর্নীতিতে বিডিওর পক্ষ থেকে কয়েকজনের নামে এফআইআর করা হয়েছিল। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ওই কয়েকজনের জামিনের আবেদন খারিজ করে। তাঁদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আফসার হোসেন আত্মসমর্পণ করেছেন। দল কোনো দুর্নীতির পাশে নেই বা দুর্নীতি গ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে না।"

জেলা বিজেপি সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়ালা বলেন, "এদের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। তৃণমূলের নিচু তলার কর্মী থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় নেতারা দুর্নীতিতে যুক্ত। গাছ লাগানো নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তে নামবে। ক্যাগ অডিট রিপোর্ট জমা দেবে। সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।"

Share this article
click me!

Latest Videos

টোটোর ভাড়া চাইতেই এইরকম কাণ্ড! দেখলেই আঁতকে উঠবেন, চাঞ্চল্য Malda-এ | Malda News Today
সীমান্তের নিরাপত্তা হুমকির মুখে! Bangladeshi Infiltration কবে থামবে? | Gede Border | Rohingya
'চায়ের দোকানে চা বিক্রি করুন, চাকরির থেকে বেশি টাকা আয় হয়' মন্তব্য মমতার | Mamata Banerjee Malda
কি বললেন? সুকান্তকে পাল্টা জবাব দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | Sukanta Majumdar | Bangla News
বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এ কী করলো নাবালিকার সঙ্গে! চমকে যাবেন আপনিও, চাঞ্চল্য Nabadwip-এ | Nadia