করোনার তৃতীয় ঢেউ-এ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়তে পারে ছোটরা। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য রাজ্য জুড়ে নিও-নেটাল কোভিড ওয়ার্ডও তৈরি করা হয়েছে। তৃতীয় ঢেউ নিয়ে খোদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোভিড বিধি জেরে দেড় বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাঙ্গণ। কিন্তু, বলাই ষাট! এক্কেবারে নিয়মে তোয়াক্কা না করেই স্কুল খুলে বসল বালুরঘাটের অভিযাত্রী শিশু বিদ্যানিকেতন। ক্ষুদে পড়ুয়াদের কারও-র মুখে মাস্ক রয়েছে কারও মুখে নেই- তাতে কী! অনৈতিকভাবে সরকারি নির্দেশ ছাড়াই এমনভাবে স্কুল চলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য। হাজির হয়ে যান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। কিন্তু, তার আগেই পাগাড় পার স্কুলের দায়িত্ববান শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে আধিকারিকরা। কারা এমন উল্টো-রাজার উল্টো দেশের মতো আচরণ করল তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে শুধুমাত্র মুখ খুলেছে অভিযাত্রী শিশু বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষিকা রূপালি সাহা-র। তাতে যা জানা গিয়েছে যে, অভিভাবকরা নাকি স্কুল খোলার জন্য চাপ দিচ্ছিল। সেই কারণে তারা স্কুল খুলে দিয়েছেন। কিন্তু তাহলে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা কোথায়? এমন প্রশ্নে প্রায় ভিড়মি খাওয়ার যোগাড় প্রধান শিক্ষিকার। ক্লাস ঘরের মধ্যে তখন সরল চোখে প্রবল জিজ্ঞাসা ক্ষুদে ক্ষুদে পড়ুয়াদের। যারা হয়তো ঠিকমতো করে জানেও না বাইরের কোভিড বিধি না মেনে মেলামেশা করাটা কতটা সাংঘাতিক।
আরও পড়ুন- সোনিয়া-কেজরিওয়ালের আগে দলীয় সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা, কোন পথে বিরোধী জোট
করোনার তৃতীয় ঢেউ-এ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়তে পারে ছোটরা। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য রাজ্য জুড়ে নিও-নেটাল কোভিড ওয়ার্ডও তৈরি করা হয়েছে। তৃতীয় ঢেউ নিয়ে খোদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এহেন পরিস্থিতিতে যাতে আঠারো বছরের নিচে টিকাকরণ চালু করা যায় তার জন্য প্রস্তুতি চলছে। কোভিড ১৯ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চলছে। সুতরাং, অভিযাত্রী শিশু বিদ্যানিকেতন যার একটা সময়ে বালুরঘাট শহরে প্রাথমিক শিক্ষা আঙনে একটা ঐতিহ্য ছিল, সেই স্কুলে এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই হতবাক করেছে সকলকে।
স্কুল চত্বরেই কিছু অভিভাবক জানান, বাড়িতে ছেলে-মেয়েরা দুষ্টুমি করছিল তাই স্কুলে আনা। কিন্তু কোভিড বিধি-তে যেখানে স্কুল খোলার কোনও সরকারি নির্দেশ সেখানে কী ভাবে এমনটা হতে পারে! এই প্রশ্নের উত্তরে কোনও সুস্পষ্ট জবাবা অভিভাবকরা দিতে পারেননি। অভিযাত্রী শিশু বিদ্যানিকেতনের পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুমিত চক্রবর্তী আবার অবাক করা সাফাই দিয়েছেন। তাঁর মতে অনলাইন ক্লাসের স্টাডি মেটেরিয়াল দেওয়া হচ্ছিল সেই কারণ স্কুল খুলতে হয়েছে।
আরও পড়ুন- ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি রাজ্যে
বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক সাধারণ- বিবেক কুমারকে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জানান যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা মুখ্য চিকিৎসক আধিকারিক রমেশ কিস্কু সাফ জানিয়েছেন, স্কুল খোলার কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি বা শিক্ষা দপ্তরের কোনও নির্দেশও তাঁদের কাছে আসেনি। তিনি আরও জানান, করোনার তৃতীয় ঢেউ-এর প্রকোপ কতটা হবে এবং কোন বয়সের মানুষ বেশি করে আক্রান্ত হবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে কোভিডের মধ্যে এভাবে স্কুল খোলা ঠিক হয়নি বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
দেখুন ভিডিও- পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি যেন শাপে বর, চাহিদা বাড়ছে সাইকেলের
অভিযাত্রী স্কুল বালুরঘাট শহরের এক্কেবারে প্রাণকেন্দ্রে। পাশেই বালুরঘাট কলেজ এবং ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। এমন এক স্থানে যেখানে লকডাউনের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে ভিড় বাড়ে সেখানে স্কুল খুলে শিশুদের বসিয়ে ক্লাস করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গিয়েছে ২টি ক্লাস খুলে পঠন-পাঠন চলছিল। কবে থেকে এভাবে গোপনে স্কুল খুলে ক্লাস চলছিল তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কর্তৃপক্ষ।