স্বাধীনতার ৭৫তম পূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে বিজেপির বিরাট পদযাত্রার আয়োজন। জাতীয় পতাকা তুলে নেতৃত্ব দিলেন দিলীপ ঘোষ। প্রভাতফেরি শেষে রাজ্যের শাসকদলকে কার্যত তুলোধোনা করলেন দিলীপ।
স্বাধীনতার ৭৫তম পূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে বিরাট পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করলেন মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সোমবার মেদিনীপুর শহরে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে প্রথমে পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। তারপর পদযাত্রা জেলা পার্টি অফিস থেকে বের হয়ে মেদিনীপুর শহরের রিং রোড পরিক্রমা করে শহরের কালেক্টরেট মোড়ে এসে শেষ হয়। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিশ্র সহ অন্যান্য নেতৃত্ব ও কর্মীবৃন্দ।
প্রভাতফেরি শেষে রাজ্যের শাসকদলকে কার্যত তুলোধোনা করলেন দিলীপ ঘোষ। সাংবাদিকদের কাছে তাঁর আক্ষেপ, “বাড়িতে বাড়িতে সবাই ঝাণ্ডা লাগাচ্ছেন, আমাদের বিরোধী দলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরাও আহ্বান জানিয়েছেন। ওড়িশাতে নবীনবাবু ৪৫ লক্ষ জাতীয় পতাকা কিনে সাধারণ মানুষকে বিলি করেছেন, যাতে তাঁরা বাড়িতে টাঙাতে পারেন। কেজরিওয়াল পর্যন্ত আহ্বান করেছেন। কিন্তু, পশ্চিমবাংলা দেখলাম, এটা বোধহয় স্বাধীন হয়নি এখনও, এখনও বাংলাদেশের সঙ্গেই আছে। তাই এখানে, না তো বাড়ি বাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলেছেন তৃণমূলের নেতারা, না অমৃত মহোৎসবে তিরঙ্গা যাত্রা করেছেন, না তাঁদের কোনও উচ্ছ্বাস আছে। আমি জানি না, তাঁদের হয়তো ‘ভিক্ষা চাই না, কুকুর সামলা’ অবস্থা হয়ে গেছে। তাঁরা এখন ঘর সামলাতে, পার্টি ও নেতা সামলাতে ব্যস্ত। কে স্বাধীনতা দিবস পালন করবে?”
দেশে গদিতে পরিবারতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের পরাধীনতার এ এক বড় কারণ। তৎকালীন দেশের নেতা, ব্যবসায়িরা অনেকে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন। কলকাতার বহু বড় বড় লোকেরাও ইংরেজদের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন। তাই দুর্নীতি এবং পরিবারবাদ, এই দুটোই আমাদের পরাধীনতার কারণ। এটা বন্ধ না করা গেলে দেশ আবার পরাধীন হবে। আজ সাধারণ সমাজ থেকে উঠে আসা মানুষজন, সমাজের পিছিয়ে থাকা নেতারাই দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ ভারতে প্রথমবার দেখলাম যে, দেশের ৩ জন প্রধান, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী, ৩ জনেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। এবার সত্যি সত্যি স্বাধীন ভারতে স্বাধীনতা উদযাপন হল। একে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, ভারতের সম্পূর্ণ বিকাশ যদি সম্ভব করতে হয়, তাহলে পরিবারবাদ এবং দুর্নীতিকে দূরে রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অমৃতকালে পঞ্চ সংকল্প অর্থাৎ ২৫ বছরে ৫ সংকল্পের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ বলেন, “ এতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশ এগোচ্ছিল সামনে কোনও লক্ষ্য না নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী সমাজ, দেশ, রাষ্ট্রের সামনে লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন। এই ৫টা লক্ষ্যকে পূর্ণ করার জন্য সমাজ ও দেশ লড়াই করবে এবং চারিদিক দিয়ে বিকশিত হয়ে দুনিয়ায় বিশ্বগুরু হবে। এটা আমাদের বিশ্বাস এবং দেশ এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি, তথা পিংলার বিধায়ক তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজিত মাইতির মধ্য রাতে ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে ইডি সিবিআই দ্বারা রাজ্যে গণতন্ত্র খর্ব হওয়ার মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ বলেন, “আমরা জানি মধ্যরাতে পাকিস্তান পতাকা তোলে। কালকে মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন যে ১৪ তারিখ পতাকা তুলুন। আমি জানি না কার স্বাধীনতা দিবস পালন হচ্ছে, পাকিস্তানের, না ভারতের! অজিত মাইতির মতো লোকেরা দেশের নেতা হলে দেশ পরাধীন হতে দেরি হবে না। যারা বাংলাকে ভারত থেকে আলাদা মনে করে, তাদের কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করা যায় না।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে বিরোধী দলনেতাদের ‘তুই’ সম্বোধন করা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে মমতা ব্যানার্জি কতটা হতাশ, কতটা ভীত। এতদিন অনেক ধমক চমক দিতেন, এখন উনি জিজ্ঞেস করছেন ‘আমি যদি অ্যারেস্ট হই, আপনারা রাস্তায় নামবেন কিনা’। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে কার অ্যারেস্ট হওয়ার সম্ভাবনা। উনি একবার আগে বলেছিলেন, ‘কুণাল চোর, পার্থ চোর, মদন চোর, মুকুল চোর’ এবং সবক’টাই অ্যারেস্ট হয়েছিল, এবার উনি প্রথমবার নিজের নামটা বলেছেন। আমার মনে হয় সে সম্ভাবনা আছে। তাই অনেকে বলছেন, ইডি মানে, এবার দিদি। দিদির দিকেই হাত যাচ্ছে, সেটা উনি বুঝতে পেরেছেন এবং তাতে গত দু’তিনদিন তাঁর যুবক বন্ধুদের নামতে বলেছিলেন, কেউ রাস্তায় নামেনি। কেউ আর চোরেদের সঙ্গে থাকতে রাজি নয়।”
আরও পড়ুন-
'কেন্দ্র থেকে যা টাকা এসেছে সব নেতাদের বাড়ি চলে গিয়েছে, আর কে টাকা দেবে?' মন্তব্য দিলীপ ঘোষের
“সবে তো মাত্র ২টো উইকেট পড়েছে”, রাজ্যে ফিরেই শাসকদলের দিকে উপহাসের তীর দিলীপের
দিলীপ ঘোষের সম্পত্তি কত? বিজেপি নেতার জন্মদিনে জেনে নিন তাঁর অর্থের পরিমাণ