নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকায়। কাজও জুটে হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের জেরে সব কিছু উলটপালট হয়ে গেল! দশ মাস বিদেশে কাটিয়ে এখন রাস্তায় ধারে বসে সবজি বিক্রি করছেন পাঁশকুড়ার যুবক।
আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে বন্ধ চায়ের দোকান, উপার্জন হারিয়ে অবসাদে আত্মঘাতী যুবক
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বাহারপোতা গ্রামে থাকেন কার্তিক মাইতি। তাঁর বাবা পেশায় দিনমজুর। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে পড়াশোনা করা বিলাসিতারই নামান্তর। তবুও হাল ছাড়েননি কার্তিক। হোটেল ম্যানেজমেন্টের কোর্স শেষ করে পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকায়। শুধু তাই নয়, বিদেশযাত্রার জন্য চড়া সুদে টাকা ধার করতেও পিছুপা হননি তিনি। স্বপ্ন ছিল, বিদেশে গিয়ে রোজগার করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন, পরিবারের লোকেদের মুখে হাসি ফোটাবেন। মার্কিন মুলুকে একটি জাহাজ সংস্থায় রাঁধুনির চাকরিও পেয়ে যান কার্তিক।
দশ মাস বিদেশে চাকরি করার পর ছুটিতে বাড়ি ফেরেন কর্তিক। ততদিনে অনেকটা টাকাও জমিয়ে ফেলেছিলেন। সঞ্চয় এতটাই ছিল, ঋণ শোধ করার পর পরিবারের লোকের হাতেও টাকা তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তারপর কোথায় থেকে কী যে হয়ে গেল! করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক গ্রাস করল গোটা পৃথিবীকে। দেশজুড়ে জারি হয়ে গেল লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেল সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান। কার্তিক যে দেশে চাকরি করতেন, সেই আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন বহু মানুষ। বিদেশ যাত্রা এখন বিঁশ বাও জলে। দেশে থেকেও যে হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় কাজ করবেন, সেই উপায়ও নেই।
আরও পড়ুন: 'বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুক সরকার', মুম্বই থেকে কাতর আর্জি বাংলার পড়ুয়াদের
আরও পড়ুন: লকডাউনে বদলেছে পেশা, আদালতের মুহুরি বনে গিয়েছেন মাস্ক বিক্রেতা
এদিকে লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন দিনমজুর বাবা। আর্থিক সংকট চলছিল পরিবারে। চুরি, ডাকাতি তো আর করতে পারবেন না! সংসারের হাল ধরতে নিরুপায় হয়ে সবজি বিক্রিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কার্তিক। রোজ গ্রামের রাস্তার পাশে সবজি নিয়ে বসেন তিনি। সামান্য় যা রোজগার হয়, তাই দিয়ে কোনওমতে দিন কাটে।