সাধারণ জ্বরের রোগীকে এইচআইভি পজেটিভ রিপোর্ট ধরাল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ
সাধারণ জ্বরের (Fever) রোগীকে এইচআইভি পজেটিভ (HIV Positive) রিপোর্ট ধরাল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ (Nursing Home)। এক দিন ধরে নার্সিংহোমে ভর্তি নিয়ে চলল ভুল চিকিৎসা(False Report)। মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক। আদালতের এমন রায়ে খুশি পুরাতন মালদার নারায়ণপুরের ঝাঁজরা গ্রামের বাসিন্দা নার্সিংহোমের অভিযোগকারী মহিলা।
মালদহ শহরের মকদমপুর এলাকায় একটি নার্সিংহোমে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন পুরাতন মালদহের বাসিন্দা ওই মহিলা।নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর ভর্তি নিয়ে নেয়। তারপর সেখানে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা করান চিকিৎসকেরা। ভর্তির একদিন পর নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরা জানান তার এইচআইভি পজিটিভ। সেখানকার চিকিৎসকেরা কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন। দ্রুত মালদহ থেকে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে রেফার করা হয় ওই মহিলাকে। সেখানে চিকিৎসার প্রথমে পুনরায় এইচআইভি টেস্ট করানো চিকিৎসকেরা। সেখানে নেগেটিভ রিপোর্ট আছে।
তবে মালদহের নার্সিংহোমে এইচআইভি পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। কলকাতার নার্সিং হোমে বেশ কিছুদিন ধরে চলে চিকিৎসা। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি না হলে পরিবারের লোকেরা ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। প্রায় এক বছর ধরে চিকিৎসা চলার পর কিছুটা সুস্থ হন মহিলা। বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন মহিলা। তবে নার্সিংহোমে ভুল রিপোর্ট তৈরি করার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মামলা করেন ওই মহিলা। তিন বছর ধরে মামলার শুনানি চলার পর গত ২৩শে নভেম্বর মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জরিমানা করে ওই নার্সিংহোম ও এক চিকিৎসকের।
মহিলার আইনজীবী জয় নারায়ন চৌধুরী বলেন, মালদহের একটি নার্সিংহোম মহিলার ভুল প্যাথলজি রিপোর্ট দেয়। এটি এক ধরনের চিকিৎসার গাফিলতি। তারই ভিত্তিতে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের জরিমানা করেছে আদালত।
মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে মহিলা ২০১৮ সালের ১২ই নভেম্বর নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলার বয়ানে জানা যায় ওই নার্সিংহোম মহিলার ভুল চিকিৎসা করেছিল ২০১৭ সালের ২৬শে নভেম্বর। চিকিৎসার জেরে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন মহিলা। পরিবারের লোকেরা তার চিকিৎসা করান।
কিছুটা সুস্থ হতেই মহিলা মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন। করণা পরিস্থিতিতে মাঝে সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তারই জেরে শুনানি পেছনে থাকে। মালদহ জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে একাধিক সাক্ষী-প্রমাণ ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে নার্সিংহোম ও এক চিকিৎসকের জরিমানা করে।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে ভুল রিপোর্ট তৈরীর জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ওই মহিলাকে দুলক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। এছাড়াও রিপোর্টে যে চিকিৎসকের স্বাক্ষর রয়েছে, তার বিরুদ্ধে ভুল রিপোর্ট তৈরির অভিযোগে আদালত ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে।
এছাড়াও চিকিৎসার পর মহিলা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের ৫০ হাজার টাকা করে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। এতদিন ধরে কোর্টে মামলা চলায় তার খরচের জন্য আরো ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সমস্ত টাকা পাবেন ওই মহিলা। ৪৫ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা শোধ না করলে শতকরা ৫ টাকা করে সুদ বাড়বে বলে রায় দিয়েছে আদালত।
মালদহ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রেজিস্টার ইনচার্জ মামুন রশিদ বলেন মালদহ শহরে একটি নার্সিংহোমে বিরুদ্ধে মামলা হয় রোগীর ভুল রিপোর্ট তৈরীর জন্য। নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের জরিমানা হয়েছে। সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখেই এ রায় দিয়েছে আদালত।