অক্সিজেনের সমস্যায় ডিমপোনা উৎপাদনের আতুরঘর সংকটে। একদিকে মানুষের ফুসফুসকে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ । তখন তা থেকে বাঁচাতে অন্যতম মূলধন এই মুহূর্তে অক্সিজেন। যা পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশ তথা রাজ্য কারও কাছেই নেই। যে শ্বাসবায়ু ছাড়া মানুষ বাঁচে না, এদিকে সেইই অক্সিজেনই মাছের ডিমপোনা উৎপাদনে অপরিহার্য। তাই স্বাভাবিকভাবেই অক্সিজেনের আকালে ডিমপোনা উৎপাদনের আতুরঘর এই মুহূর্তে সংকটে।
আরও পড়ুন, ফরেন্সিকের শীতলকুচি সফর, একইদিনেই মুখ্যসচিবকে তলব রাজ্যপালের, কড়া প্রতিক্রিয়ায় কুণাল
ডিম-পোনা উৎপাদনকারী থেকে মাছচাষীরা আশঙ্কা , আগামী দিনে বড় মাছের আকাল পড়বে রাজ্য সহ সারা ভারতেরই মাছের বাজারে। অক্সিজেনের চূড়ান্ত সমস্যায় ডিম-পোনা উৎপাদনের আতুরঘর। তাই বর্তমানে রাজ্যের সর্ব বৃহৎ মাছের ডিম পোনা উৎপাদনের কেন্দ্রটিও এখন চরম সংকটে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতের মাছের ডিমপোনার যোগান দেয় বাঁকুড়ার রামসাগর। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর আচ যেভাবে গ্রাস করেছে এই উৎপাদনে তাতে আগামী দিনে কঠিন পরিস্থতির আশংখা করছেন ব্যবসায়ীরা। অক্সিজেনের অভাবে মাছের ডিমপোনা পরিবহন ব্যাপক ভাবে সমস্যায় ফেলেছে এখানকার চাষীদের। এরফলে আগামীদিনে সারা রাজ্য এবং দেশজুড়ে বড় মাছের আকাল পড়ার আশঙ্কা করছেন ডিমপোনা উৎপাদকারীরা। মাছে ভাতে বাঙালী এই প্রাবাদেও এবার বড় সড় থাবা বসিয়েছে করোনা। আগামীদিনে বড় মাছের আকাল দেখা দিলে মাছে ভাতে নয় শুধু ভাতে ভাতে থাকতে হবে মাছ প্রিয় বাঙালীকে।
আরও পড়ুন, শীতলকুচিকাণ্ডে CID রিপোর্টে বাড়ল রহস্য, সোমবার ঘটনাস্থলে যাচ্ছে ব্যালেন্সিক টিম
গতবছর লক ডাউন পরিস্থিতিতে একেবারেই মুখ ধুবেড়ে পড়েছিল মাছের ডিমপোনা উৎপাদন। চলতি বছরে উৎপাদন ব্যাহত না হলেও চরম সমস্যা গ্রাস করেছে অক্সিজেন। করোনা আবহে অক্সিজেনের আকাল ডিমপোনা পরিবহন একেবারেই লাটে উঠেছে বলছেন উতপাদনকারীরা। এককথায় অক্সিজেনের অভাবে চরম সংকটে ডিমপোনা উৎপাদনের আতুরঘর। সারা ভারতবর্ষের মধ্যে ৭০ শতাংশ ডিম পোনা উৎপাদন হয় বাঁকুড়ার রামসাগরে। বাঁকুড়া রামসাগর এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এক হাজারের বেশি হ্যাচারি। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিবছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় রুই কাতলা মৃগেল চারা পোনা সহ নানান মিষ্টি জলের মাছের ডিম পোনা উৎপাদন ও বিক্রি করার প্রক্রিয়া। প্রতিবছর আগস্ট মাস পর্যন্ত চলে মাছের ডিম পোনা উৎপাদনের কাজ। এই রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও পাড়ি দেয় এখানকার মাছের ডিম পোনা। রামসাগর তৈরি ডিম পোনা এই রাজ্য ও সারা ভারতবর্ষ এর বিভিন্ন মাছ উৎপাদনকারী চাষী ও ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যায়। ডিম পোনা উৎপাদনকারী ব্যবসাদারদের জানাচ্ছেন এই রাজ্য ছাড়াও সারাদেশে সড়কপথে রেলপথে এমনকি আকাশপথে এখানকার উৎপাদিত ডিম পোনা পাড়ি দেয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে।
পলিথিনের মধ্যে জল ও অক্সিজেন এবং মাছের ডিমপোনা ভরে এখানকার ডিমপোনা পাড়ি দেয় বিভিন্ন প্রান্তে। পরিবহণের সময় প্যাকেটবন্দী ডিমপোনাকে বাঁচিয়ে রাখতে অক্সিজেন ভরে দেওয়া হয়। এইজন্য ডিমপোনা পরিবহণের জন্য অক্সিজেন গ্যাসের প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রামসাগর ডিমপোনা উৎপাদনকারী ও রামসাগর ডিমপোনা ওয়েল ফেয়ার সমিতি সুত্রে জানা গেছে, রামসাগর এলাকায় ডিমপোনা পরিবহনের জন্য প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ সিলিন্ডার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে অক্সিজেনের আকাল পড়ায় অক্সিজেন সিলিণ্ডারের সেই যোগান নেই। হাতেগোনা সিলিন্ডার মিলছে অত্যধিক দাম দিয়ে। তাই ডিমের উৎপাদন হলেও অক্সিজেনের অভাবে ডিমপোনা পরিবহন একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। অনেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডার না পাওয়ার কারনে ডিম পোনা উতপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। গতবছর করোনা পরিস্থতিতে লকডাইনের জেরে ব্যাপক ভাবে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এখানকার মাছের ডিম উৎপাদনকারী এবং এর সাথে যুক্ত মানুষজন। গতবারের চোট সামলে চলতি বছরে নতুন করে আশার আলো দেখেছিলেন মাছের ডিম উৎপাদনকারীরা। কিন্তু করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের অক্সিজেনের আকাল যেভাবে ছোবল মেরেছে ডিম উতপাদন কেন্দ্রে তাতে চরম ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা। অক্সিজেনের অভাবে মাছের ডিমপোনা পরিবহন প্রায় মুখ ধুবড়ে পড়েছে। এরফলে আগামীদিনে এই রাজ্য ও ভিন রাজ্য তথা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে বড় মাছের সংকট দেখা দেবে বলছেন ডিম পোনা ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন, কলকাতায় কোভিডে সংক্রমণ নামল ৮০০ এর নীচে, বাড়ল সুস্থতার হার, দেখুন ছবি
করোনা আবহে অক্সিজেনের আকাল পড়বে কোপ পড়বে তাদের মাছের ডিম উৎপাদন কেন্দ্রে এমন আশংখার কথা জানানো হয়েছিল জেলা ও রাজ্য মৎস্য দফতরকে রামসাগর ডিমপোনা ওয়েল ফেয়ার সমিতির তরফে। চিঠি দিয়ে আধিকারিকদের অক্সিজেন সমস্যার কথা জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই মুহুর্তে মরসুমের ডিমপোনার ভরা বাজারে অক্সিজেনের অভাবে ব্যবসায় যে চোট খাচ্ছেন উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা তা সম্পুর্ন মৎস্য দপ্তরের উদাসীনতার কারণেই এমনি অভিযোগ ডিম পোনা ওয়েল ফেয়ার সমিতির। বার বার ধরে জানানো হলেও অক্সিজেন এর সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেনি জেলা ও রাজ্য মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকরা এমন অভিযোগ রামসাগর ডিম পোনা ওয়েল ফেয়ার সমিতির সম্পাদক সজল নন্দীর। মাছের ডিমপোনা অক্সজেন সাপোর্ট দিয়ে প্যাকেট বন্দী হয়ে পাড়ি দেয় এই রাজ্য ও সারা ভারতবর্ষের মাছ উৎপাদনকারীদের চাষীদের কাছে। এই ডিমপোনা থেকেই এই রাজ্য ও ভিনরাজ্যে তৈরি হয় বিভিন্ন মিষ্টি জলের বড় বড় মাছ। তারপরেই সেগুলি বাজারে ক্রেতাদের হাত ধরে বাড়ি বাড়ি পৌছে যায়৷ কিন্তু বর্তমানে ডিমপোনা পরিবহনে অক্সিজেনের আকাল ভাবিয়ে তুলেছে ডিমপোনা ব্যবসায়ী ও মাছ উৎপাদনকারী চাষীদের। তাই আগামী দিনে বাজারে বড় মাছের দেখা মিলবে কিনা ,বলবে সময়।