বিরানব্বই বছরের বৃদ্ধাকে মুখে পলিথন গুঁজে খুন ও ডাকাতি, ১২ বছর পর ৫ দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা

বাড়িতে থাকা বৃদ্ধাদের নিরাপত্তা যে সারাক্ষণই কোনওভাবে সুতোর উপরে ঝুলছে তার বড় প্রমাণ ২০১১ সালে কলকাতা শহরের বুকে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড। স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তা এই ঘটনায় এক গভীর উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। 

 

Web Desk - ANB | Published : Mar 16, 2023 6:11 AM IST / Updated: Mar 16 2023, 11:47 AM IST

জুলাই ২৭। সালটা ২০১১। উল্টোডাঙার বিধান নিবাসে বাড়িতে ছিলেন বিরানব্বই বছর বয়সের শান্তা ভট্টাচার্য। বয়সের ভারে ঠিক করে হাঁটা-চলাও করতে পারেন না। দৈবাৎক্রমে সেদিন বাড়িতে ছিলেন পুত্রবধূ শুভালক্ষী ভট্টাচার্য এবং তাদের বাড়ির সর্বক্ষণের কাজের লোক বিনা গঙ্গোপাধ্যায়। বিকেল নাগাদ আচমকাই ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল ৪ জন। মুখে কাপড় বাঁধা ছিল প্রত্যেকের। বিরানব্বই বছরের শান্তা ভট্টাচার্যের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছিল ডাকাতদের একজন। বৃদ্ধা যাতে চিৎকার করতে না পারে তারজন্য মুখে গুঁজে দেওয়া হয়েছিল প্লাস্টিক। এছাড়াও শান্তার পুত্রবধূ ও কাজের মেয়েকে চেয়ারের সঙ্গে জোর কষা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, ডাকাত দলের ডাকাতি শেষ হওয়ার আগেই জ্ঞান হারান শান্তা। এরমধ্যে শান্তার পুত্রবধূ ও কাজের মেয়ে তাদের বাঁধন নিজে থেকে খুলে ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চম্পট দিয়েছিল ডাকাত দল। শান্তাদেবীকে পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।

১২ বছর পর এই ডাকাতির ঘটনায় ধৃতদের সাজা ঘোষণা করল আদালত। মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৪ মার্চ, ২০২৩-এ এই মামলায় ধৃত ৫ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন শিয়ালদহ আদালতের ফার্স্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জাজ অনির্বাণ দাস। ১৫ মার্চ ছিল সাজা ঘোষণা। বিচারক অনির্বাণ দাস দোষীদের সকলকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। যদিও, দোষীদের সকলেই উচ্চ আদালতে গিয়ে সাজা কমানোর আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।

এই ডাকাতির ঘটনায় প্রাণ হারানো শান্তা ভট্টাচার্যের ছেলে সূর্যনারায়ণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ১২ টা বছর যেন এক অসহনীয় মুহূর্ত। কিন্তু কখনই আমরা লড়াই থেকে পিছু হঠিনি। পুলিশও নিশ্চিত করেছিল যে এই ঘটনায় ধৃতরা যেন কোনওভাবেই জামিন না পায়। আমার মনে হয় এবার মা-এর আত্মা চিরশান্তি পাবে।

এই ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সূত্র পায় যে আবাসনের এক নিরাপত্তাকর্মী যার নাম স্বদেশ মুখোপাধ্যায়, তিনি এই ঘটনায় যুক্ত। একের পর এক জেরায় স্বদেশ সমানে অসংলগ্ন বয়ান দিতে থাকে। যাতে পুলিশের সন্দেহ আরও বেড়ে গিয়েছিল। জেরায় আস্তে আস্তে ভেঙে পড়েছিল স্বদেশ। মানিকতলা থানার তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার বর্তমানে বেহালা পর্ণশ্রী থানার অতিরিক্ত অফিসার-ইনচার্জ রাজু দাস জানিয়েছেন, স্বদেশ মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র শান্তাদেবীর পরিবারকে নিয়ে তথ্য ডাকাতদের দেয়নি, তাদের জড়ো করে ডাকাতি কীভাবে করতে হবে তার মন্ত্রণাও দিয়েছিল। এমনকী, আবাসনের মেন গেটে যখন তাঁর ডিউটি থাকবে সেই সময় যাতে ডাকাতি হয় সেটাও নিশ্চিত করেছিল স্বদেশ। ডাকাতদলকে সেই বুঝিয়েছিল যে শান্তাদেবীরা খুব বড়লোক এবং ছেলে এয়ার-ইন্ডিয়ায় উচু পোস্টে কাজ করে, তাই এই বাড়িতে ডাকাতি করে অনেক কিছু পাওয়া যাবে।

তদন্তে ধৃতদের মধ্যে ছিল আজিজুল লস্কর। ডাকাতির ঘটনার কিছুদিন আগেই আবাসনে প্রতিটা ফ্ল্যাটে সংস্কারের কাজ হয়। তাতে রাজমিস্ত্রী হিসাবে কাজ করেছিল আজিজুল। শান্তাদেবীর বাড়ির অন্দরমহলের ঠাঁট-বাট তার চোখেও পড়েছিল। স্বদেশ এই আজিজুল-এর সঙ্গে বসেই ডাকাতির ষড়যন্ত্র এঁটেছিল বলে পুলিশি তদন্তেও ধরা পড়ে।

পুলিশি তদন্তে ঘটনার ৪দিনের মাথায় গ্রেফতার হয় স্বদেশ এবং আরও তিন জন। অগাস্ট ১৩, ২০১১ সালে গ্রেফতার করা হয় এই ঘটনায় অংশ নেওয়া আরও এক দুষ্কৃতিকে। সবচেয়ে বড় কথা, ডাকাতির কোনও মাল এবং নগদ সেভাবে বিক্রি বা খরচ করে উঠতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। তার আগেই মানিকতলা থানার পুলিশ ডাকাতি হওয়া সোনার সমস্ত গয়না এবং কয়েক লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ফেলেছিল। কলকাতা শহরের জমজমাট এক লোকালয়ে দিনদুপুরে এই ডাকাতির ঘটনা সকলকেই আতঙ্কে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু, কলকাতা পুলিশ এতটাই দক্ষতার সঙ্গে এই ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করেছিল যে দুষ্কৃতীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধরা পড়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন- 
রাজনৈতিকভাবে চেনেন তাপস-কুন্তলকে, নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়েই মুখে কুলুপ সুজাত ভদ্রের 
প্রাইমারি স্কুলে এবার থেকে শিক্ষকরা নন, পড়াবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা? প্রশাসনের সিদ্ধান্ত চরমে বিতর্ক  
'ওই সব টাকা আমার, আর কারও নয়', ইডির দফতর থেকে বেরিয়ে সাফ জানালেন বনি 

 

Share this article
click me!