আজ মেডিক্যাল কলেজেও মৃত্যু হয়েছে একটি সাড়ে আট মাসের শিশুর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর শিশুটির বাড়ি হরিপালে।
আজ ফের রাজ্যে মৃত্যু তিন শিশুর। সোমবার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দু'জন শিশুর। এরা দু'জনেই জ্বর-সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। অন্যদিকে আজ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। এদের প্রত্যেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এরা প্রত্যেকেই অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্ত কি না সেবিষয় এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। উল্লেখ্য যে সমস্ত শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাস জনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় মারা গিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অ্যাডিণ ভাইরাল নিউমোনিয়া লিখছেন। এখন দেখার যে এই শিশুরা আদৌ অ্যাডিনো ভাইরাস জনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নাকি অন্য কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জায়?
আজ মেডিক্যাল কলেজেও মৃত্যু হয়েছে একটি সাড়ে আট মাসের শিশুর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর শিশুটির বাড়ি হরিপালে। গত ২৫ তারিখ চুচুড়া ইমামবারা হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়েছিল। গতকাল রাত দেড়টা নাগাদ মৃত্যু হয় শিশুটির। হাসপাতাল সূত্রে খবর শিশুটির জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকলেও তার অ্যাডিনোভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে। ফলত ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে রেসপিরেটরি ইলনেসের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য গত জানুয়ারি মাস থেকে রাজ্যে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৯৮ ছুঁয়েছে। এর মধ্যে সিংভাগই সরকারি হাসপাতালে, বিশেষত বিসি রায় শিশু হাসপাতালে।
প্রসঙ্গত, গতকাল পর্যন্ত ৯ দিনে বিসি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩৮টি শিশুর। গত ৩০ দিনে একাধিক শিশু জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে একাধিক শিশু। রবিবার সকালেই মারা গিয়েছে তিনজন। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বুধবার সকালে বি সি রায় শিশু হাসপাতাল পরিদর্শনে এলেন স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা। এদিন বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেন তাঁরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেয়র কাউন্সিল এবং এখানকার রোগী কল্যাণ সমীতির সদস্য স্বপন সমাদ্দার। বৈঠকের পাশাপাশি এদিন হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। রোগীর পরিজনের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। তবে ডাক্তারদের সম্মন্ধে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ করা হয়নি বলেই জানান তিনি।
এদিন বৈঠকে বেলেঘাটা আইডিতে চাপ কমানোর উপর বিশেষ জোড় দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে অতিরিক্ত শয্যার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি বি সি রায় শিশু হাসপাতাল থেকে যাতে আইডিতে রোগী রেফার করা যায় সেই দিকে নজর রেখে আইডিতেও শিশু রোগীর চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। এদিন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা জানিয়েছেন,'আমাদের উপর চাপ আছে, কিন্তু আমাদের কাছে এই মুহূর্তে বেশ কিছু সংখ্যক বেড আমাদের রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে চাহিদা মেটানো যাবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন,'এখন পর্যন্ত যে সব শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেগুলির বেশিরভাগই কোমরবিডিটিস-এর কেস। কারোর ওজন কম, কোনও বাচ্চার হার্টের অসুখ আছে। তবে আমাদের ডাক্তাররা চিকিৎসা এবং চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সন্তুষ্ট।' এছাড়া চিকিৎসা পরিষেবা প্রসঙ্গে রোগী কল্যান সমিতির সদস্য স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন,'ডাক্তারদের নিয়ে রোগীর পরিজনদের কোনও অভিযোগ নেই। কয়েকজন নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। আমি এবিষয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।' তবে মানুষকে পরিষেবা দিতে আইডি প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন -
ক্রমেই বাড়ছে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ, গত ৯ দিনে কলকাতায় মৃত্যু ৩৮টি শিশুর
শহরে মৃত্যু হল আরও দুই শিশুর, অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ