Panchayat Election 2023: প্রার্থীদের গাড়িতে বসিয়ে পালাচ্ছে পুলিশ, মিডিয়াকে আটকাচ্ছে পুলিশ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধুন্ধুমার

২০১৯-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের বেপরোয়া সন্ত্রাস এখনও ভোলেনি রাজ্যের মানুষ। তারপর অনেক টালবাহানার পর রাজ্যে ফের পঞ্চায়েত নির্বাচন। কিন্তু, এবারও নির্বাচনী সন্ত্রাসে যে ছবি ধরা পড়ছে তাতে আরও বেশি করে আস্থা হারাল পুলিশ প্রশাসন।

 

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে বিরোধী প্রার্থীদের পুলিশি পাহারায় মনোনয়ন পেশের নির্দেশ কার্যকর করে কলকাতা হাইকোর্ট। কারণ, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে চলা সন্ত্রাসে এরা মনোনয়ন পেশ করতে পারছেন না বলেই কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। মূলত ভাঙড় ২ ব্লকে এইসব প্রার্থীর মনোনয়ন পেশ করার কথা ছিল। নিরাপত্তার বিষয়টি শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বসিরহাটের প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশের জন্য নিরাপত্তা দিতে হেয়ার স্ট্রিট থানাকে নির্দেশ দেন। ভাঙড়ের প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ভাঙড় ও কাশীপুরের থানার পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে বলা হয়। বারুইপুরের প্রার্থীদেরকে বারুইপুর এসপি-র অফিসে জড়ো হতে নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্থা এবং সেই সঙ্গে বারুইপুর এসপি-কে নির্দেশ দেন যাতে এদের নিরাপদে মনোনয়ন পেশের স্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামনে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভাঙড়ের আইএসএফ-এর প্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়া আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, তাঁর মক্কেলরা পুলিশি পাহারায় মনোনয়ন জমা করতে যাচ্ছিলেন। আর সই পুলিশের গাড়িতেই নাকি হামলা করেছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের গাড়িতে মোট ৮২ জন বিরোধী প্রার্থী ছিলেন। দুষ্কৃতীদের হামলা দেখে নাকি বিরোধী প্রার্থীদের ঘটনাস্থলে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় পুলিশ। এমন অভিযোগও করেন আইনজীবী শামিম।

Latest Videos

আইএসএফ প্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়া আইনজীবী শামিম জানান, আদালতের রায়ের পর বারুইপুর এসপি অফিসকে জানানো হয়েছিল যে প্রার্থীরা কোথায় জড়ো হবেন। আর সেই খবরই নাকি পুলশ মারফত পৌঁছেছে দুষ্কৃতীদের কাছে, এরপর নাকি হামলা। এমনই অভিযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার লিখিতভাবে এই অভিযোগ আদালতে দায়ের করা হবে বলেও জানান আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙড় ২-এর সন্ত্রাস এবং পাল্টা সন্ত্রাস কতটা ছিল তা টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলোর লাইভ কভারেজের মধ্যে দিয়েই সকলের সামনে এসেছিল। পুলিশি নিস্ক্রিয়তার ছবিটাও তাতে যেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তেমনি সামনে আসে পুলিশের এমন সন্ত্রাস মোকাবিলা করার ক্ষেত্রের ব্যর্থতা। অধিকাংশ পুলিশের হাতে ছিল নামমাত্র লাঠি, কারও হাতে আবার তাও ছিল না, কিছু জনের মাথায় হেলমেট ও হাতে ঢাল থাকলেও, পুলিশ বাহিনীর একটা বড় অংশের কাছেই এসবেরও বালাই ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এমন সন্ত্রাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থেকেও কীভাবে বিনা প্রস্তুতিতেই শুধুমাত্র পোশাক পরে পুলিশ হাঁটা লাগিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, আসলে এসবই পুলিশের নাটক। তারা কোনওভাবেই বিরোধীদের নিরাপত্তা দিতে চায়নি। সেই কারণেই বিনা প্রস্তুতিতে বিপক্ষে দাঁড়ানো সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙড় ২-এর বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা যখন ধুন্ধুমার। চারিদিকে, সমানে বোমা পড়ছে, সেই সঙ্গে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে একের পর এক গাড়ি ও মোটরবাইকে, তখনও যেন ঠুঁঠো জগন্নাথ পুলিশ। পুলিশের সামনে মাথায় হেলমেট এবং বারমুডা প্যান্ট পরে হাতে ধারাল অস্ত্র নিয়ে একজনকে হেঁটে চলে যেতে দেখা যায়, তখনও পুলিশ পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল বলেই অভিযোগ। খালি মাঝে মাঝে কয়েক জন পুলিশ চিৎকার করে বলে চলেছে- এরা সব আইএসএফ-এর লোক। বিরোধীদের প্রশ্ন-- এতক্ষণ যারা সমানে বোমাবাজি চালাল তাঁদের কোনও পুলিশ আইডেন্টিফাই করতে পারল না, অথচ আচমকাই তারা আইএসএফ-এর লোক বলে মিডিয়ার সামনে চিৎকার জুড়ে দিল!

পুলিশের এই ভূমিকাকে চরম নিলজ্জতার সামিল বলেও ব্যাখ্যা করছে বিরোধীরা। তবে ভাঙড় ২-এর স্থানীয় সূত্রে খবর মনোনয়ন পেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ যেভাবে বিরোধীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাতে ক্ষিপ্ত তৃণমূল বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন পেশের শেষের দিন। ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। কিন্তু, সকাল থেকে ভাঙড় ২-এর দখল নিতে থাকে শাসক দলের মদতপুষ্ঠ দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, আরাবুল ইসলাম ও সওকত মোল্লার দুষ্কৃতিবাহিনী এক্ষেত্রে অপারেশনে নেমেছিল। ভাঙড় ২-এর বিডিও অফিস থেকে মারধর করে বিরোধী প্রার্থীদের হটিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ভাঙড় ২-এর ঢোকার চারটি রাস্তাতেই নাকি দখল নিয়ে রেখেছিল তৃণমূল মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা বলেও অভিযোগ।

বেলা ২টোর পর থেকে ভাঙড় ২-এ নাকি পাল্টা জমায়েত শুরু করে আইএসএফ। তাদের লোকজনও সশস্ত্র অবস্থায় পিল পিল করে মাঠের হাঁটা পথ ধরে ভাঙড় ২-এ ঢোকে। শুরু হয়ে যায় পাল্টা প্রতিরোধ। আইএসএফ-এর হাজারে হাজারে সশস্ত্র মানুষকে দেখে নাকি পিছু হঠে শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা। পরে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি সংবাদমাধ্যমকে জানান, তৃণমূলের অত্যাচারে ভাঙড়ের মানুষ অতিষ্ঠ। পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য না পেয়ে তাই এবার নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন এবং আইএসএফ-কে সমর্থন দিচ্ছেন। যদিও, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সওকত মোল্লার অভিযোগ, সিপিএম-এর দুষ্কৃতীরা গিয়েই আইএসএফ-এ-তে ঢুকেছে।

ভাঙড়ের ধুন্ধুমার পরিস্থিতিতে কোনওভাবেই যে পুলিশ তার দায় অস্বীকার করতে পারে না, তাও স্পষ্ট হয়েছে বিভিন্ন ঘটনাক্রমে। বৃহস্পতিবারই ভাঙড় ২-এর বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকায় বোমাবাজি এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের প্রতিনিধিরা বারবার অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ তাঁদের বাধা দিচ্ছে এবং ঘটনাস্থলে ক্যামেরা বন্ধ রাখতে চাপ দিচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা সরাসরি প্রশ্ন করলে পুলিশ নাকি জানায় এখানে তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। বৃহস্পতিবার দিনভর-ই খবর আসছিল যে ভাঙড়ের বিভিন্ন স্থানে শাসক দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কখনও বিডিও অফিসে ঢুকে প্রার্থীদের মনোনয়ন কেড়ে নিয়েছে এরা। আবার কখনও বাস-অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে সমানে তল্লাশি চালিয়েছে এই দুষ্কৃতী দল। কিন্তু এর জন্য কোনও পুলিশি বাধার সামনেই পড়তে হয়নি তাঁদের।

বিজয়গঞ্জ বাজারে সংবাদমাধ্যমকে লক্ষ করে সমানো বোমাবাজি করা হয়। কিন্তু, পুলিশকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা পুলিশের এই নিস্ক্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে, উল্টে তাদের বলা হয় কিছু ঘটেনি এবং কিছুই তারা দেখতে পাচ্ছেন না। সংবাদমাধ্যম মিথ্যে কথা বলছে। পুলিশের অকর্মণ্যতা এখানেই শেষ নয়, সকালে ভাঙড় ২ বিডিও অফিসে সদলবদলে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন আরাবুল ইসলাম। এরপরই বিডিও অফিসের মেন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে তো দেওয়াই হয়নি, যারা ভিতরে ছিল সেই সব সংবাদমাধ্যমের কর্মীকেও বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের তখন দেখাই পাওয়া যায়নি। বাসন্তী হাইওয়েপ নলমুড়ি হাসপাতাল মোড়ে রাস্তায় ব্যারিকেড বসার তৃণমূল কংগ্রেস। সমস্ত বাস থামিয়ে চলতে থাকে বিরোধী প্রার্থীদের খোঁজে তল্লাশি। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের এই গুন্ডাগিরির হাত থকে বিয়ে বাড়ির বাসও রেহাই পায়নি। বলতে মনোনয়ন পেশের শেষদিনে ভাঙড় যেভাবে সন্ত্রাসের শিরোনামে থাকল তা একটা জিনিস প্রমাণ করে দিল, যে বাম জামানায় পুলিশকে দলদাস বলে নিশানা করা হতো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবরতর্নের শাসনেও তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা পুলিশ ও প্রশাসনের হাতে আদৌ আছে কি না, তা এখনও লাখ টাকার প্রশ্ন। 

আরও পড়ুন--   
কথা নয়, শুধু কাজ হবে: পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা রুখতে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য  
২৩ বছর পর দার্জিলিংয়ে আয়োজিত হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোট, ৮টি দল জোট বেঁধেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে  
১৪৪ ধারাকে বুড়ো আঙুল! ক্যানিংয়ে বিজেপির মনোনয়নে বাধা, রণক্ষেত্র ক্যানিং ১ নম্বর ব্লক অফিস

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

টোটোর ভাড়া চাইতেই এইরকম কাণ্ড! দেখলেই আঁতকে উঠবেন, চাঞ্চল্য Malda-এ | Malda News Today
গভীর রাতে ধানক্ষেতে ভয়াবহ দৃশ্য! শিউরে উঠবেন আপনিও, আতঙ্কে গোটা Jaynagar, দেখুন | South 24 Parganas
সীমান্তের নিরাপত্তা হুমকির মুখে! Bangladeshi Infiltration কবে থামবে? | Gede Border | Rohingya
কি বললেন? সুকান্তকে পাল্টা জবাব দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | Sukanta Majumdar | Bangla News
বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এ কী করলো নাবালিকার সঙ্গে! চমকে যাবেন আপনিও, চাঞ্চল্য Nabadwip-এ | Nadia