আড়শা কোটশিলা সহ বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ধার হয় একের পর এক মাও পোস্টার উদ্ধার হয়।এরপরেই পৌরসভা নির্বাচনের আগের দিন ২৬ফেব্রুয়ারি আড়শা থানার মিশিরডি,জীবনডি বেলডি মোড় এলাকায় উদ্ধার হয় একাধিক মাও পোস্টার।
পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল এলাকায় ধারাবাহিকভাবে পড়ছে মাও পোস্টার।পর পর মাও পোস্টার ঘিরে রহস্যের মধ্যেও এলাকায় বাড়ছে আতঙ্ক।আবার কি জঙ্গল মহলে ফিরে আসছে আতঙ্কের সেই দিন?প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায়।এক সপ্তাহের ব্যাবধানে পর পর দুবার মাও পোস্টার উদ্ধার হলেও তদন্ত চলছে বলে দায় সারছে পুলিশ। পোস্টারের লেখার ধরন দেখে মাওবাদী লিঙ্ক থাকতে পারে বলে স্বীকার করলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির।কয়েকমাসে আগে থেকেই পুরুলিযার বরাবাজার ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় প্রথম মাওবাদী পোস্টার উদ্ধার হয়।এর পর থেকে বলরামপুর ঝালদা বাগমুন্ডি আড়শা কোটশিলা সহ বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ধার হয় একের পর এক মাও পোস্টার উদ্ধার হয়।এরপরেই পৌরসভা নির্বাচনের আগের দিন ২৬ফেব্রুয়ারি আড়শা থানার মিশিরডি,জীবনডি বেলডি মোড় এলাকায় উদ্ধার হয় একাধিক মাও পোস্টার।
সাদা কাগজে লাল কালিতে ছাপানো ১১দফা দাবি নিয়ে এই পোস্টারে উল্লেখ ছিল পেট্রোল ডিজেল রান্নার গ্যাসের দাম কমানো।প্রতিটি নাগরিককে ১০০ দিনের বদলে ৩৬৫দিনের কাজের সুযোগ সুবিধা।মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে,রাজ্য সরকারের রাজনীতি করা চলবেনা।এছাড়াও দুয়ারে মদ প্রকল্প বন্ধ করতে হবে।নিচে লেখা ছিল সি পি আই(মাওবাদী)এর পরে আবার বাগমুন্ডি থানা এলাকার অযোধ্যা পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্র বামনিফলস টুরগায় ১লা মার্চ জঙ্গল মহল বনধের ডাক দিয়ে উদ্ধার হয় একাধিক মাওবাদী পোস্টার।পোস্টারে প্রাক্তন মাওবাদী রিমিল ও বিপ্লব ভাই অমর রহে।তাদের মৃত্যুর বদলা চাই।"আমরা আরও জঙ্গল ফিরে যেতে চাই"। পোস্টারের নিচে লেখা ছিল সি পি আই মাওবাদী দলমা বাবা।এই পোস্টারের পর নড়ে চড়ে বসে রেল পুলিশ এবং জি আর পি।১লা মার্চ সকাল থেকে কোটশিলা ঝালদা সহ জঙ্গল মহলের রেল স্টেশন এবং লাইন ধরে চলে তল্লাশি অভিযান।এর তিনদিন পরেই আবার আজ আড়শা থানার জাড়িমোড়, ডুংরিডি,সিঁদুরপুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধার হয় মাওবাদী পোস্টার।
সাদা কাগজে লাল কালিতে ছাপানো বড় হরফে মাওবাদী জিন্দাবাদ লিখে ১৩দফা দাবি জানিয়ে পোস্টার দেওয়া হয়।পোস্টারে ১৩দফা দাবির মধ্যে রয়েছে।অবিলম্বে পেট্রোল ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে হবে।বেকার যুবক যুবতীদের অবিলম্বে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। জঙ্গলে কাঁচা কাট কাটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। ফরেস্ট ল্যান্ড এর আদিবাসীদের ভূমিহীন বসবাসকারীদের অবিলম্বে পাট্টার ব্যবস্থা করতে হবে। মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রাজ্য সরকারের রাজনীতি করা চলবেনা দুয়ারে মদ প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। পোস্টার ঘিরে ছড়ায় চাঞ্চল্য। বিষয়টি নিয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার এস. সেলভা মুরুগান ফোনে জানান, “এসব কিছু নয়। কিছু ছেলে চাকরির জন্য এসব করছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন- রাশিয়ান মহাকাশযান থেকে মুছে গেল আমেরিকা-জাপান-ব্রিটেনের পতাকা, রইল ভারতের তেরঙা পতাকা
এদিকে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে কয়েক দফা দাবি নিয়ে মাওবাদীরা পোস্টার দিচ্ছে বা দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।এটার মধ্যে পুলিশকে তদন্ত করা দেখতে বলা হয়েছে সত্যিকারের মাওবাদী কি না। তবে যেটা আমার ধারণা ।যেভাবে সুন্দর করে লেখে পোস্টার ছড়ানো হচ্ছে তাতে লেখার ধরন দেখে মনে হচ্ছে মাওবাদীদের সাথে লিঙ্ক থাকতেও বলে আমার মনে হচ্ছে।মাওবাদীদের এই পোস্টারে সাধারন মানুষের দাবি নিয়ে কিছু ন্যায্য দাবিও রয়েছে। আবার অমূলক দাবিও রয়েছে। যেমন দুয়ারে মদ প্রকল্প কোথায় চলছে আমার জানা নেই।”
২০১১সালে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস।তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর ২০১১সালে বলরামপুর থানার অযোধ্যা পাহাড় কোলের খুনটাড়ে দুই তৃণমূল কর্মীকে খুন করে মাওবাদীরা।এটিই ছিল পুরুলিয়া জেলায় শেষ মাওবাদী হামলার ঘটনা।তার পর থেকে শান্ত হতে শুরু করে পুরুলিয়া জঙ্গলমহলের বান্দোয়ান বরাবাজার বলরামপুর আড়শা ঝালদা সহ আটটি মাওবাদী অধ্যুষিত ব্লক। দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর আবারও মাও পোস্টার দেওয়া শুরু হওয়ায় আতঙ্ক শুরু হয়েছে জঙ্গলমহলের আনাচে-কানাচে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন আবারও কি পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল অশান্ত হয়ে উঠবে। এদিকে ২০২৩ সালে রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে একের পর এক মাও পোস্টারে নতুন করে মাওবাদী আতঙ্ক দানা বাঁধছে রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায়। উদ্বেদ বাড়ছে আম-আদমির মধ্যেও।