প্রায় দু’মাস আগে পুকুরের মাটি কাটা হয়। তিন সপ্তাহ আগে কাজ মোটামুটি শেষও হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি শুকনো পুকুরই হয়ে গিয়েছে জলে টইটুম্বুর।
সকাল থেকে রোদের তেজে ওষ্ঠাগত প্রাণ। সামান্য বৃষ্টি হলেও তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। গরম একইরকম রয়ে গিয়েছে। ফুটিফাটা মাটি। কোথাও জলের চিহ্ন নেই। আর, এই পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে বৃষ্টির নাম মাত্র নেই সেখানেই রাতারাতি নাকি ভরে গেল পুকুর। সেখানে জলের পরিমাণও বেশ ভালো। একেবারে বুক সমান জলেই ভরে যায় পুকুর। যা দেখে রীতিমতো অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের ভূমশোর ও বামশোর গ্রামে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা প্রথমে ভেবেই পাচ্ছিলেন না স্থানীয়রা।
ভাতারের ভূমশোর ও বামশোর গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত ঝিংকে পুকুর। উষা মৌজায় এক বিঘা আয়তনের পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। বেশ কয়েকজন শরিকও রয়েছেন। শরিক পরিবারগুলি নিজেরাই খরচ করে কয়েকদিন আগেই এই পুকুর সংস্কারের কাজ করেছেন। প্রায় দু’মাস আগে পুকুরের মাটি কাটা হয়। তিন সপ্তাহ আগে কাজ মোটামুটি শেষও হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি শুকনো পুকুরই হয়ে গিয়েছে জলে টইটুম্বুর। এদিকে আশপাশে কোথাও বিন্দু মাত্র জল নেই। এমনকী, বৃষ্টিও হয়নি। তাহলে হঠাৎ করে এভাবে পুকুর কেন করে ভরল? তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকে একে ভূতুড়ে কাণ্ড বলেছেন।
আসলে, গ্রামের সাধারণ মানুষের ধারণা যে দৈবিক কারণ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আর তার জেরে পুকুরের আশপাশে গ্রামের মানুষের ভিড় জমে গিয়েছে। জল নিতে ভিড় করেছেন অনেকেই। ওই জল অত্যন্ত পবিত্র ভেবে তা বাড়ি নিয়ে যান অনেকেই। আর সেই জল নিতে রীতিমতো তাড়াহুড়ো পড়ে গিয়েছে সাধারণের মধ্যে। স্থানীয়দের দাবি, ভগবানের আশীর্বাদেই এই শুকনো পুকুরে জল ভর্তি হয়ে গিয়েছে। আর এলাকার অন্য পুকুরের থেকে ওই পুকুরের অনেক বেশি পরিষ্কার। তাই এই পুকুরে জল পান করলে সব রকম রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
যদিও গ্রামবাসীদের এই দাবি মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্যরা। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের ভাতার ব্লক কমিটির সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, "ওই ঘটনার মধ্যে অলৌকিক কিছু নেই। আগে ওই পুকুরের ভূমির অবস্থান দেখতে হবে। যদিও আশপাশে এক দেড়শো মিটারের মধ্যে জলের কোনও উৎস থাকে তাহলে সেই জল চুঁইয়ে আসতে পারে। অথবা জলস্তর যদি খুব কাছাকাছি হয় তাহলে আর্টেজিও কূপের তত্ত্ব অনুযায়ী বিষয়টি ঘটতে পারে। গোটা বিষয়টি দেখার পর বোঝা যাবে।" তবে বিজ্ঞানমঞ্চ যাই বলুক না কেন সেদিকে কান দিচ্ছেন না স্থানীয়রা। বরং সেই পুকুরের জল কীভাবে তাঁরা বাড়িতে নিয়ে যাবেন এখন চিন্তায় মগ্ন রয়েছেন।
আরও পড়ুন- বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে বিজেপিতে গণইস্তফা, তথাগত-অনুপমের কথাই কি সত্যি হল এবার