নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপি-র অভিনন্দন যাত্রা ঘিরে কয়েকদিন আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। গত প্রায় এক দশক ধরে এ রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা এবং হানাহানির সঙ্গে যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে এই এলাকা। আগামী কয়েক মাসে নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক উত্তেজনা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে সরস্বতী পুজোয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা দিল নন্দীগ্রামের একটি ক্লাব। মা সরস্বতীর পায়ে ফুল দিয়ে পুজোর সূচনা করলেন এলাকারই বাসিন্দা শেখ বাহারুদ্দিন।
নন্দীগ্রামের কুলবাড়ির মুরাদপুরে নবোদয় সংঘের পুজো এবার কুড়িতম বর্ষে পদার্পণ করল। মঙ্গলবার স্থানীয় বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেবী প্রতিমার পায়ে ফুল দিয়ে এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজোর সূচনা করলেন এলাকার বাসিন্দা শেখ বাহারুদ্দিন।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নন্দীগ্রাম জুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুতেই কমেনি। নন্দীগ্রাম আন্দোলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং হিংসা অব্যাহতই থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে একটু অন্য রকম বার্তা দিতে চেয়েছিল নন্দীগ্রামের এই ক্লাব সংগঠন। এবার তাদের পুজোর থিম বিশ্বশান্তি।
পুজোর এক উদ্যোক্তা বলেন, 'সমস্ত ধর্মই যে এক, আমরা সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি। বর্তমান সময়ে এই বার্তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে আমাদের মনে হয়েছে। একজন মানুষের মধ্যেও এই বিশ্বাস যদি আমরা আনতে পারি, তাহলেই আমাদের উদ্যোগ স্বার্থক হবে।' উদ্যোক্তাদের অবশ্য দাবি শেখ বাহরুদ্দিন ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন শিখ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।'
আর পুজোর উদ্বোধন করে শেখ বাহরুদ্দিন নামে ওই বৃদ্ধ বলছেন, 'ধর্ম আলাদা হলেও আমরা তো একসঙ্গে ভারতবর্ষে বসবাস করি। সবাইকে ভালবাসতে হবে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। কে দেবীকে ভালবাসবে, আর কে আল্লাহকে, সেটা তো যাঁর যাঁর নিজস্ব বিষয়। কোরানেই বলেছে যে কোনও ধর্মকেই কেউ ছোট করতে পারে না। ভারতবর্ষ ছাড়া অন্য কোনও দেশে এমন ছবি দেখা যেত না। আজকে ধর্ম নিয়ে যা হচ্ছে, তা নিতান্তই রাজনীতির বিষয়। এই ভেদাভেদ থাকলে তো আমাদের দেশটাই কোনওদিন স্বাধীনতা পেত না।'