২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৯টি আসনের মধ্যে ৪টি পায় তৃণমূল, ৩টি কংগ্রেস এবং ২টি সিপিআইএম। কংগ্রেস এবং সিপিআইএম যৌথভাবে বোর্ড গঠন করে।
মালদহ জেলার (Maldaha District) হরিশচন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের (Harischandrapur Block) অন্তর্গত মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে পুনরায় অনাস্থা প্রস্তাব (No-confidence motion) আনা হল। শাসকদল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন শাসকদলেরই সদস্যরা। আর যার ফলে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৯টি আসনের মধ্যে ৪টি পায় তৃণমূল, ৩টি কংগ্রেস এবং ২টি সিপিআইএম। কংগ্রেস এবং সিপিআইএম যৌথভাবে বোর্ড গঠন করে। প্রধান হন সিপিআইএমের তেরিনা খাতুন। কিন্তু ছয় মাস আগে এই ৫জন সদস্য তৃণমূলে যোগদান করে। ফলে পঞ্চায়েত দখল করে শাসকদল।
ব্লক সভাপতি হজরত আলীর হাত ধরে তারা শাসকদলে যোগদান করেন। কিন্তু শাসকদলের পূর্ববর্তী ৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য অনাস্থা আনেন ডিসেম্বর মাসের। তাদের অভিযোগ ছিল পয়সার বিনিময়ে ব্লক সভাপতি দলে যোগদান করিয়েছেন। যোগদান নিয়ে তারা কিছু জানেন না। যদিও সেই সময় অনাস্থা বাতিল হয়ে যায় কোর্টের নির্দেশে। প্রধান থেকে যান তরিনা খাতুনই। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই পুনরায় অনাস্থা প্রস্তাব আনা হল। অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন সেই পূর্ববর্তী ৪ জন শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্য। তাদের সমর্থন করলেন বর্তমান উপ-প্রধান। ফলে পাস হয় অনাস্থা প্রস্তাব। নতুন প্রধান হচ্ছেন জোসনারা খাতুন। আর তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে উত্তরবঙ্গ সফরে কাঁচি, বুধবার কলকাতা ফিরছেন মমতা
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হজরত আলীর অভিযোগ তাকে না জানিয়ে অনাস্থা আনা হয়েছে। যদিও শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যা জোসনারা খাতুন অনাস্থা এনেছেন তাদের দাবি ব্লক সভাপতি তাদের না জানিয়ে যোগদান করেছিলেন পয়সার বিনিময়ে। ফলে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এদের ভাগবাটোয়ারা ঠিকভাবে হচ্ছিল না। তাই নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে। তৃণমূলের এটাই রাজনীতি। দুর্নীতি এবং কাটমানি ছাড়া তৃণমূল কিছু বোঝেনা বলে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া।
পঞ্চায়েত সদস্যা জোসনারা খাতুন বলেন, অনাস্থা আনা হয়েছে। আমি নতুন প্রধান হচ্ছি। ডিসেম্বর মাসে কোর্ট থেকে নতুন তালিকা জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু এরা নিজেরা প্রধান থেকে গেছিল। তাই আমরা অনাস্থা এনেছি।
পঞ্চায়েত সদস্যা জোসনারা খাতুনের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা উজির আলী বলেন, কোর্ট থেকে নতুন তালিকা জমা দিতে বলেছিল। ব্লক সভাপতি যেটা বলছেন ওনাকে জানানো হয়নি তা মিথ্যে। বরং উনি যাদের যোগদান করিয়ে ছিলেন পয়সার বিনিময়ে, তা নিয়ে আমাদের জানান নি। উনি আমাদের পঞ্চায়েত, এলাকা সম্বন্ধে কিছু বলতে পারবেন না। উনি বলেছিলেন পাগলে কিনা বলে ছাগলে কি না খায়। কে পাগল আর কে পাগল তা প্রমাণ হয়ে গেল।
মালিওর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তরিনা খাতুনের স্বামী বাবর আলী বলেন, অনাস্থা হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে তা নিয়ে তো আর কিছু করা যাবে না। কিন্তু এই ভাবে নিজেদের দলের সদস্যরা নিজেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে সেটা ঠিক না। আমরা তৃণমূলে যোগদান করেছিলাম সেটা ব্লক সভাপতির হাত ধরে। ব্লক নেতৃত্ব এবং জেলা নেতৃত্ব জানে। আর আমরা যেভাবে পঞ্চায়েত চালিয়েছি কেউ দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারবে না।
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি হজরত আলী বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে অনাস্থা এনেছে। এই ঘটনা আমি উচ্চ নেতৃত্বকে জানাবো। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা যোগদান করেছিল তারা তৎকালীন জেলা সভানেত্রী মৌসুম নূরের নির্দেশে যোগদান করেছিল। এরা এখন পাগলের প্রলাপ বকছে। নিজেরা দুর্নীতি গ্রস্ত, বড় বড় গাড়ি নিয়ে চড়ে বেড়ায়,দুর্নীতি করার জন্য এরকম করছে।
জেলা বিজেপি সম্পাদক কিষান কেডিয়া কটাক্ষের সুর চড়িয়ে বলেন, এদের ভাগবাটোয়ারা ঠিক ভাবে হচ্ছিল না। তাই নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে। তৃণমূলের এটাই রাজনীতি। দুর্নীতি এবং কাটমানি ছাড়া তৃণমূল কিছু বোঝেনা। মানুষ সেটা বুঝে গেছে। সময় যোগ্য জবাব দেবে।
মালদহ জেলা জুড়ে বারবার দেখা যাচ্ছে শাসকদল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনছে।এই নিয়ে তৃণমূলের হাইকমান্ড কঠোর নির্দেশ দিলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন হচ্ছে না। সামনেই জেলার ২ পুরসভার ভোট। এই আবহতে তৃণমূলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অস্বস্তিতে ফেলবে জেলা নেতৃত্বকে। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।