ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, কোতুলপুর এলাকা থেকে ধৃত রামপ্রসাদ দিগর ভুয়ো নথি তৈরি করত সিম চালু করার জন্য। সেই ভুয়ো নথি নিয়ে সিম সংগ্রহ করা হত ওন্দা এলাকার ডিলার রাজারাম বিশ্বাসের কাছ থেকে।
ভুয়ো নথি দিয়ে হাজারের বেশি সিম কার্ড চালু করে তা বিক্রি করা হত দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাইবার প্রতারকদের কাছে। তার পরিবর্তে মিলত মোটা টাকা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, বাঁকুড়া পুলিশ এই সাইবার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে এক মাস্টার মাইন্ড মূলত এই চক্রের জাল বিছিয়ে ছিল বলে অনুমান পুলিশের।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, কোতুলপুর এলাকা থেকে ধৃত রামপ্রসাদ দিগর ভুয়ো নথি তৈরি করত সিম চালু করার জন্য। সেই ভুয়ো নথি নিয়ে সিম সংগ্রহ করা হত ওন্দা এলাকার ডিলার রাজারাম বিশ্বাসের কাছ থেকে। এদের কাছ থেকেই চালু হওয়া হাজার হাজার সিম কার্ড কিনত বাঁকুড়ার ধবগ্রামের বাসিন্দা অভিষেক মণ্ডল।
পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিষেক এবং অভিজিৎ দু'জনে সিম কার্ডের ভিত্তিতে একটি করে ই-ওয়ালেট তৈরি করত। প্রতিটি সিম কার্ডের ভিত্তিতে তৈরি করা ই-ওয়ালেট ও তার পাসওয়ার্ড মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হত দেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রতারক গোষ্ঠীর কাছে। তাদের সঙ্গে অভিষেক যোগাযোগ রাখত টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে। এরকম প্রায় ৭ টি গ্রুপের সঙ্গে যোগ রয়েছে অভিষেকের। শুধু তাই নয় একটা সিমের মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যেত তখন তা অন্য নেটওয়ার্কে পোর্ট করিয়ে নিয়ে একইভাবে সাইবার ক্রাইম করে মোটা টাকা উপার্জন করত তারা।
তবে শুধুমাত্র টাকা হাতিয়েই ক্ষান্ত হয়নি অভিষেক। ই-ওয়ালেট বিক্রি করার টাকা সে বিনিয়োগ করেছিল ক্রিপ্টো কারেন্সিতে। তদন্তের মাধ্যমে একথা জানতে পেরেছে পুলিশ। এর জন্য একাধিক ক্রিপ্টো ওয়ালেটও তৈরি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- অত্যন্ত মর্মান্তিক, বাবার চোখের সামনেই বাজ পড়ে মৃত্যু ছেলের
ধৃতদের কাছ থেকে বহু ভুয়ো নথি উদ্ধারের পাশাপাশি ৮ হাজার ২৮২ টি ভুয়ো নথি দিয়ে চালু করা সিমকার্ড, ৭ টি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পাসবই, ২৩ টি মোবাইল, ১ টি ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপ, ১ টি ক্যামেরা, ১ লক্ষ ১৫ হাজার নগদ টাকা ও ১৫ টি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ১০ হাজারের বেশি ভুয়ো ই-ওয়ালেটের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন- অশ্বত্থ পাতার বাঁশিতে হারিয়ে যাওয়া মেঠোসুর, পুরুলিয়ার অন্ধ শিল্পীর যাদুতে মজেছে নেটদুনিয়া
আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, আটক ৩
তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত দু'বছরের বেশি সময় ধরে সক্রিয় রয়েছে এই চক্রটি। এই পদ্ধতিতে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক প্রতারকের যোগ রয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাবে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।