উত্তম দত্ত, হুগলি: খেলাধুলায় তেমন উৎসাহ নেই, বরং পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চায় সে। কিন্তু সংসারে যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা! অগত্যা দোকানে বসে চা তৈরি করার ফাঁকেই স্কুলের হোমটাস্ক করতে হয় হুগলির সুফিয়া শামীমকে। এলাকার একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সে।
আরও পড়ুন: অনাথ হল ছোট্ট মেঘনা, স্ত্রীকে খুন করে গ্রেফতার তার বাবা
হুগলির মগরায় জিটি রোডের কাছেই থাকেন রেহানা বিবি। স্বামীর তাঁর সঙ্গে থাকেন না। এলাকার একটি সিনেমা হলের পাশে চায়ের দোকান চালিয়ে একার হাতে চার মেয়েকে মানুষ করেছেন রেহানা। বিয়েও দিয়েছিলেন সকলেরই। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর মধ্যেই মানসিক রোগ ধরা পড়ে বড় মেয়ের। মেয়েকে ডিভোর্স দেয় জামাই। তখন নাতনি সুফিয়ার বয়স মোটে ছ'মাস। সুফিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে চলে আসেন রেহানা। তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে অবনরম্যাল। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে চলে যায়। তাই ভাবলাম, নাতনিটাকে ভালো করে মানুষ করব। সুফিয়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াচ্ছি। প্রাইভেট টিউটরও রেখেছি। হাজার কষ্ট হোক, আমি চাই, নাতনিটা লেখাপড়া শিখে মানুষ হোক।' আর এতটুকু বয়েসেই দাদির পাশে দাঁড়িয়েছে সুফিয়াও। পড়াশোনার করার ফাঁকে চা তৈরি করে শিখে নিয়েছে সে। প্রতিদিন নিয়ম করে দোকানে বসে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটি। তার ফাঁকে চলে পড়াশোনাও।
বড় হয়ে কী হতে চাও? চোস্ত ইংরেজিতে সুফিয়া শামীমের জবাব, মানসিক সমস্যা ভুগছেন মা। দিদারও হাঁপানি ও সুগারের সমস্যা আছে। ডাক্তার হয়ে তাঁদের চিকিৎসার করতে চায় সে। আর রেহানা বিবি বলছেন, 'যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে ওর স্বপ্ন সার্থক হয়। বাকী ওপরওয়ালা হাতে।' রেহানা বিবি চায়ের দোকানে নিয়মিত আসেন স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা। ওই ক্লাব কর্ণধার সন্দীপ সাধুখাঁর বলেন, 'সুফিয়ার মতো মেয়ের পাশে দাঁড়়ানো উচিত। ওর পড়াশোনা ব্যাপারে যেকোনও ধরনের সাহায্য় করতে আমরা সদাপ্রস্তুত।'