২০১৪ সালের টেট চাকরিপ্রার্থীরা বৈধ? নাকি, ২০১৭ সালের টেট চাকরিপ্রার্থীরা বৈধ, নিয়ম অনুসারে কারা আগে চাকরি পাবেন, সেই নিয়ে আন্দোলন, পালটা আন্দোলনে বিপর্যস্ত মহানগরী।
এতদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের বিরদ্ধে নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভে অনড় রয়েছেন টেট পরীক্ষায় পাশ করা চাকরিপ্রার্থীরা। এবার সেই আন্দোলনে দেখা দিল নতুন দ্বন্দ্ব। ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা বৈধ, নাকি ২০১৭ সালের প্রার্থীরা বৈধ, সেই নিয়ে শুরু হল নতুন লড়াই। সল্টলেকের ১০ নম্বর ট্যাঙ্কের সামনে এবার ২০১৪-র পাশ করা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পালটা আন্দোলনে বসলেন ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই নতুন অবস্থান বিক্ষোভকারীদের দাবি, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের দাবি ‘অন্যায্য’। সেই অন্যায্য দাবি নিয়ে তাঁরা যদি এখন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন, তা হলে আসন সংখ্যাও কমে যাবে। তাতে ২০১৭-র ‘ন্যায্য’ টেট উত্তীর্ণরা বঞ্চিত হবেন। ঘটনাচক্রে, দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল টেট চাকরিপ্রার্থীদের এতদিনের আন্দোলন।
২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা করুণাময়ীর সামনে আগে থেকেই আন্দোলনে বসে রয়েছেন। নিজেদের দাবি নিয়ে আমরণ অনশনও শুরু করেছিলেন তাঁরা। এবার, ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরাও জানিয়ে দিলেন, তাঁরাও আমরণ অনশন শুরু করবেন। ফলে, জটিলতা শুরু হল আন্দোলনকারীদের অন্দরেই। দু’টি আলাদা আলাদা বছরের টেট উত্তীর্ণেরা একসঙ্গে চাকরির দাবি জানাচ্ছেন। এক পক্ষ বলছেন, অন্য পক্ষ তাঁদের পেটে কোপ মেরে চাকরির জন্য আন্দোলন করছেন!
২০১৭ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩০০-৪০০ জন চাকরিপ্রার্থী বৃহস্পতিবার থেকে আলাদা আন্দোলনে পথে বসেছেন। তাঁরা ২০১৪ সালে পাশ হওয়া টেট উত্তীর্ণদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এক দিকে অভিযোগ, দু’বার ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পরেও চাকরি পাননি ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা। এ বার তাঁরা যদি দাবি করেন, ইন্টারভিউ ছাড়াই তাঁদের চাকরি দেওয়া হোক, তা হলে বিপাকে পড়বেন ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা, কারণ, ২০১৭ সালে টেট উত্তীর্ণরা ছ’বছর পর এই প্রথম বার ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সেজন্যই ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের দাবিকে ‘অন্যায্য’ বলে আন্দোলনে ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা।
নতুন আন্দোলনকারীদের যুক্তি হল, এনসিপিই’ (ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন)-র নতুন নিয়ম। ২০১৭ সালের পাশ করা প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী আগে শিক্ষা দেওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তার পরেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসা যাবে। ২০১৭-র টেট পাশ করা প্রার্থীদের দাবি, তাঁরা সকলে সে ভাবেই টেট প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু, ২০১৪ সালে সেই নিয়ম বলবৎ ছিল না। প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক না থাকায় সেসময়ে পরীক্ষার পরে প্রশিক্ষণ নিলেও চলত। ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীরা ইন্টারভিউতে অংশ নিতে চাইছেন না, এর ফলে ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আসনে কোপ পড়ার প্রভূত সম্ভাবনা, অন্যদিকে তাঁরা যদি ইন্টারভিউতেও বসেন, তা হলেও প্রতিযোগিতা বাড়বে। কোনওভাবেই নিজেদের আসন কমতে দিতে রাজি নন ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা।
যদিও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলে দিয়েছেন, ২০১৪ এবং ২০১৭, উভয় সালের পাশ করা প্রার্থীদেরই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেই হবে! আইন মেনেই তাঁদের নিয়োগ করা হবে। বুধবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও পর্ষদের এই সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করেছেন।
আরও পড়ুন-
‘রানিকে খান খান করে ছাড়ব’, শাসকদলকে কড়া হুঁশিয়ারি সুকান্ত মজুমদারের, প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নেওয়ার বার্তাও
একাধিক খুন ধর্ষণে অভিযুক্ত রাম রহিম সিং, তাঁরই ‘সৎসঙ্গে’ ভিড় জমালেন বিজেপি নেতারা!
ভার্চুয়ালে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন করবেন মোদী, ‘চালুই তো আছে’, দাবি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের