উত্তম দত্ত, হুগলি: ট্রেন যাত্রার শেষে তার টিকিট তো সবাই ফেলেই দেন। কারণ তা আর কোনও কাজে লাগে না। অথচ সেই বাতিল ট্রেনের টিকিই কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন সিঙ্গুরের যুবক সৌরভ আদক। ফেলে দেওয়া ট্রেনের টিকিটের উপরে কাটিং করে সৌরভ আদক ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস- এ নাম তুলতে চলেছেন। ট্রেনের টিকিটের উপর কাঁচি চালিয়ে নানা মনীষী, খেলোয়াড়, শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদদের মুখাবয়ব ফুটিয়ে তোলেন নিপুণ দক্ষতায়।
কে এই সৌরভ আদক? সিঙ্গুর ব্লকের নসিবপুর পালপাড়ার বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের সৌরভ পেশায় একজন বিটেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি সার্ভেতে ডিপ্লোমাও করেছেন সৌরভ। কিন্তু এখনও ঠিকঠাক চাকরি পায়নি সৌরভ। বাড়ির থেকেও তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় পেশা নয়, প্যাশনকেই বেছে নিয়েছেন সৌরভ।
গত আট বছর ধরে সৌরভ পেপার আর্ট আর লিফ আর্টের প্রতি আকৃষ্ট । প্রথাগ ভাবে এ বিষয়ে তাঁর কোনও শিক্ষা না থাকলেও ছোট থেকেই ভাল ছবি আঁকতে পারেন সৌরভ। একটি বড় সুঁচ,কাঁচি, ডট পেন এবং একটি ব্লেড। এই কটি জিনিস দিয়েই বাজিমাত করে দিচ্ছেন সৌরভ। তাঁর বাড়িতে গেলেই দেখা যায় একমনে তিনি টিকিটের উপর এই সমস্ত উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন মনীষীদের ছবি ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এ জুলাই মাসে তার নাম নথিভুক্ত হয়।
সৌরভ জানান, 'ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস- এ আমার বিষয় হলো ভারতীয় রেল টিকিটের উপরে পেপার কাটিং আর্ট। আমার লক্ষ্য তিনশো টিকিটের উপরে কাজ করা। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ করতে হবে। আমি তাঁদের দফতরে আমার কাজ ভিডিওগ্রাফি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পাঠিয়ে দেব। তাই দিনরাত জেগে টিকিট জোগাড় করছি আর তার উপর কাজ করছ।'
এখনও পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটের উপরে রবীন্দ্রনাথ, কবি নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন সৌরভ। আবার স্টিফেন হকিং, চে গুয়েভারা, জ্যোতিবসু, মাদার টেরেজাদের মুখও রেল টিকিটের উপরে জীবন্ত হয়ে উঠেছে সৌরভের হাত ধরে। বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী অথবা পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, সৌরভের শিল্পকর্মে ফুটে উঠেছে সবরাই মুখ।
সৌরভের লক্ষ্য অবশ্য আরও অনেক বড়। তিনি বলেন, 'আমি গিনেস বুকে নাম তুলতে চাই । তার জন্য পাঁচ হাজার টিকিট প্রয়োজন। এর পর আমার পদক্ষেপ লিমকা বুক,তার পর গিনেস বুক।' সৌরভ শুধু কাগজ কাটিংই করেন না, তিনি গাছের পাতার উপরেও একইভাবে ও কাটিং করেন। বট, কাঞ্চন, বাঁশ পাতা, পান পাতাতেও অনেক শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এছাড়া থার্মোকলের থালা, বাটিতেও প্রচুর কাজ করেছেন সৌরভ।
সৌরভের লক্ষ্য আগামী দিনে এই পেপার আর্ট আর লিফ আর্ট শিল্পকে সরকারি স্বীকৃতি এনে দেওয়া। তাঁর দাবি, গোটা দেশে এর আগে মাত্র তিনজন শিল্পী এই পেপার আর্ট নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁরা হলেন সাধনা কুলকার্নি, অলোক ভাটনগর এবং ঋষিকেশ পোদ্দার।
দু' চোখে স্বপ্ন নিয়ে রাতের পর রাত কাজ করে চলেছেন সৌরভ। হুগলি জেলার গর্ব এই যুবককে এই কাজের জন্য অনেক সংস্থা পুরস্কৃতও করেছে। আর এ সবকিছুর কৃতিত্বই তাঁর মা মাধবীলতাদেবীকে দিচ্ছেন সৌরভ। তাঁর কথায়, 'মায়ের সমর্থন ছাড়া আমি এসব কিছুই করতে পারতাম না।'