রাতে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে জোর করে চাঁদা আদায় করছিলেন কালীপুজোর উদ্যোক্তারা। একটি ট্রাক থামিয়ে চালকের কাছে নাকি এক লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়! অভিযোগ তেমনই। জুলুমবাজির প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হলেন এক গৃহশিক্ষক-সহ দু'জন। আহতেরা ভর্তি হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের গাজোলে। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্তের পরিবারের লোকেরা।
দুর্গাপুজো শেষ। সামনেই কালীপুজো। অনেকেই জায়গায় রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায় করেন কালীপুজোর উদ্যোক্তারা। ট্রাক চালকরা যদি দাবিমতো চাঁদা দিয়ে দেন, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু চাঁদা দিতে রাজি না হলে কিংবা দাবিমতো টাকা না দিলে, জুলুমবাজির অভিযোগও ওঠে। সোমবার রাতে ঠিক তেমনই ঘটনা ঘটেছে মালদহের গাজোলে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সোমবার রাতের গাজোলের চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডোবাখাকসন এলাকার রাস্তায় চাঁদা আদায়ের জন্য এক পণ্যবাহী ট্রাক থামান স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। কালীপুজোর জন্য ট্রাক চালকের কাছে এক লক্ষ টাকা চান তাঁরা! কিন্তু এত টাকা সঙ্গে নিয়ে তো আর কেউ রাস্তায় বের হন না! সত্যি কথা বলতে, একজন ট্রাক চালক এত টাকা পাবেনই বা কোথা থেকে! টাকা না পেয়ে শেষপর্যন্ত ওই ট্রাকটিকে কালীপুজোর উদ্যোক্তারা আটকে রাখেন বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়েই ট্রাকের মালিক ফোনে ঘটনার কথা জানান চালক।
জানা গিয়েছে, গাজোলে যে ট্রাকটিকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই ট্রাকের মালিকের বাড়ির মালদহেরই হরিশ্চন্দ্রপুরে। গাজোলে এক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সেই ব্যক্তির নাম কার্তিক মণ্ডল। পেশায় তিনি গৃহশিক্ষক। নির্মল মণ্ডল নামে এক যুবককে স্থানীয় ক্লাবে যান কার্তিকবাবু। চাঁদা না পেয়ে ট্রাক আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন তিনি। অভিযোগ, ক্লাবের সামনেই কার্তিকবাবু ও তাঁর সঙ্গী নির্মলকে বেধড়ক মারধর করেন ক্লাবের সদস্যরা। রীতিমতো রাস্তায় ফেলে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে মেরে তাঁদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। কোনওমতে পালিয়ে বাঁচেন ওই দু'জন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গাজোল থানার পুলিশ। আক্রান্তদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে। স্থানীয় ক্লাব সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্তদের পরিবারের লোকেরা। অভিযোগকারীদের দাবি, কার্তিক ও নির্মলকে বাঁচাতে গেলে তাঁদেরও রেয়াত করে হামলাকারীরা।
দুর্গাপুজো কিংবা কালীপুজোর কথা না হয় ছেড়েই দিন, এখন বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা গাড়ি থামিয়ে জোর করে সরস্বতী পুজোর চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। চাঁদার আদায়ে জুলুমবাজি রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না, মালদহের ঘটনাই তার প্রমাণ। এদিকে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে আবার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। দুর্গাপুজোর সময়ে বেশি চাঁদা দিতে গিয়ে যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সমস্যায় পড়তে না হয়, তারজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে লক্ষ্মীর ভাঁড় বিলি করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। এলাকার সকলেই রোজের খরচ বাঁচিয়ে ভাঁড়ে টাকা জমানোর অনুরোধ করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা।