Milk: সুষম খাদ্য হিসেবে পরিচিত দুধ। তবে সবার পক্ষে দুধ হজম করা কঠিন। অনেকেই দুধ সহ্য করতে পারেন না। দুধ কীভাবে পান করা হচ্ছে, তার উপরেও অনেককিছু নির্ভর করছে। অনেকে ফোটানো দুধ পান করেন, আবার অনেকে ঠান্ডা দুধ পান করেন।
Milk: এমন কোনও পরিবার নেই যেখানে কেউ দুধ পান করেন না। প্রতিটি পরিবারেই নানা কারণে দুধ ব্যবহার করা হয়। আর ছোটবেলা থেকে আমরা প্রত্যেকেই দুধ ব্যবহার করার আগে আগুনে ফুটিয়ে নেওয়ার যে পদ্ধতি, তার সঙ্গে কম-বেশি পরিচিত। প্রতিটি বাড়িতেই দুধ প্যাকেট থেকে কেটে ,সেটিকে পাত্রে ঢেলে ফুটিয়ে নেওয়া হয়। তারপর সেটিকে ঠাণ্ডা করে ফ্রিজে রাখা হয়। আর তা না হলে সেটিকে পানীয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এমনটি আমরা সবাই দেখে থাকি। বাড়িতে মায়েদের বলতে শোনা যায়, দুধে এমন কিছু ব্যাকটিরিয়া থাকে যা ফুটিয়ে না খেলে পরিপাকে সমস্যা হয়। কিন্তু তাহলে প্যাকেটজাত দুধও কি ফুটিয়ে খাবেন? দেখা যায় প্যাকেটজাত দুধও বাড়িতে আনার পরে সেটিকে পাত্রে ঢেলে ফুটিয়ে নেওয়া হয়। এমনকী, বাড়িতে গোয়ালা দুধ দিয়ে যাওয়ার পরেও তেমনটিই করতে দেখা যায় বাড়ির মায়েদের। কিন্তু বর্তমানে ছবিটি একটু পাল্টাতে শুরু করেছে। এখন বাজারে যখন পাস্তুরাইজড বা আলট্রা পাস্তুরাইজড দুধ পাওয়া যাচ্ছে তখনও খাওয়ার আগে দুধ ফুটিয়ে নেওয়া উচিত? না কি সরাসরি প্যাকেট থেকেই গ্লাসে ঢেলে দুধ খাওয়া যেতে পারে?
আগে জানতে হবে খাওয়ার আগে কেন দুধ ফুটিয়ে নেওয়া হয়?
দুধে সালমনেলা বা ইকলাই নামে জীবাণু থাকে। তবে ৯৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার বেশি তাপমাত্রায় ফোটালে এই জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও দুধ ফোটালে তাতে ল্যাকটোজ এর পরিমাণও কমে যায়। তখন ল্যাকটোজ বদলে যায় প্রোটিনে। যার ফলে হজমের সমস্যা কমে যায়।
এবার প্রশ্ন হল প্যাকেটজাত দুধে কি জীবাণু থাকতে পারে?
এখানে প্যাকেটজাত দুধ বলতে আমরা যেটা বুঝি, ডেয়ারি থেকে কেনা চৌকো, প্যাকেটে সিল করা দুধ। প্লাস্টিকে সিল করা ছাড়াও টেট্রা প্যাক, কাচের বোতলে সিল করা দুধও দোকানে বা বিভিন্ন মলে পাওয়া যায়। ঐ দুধের প্যাকেটের গায়ে কী ধরনের পরিশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে সব কিছুই লেখা থাকে। যেমন কোনটিতে লেখা থাকে ‘পাস্তুরাইজড’, কোনটিতে ‘টোনড’, আবার কথাও লেখা থাকে ‘ইউএইচটি’ । এই প্রত্যেকটি শব্দের একটি করে অর্থ আছে। তাই দুধ ফোটানো জরুরি কিনা তা অনেকেই বুঝতে পারে না। বস্তুত এই শব্দগুলির অর্থ জানতে পারলেই আমরা বুঝতে পারব দুধ ফোটানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না।
পাস্তুরাইজড দুধ
পাস্তুরাইজেশন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশেষ একটি তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গরম করে নেওয়া। এর ফলে দুধের স্বাদ এবং পুষ্টি নষ্ট না করেই ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া বা দুধে থাকা জীবাণুকে নষ্ট করে দিতে পারে।
ইউএইচটি ট্রিটমেন্ট
ইউএইচটি ট্রিটমেন্ট হল আলট্রা হাই টেম্পারেচার ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ দুধকে প্রায় ১৪০-১৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে কয়েক সেকেন্ড রাখার প্রক্রিয়া। এতে দুধ পরিশোধিত হয়। ফ্রিজে না রাখলেও দুধ সহজে খারাপ হয় না। এই প্রক্রিয়াকে আলট্রা পাস্তুরাইজেশনও বলা হয়।
হোমোজেনাইজেশন
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দুধ শোধনের কোনও সম্পর্ক নেই। এই প্রক্রিয়া দুধের স্নেহপদার্থকে ভেঙ্গে দেয়। যাতে দুধের মধ্যে ক্রিমের মতো স্তর না পড়ে । তবে এটা বলে রাখা খুব দরকার হোমোজেনাইজড দুধ যদি পাস্তুরাইজড হয় তবে তা শোধন করা হয়েছে বুঝতে হবে।
আলট্রাফিলটারেশন
দুধের প্যাকেটে ‘ আলত্রাফিলটাড’ লেখা থাকলে বুঝতে হবে তা থেকে জল, ল্যাকটোজ এবং কিছু খনিজ পদার্থকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার বদলে রাখা হয়েছে প্রোটিন ও ফ্যাটের মতো উপাদান। এই প্রক্রিয়ায় এক বিশেষ ধরণের ছাঁকনি ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে কৃত্রিম চাপ তৈরি করে দুধ ছাঁকা হয়। এতে দুধে থাকা ছোট অণুবিশিষ্ট পুষ্টিগুণ বেরিয়ে যায়। থেকে যায় বড় অণুর পুষ্টিগুণ যেমন ফ্যাট আর প্রোটিন। এই দুধ যদি পাস্তুরাইজড হয় তবে বুঝতে হবে দুধ পরিশোধন করা হয়েছে।
টোনড এবং ফুল ফ্যাট
এর সঙ্গে দুধের পরিশোধন প্রক্রিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। দুধে থাকা স্নেহ পদার্থের পরিমাণের নিরিখে টোনড মিল্ক বা ফুল ফ্যাট মিল্ক লেখা গুলি থাকে। এই ধরণের দুধে ৬ শতাংশের বেশি ফ্যাট থাকে। এই ধরনের দুধ পাস্তুরাইজড হলে তাকে জীবাণুমুক্ত বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
কোন দুধ ফোটাবেন? কোন দুধ ফোটাবেন না?
১। যে কোন পাস্তুরাইজড দুধ যদি সঠিক ভাবে সিলড প্যাক থাকে এবং ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়, তবে সেটি না ফুটিয়েও সরাসরি খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই দুধটির মেয়াদ দেখে নিতে হবে।
২। যদি দুধের প্যাকেট ছেঁড়া থাকে তাহলে দুধ ফুটিয়ে নেওয়াই ভালো। তা না হলে দুধে ব্যাকটিরিয়া তৈরির সম্ভাবনা থাকতে পারে।
৩। যদি দুধ কেনার সময় দেখেন তা ফ্রিজে রাখা নেই, তাহলেও দুধে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। সেক্ষেত্রেও দুধ ফুটিয়ে নেওয়াই ভালো।
দুধ ফোটালে কি পুষ্টিগুণ কমে যায়?
পুষ্টিবিদরা বলেন দীর্ঘক্ষণ দুধ ফোটালে দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে গরুর দুধ ফুটিয়ে নেওয়াই ভালো। কিন্তু আলট্রা পাস্তুরাইজড দুধ যথাযথভাবে পরিশোধিত থাকে। তাই আবার গরম করলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। পাস্তুরাইজড দুধও ৭২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ১৫ সেকেন্ড রাখা হয়।এতেও অধিকাংশ জীবাণুই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই দুধও যদি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তবে ফোটানোর প্রয়োজন পড়ে না।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।


