কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিজেপি নেতারা হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে ভোট প্রচারে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করেই বাজি মারতে চেয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল ৩৭০ ধারার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচার করে দেশাত্মবোধের জিগিড় আরও বেশি করে তুলে দিয়ে তার সুফল ভোটবাক্সে নিয়ে আসা। কিন্তু ভোটের ফল দেখে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেবন, বিজেপি-র এই কৌশল দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত সম্পূর্ণ সফল হয়নি।
ভোটের ফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রামহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা, দুই রাজ্য়েই বিরোধীদের টেক্কা দিলেও প্রত্যাশিত ফল হয়নি বিজেপি-র। লোকসভা নির্বাচনে মোদী ঝড়ের পরে এই দুই রাজ্যে ভাল ফল করার বিষয়ে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী ছিলেন দলের নেতারা।জনৈতিক বিশেষজ্ঞ ইমতিয়াজ আহমেদ একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিককে বলেন, '৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এই দুই রাজ্যের নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক ছিল না। এই ইস্যুটি নিতান্তই আবেগসর্বস্ব ছিল। ফলে আমজনতা তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি। কিন্তু এটাও ঠিক যে বেকারত্বের মতো ইস্যু যেগুলি একেবারেই আবেগসর্বস্ব নয়, সেগুলির দ্বারাও মানুষ খুব একটা প্রভাবিত হননি।'
আরও পড়ুন- দড়ি টানাটানির কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার, উদ্ধবকে ১৫ নির্দলের হুমকি দিলেন ফড়নবিশ
আরও পড়ুন- বহিষ্কৃত নাতি থেকে জাঠভূমির কিংমেকার, দুশ্যন্ত-ই 'ভগবান' সোশ্যাল মিডিয়ায়
তার উপরে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্তের সুফল ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু ভোটের ফল বেরোতে দেখা গেল, বিজেপি নেতাদের সেই অঙ্ক একেবারেই মেলেনি।
স্বরাজ পার্টির নেতা এবং সমাজবিজ্ঞানী যোগেন্দ্র যাদব বলেন, 'বিজেপি মনে করেছিল সরকার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নয় এমন বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে ভোটারদের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।' যোগেন্দ্রর মতে, জাতীয়তাবাদের কখনও বিধানসভা নির্বাচনের ইস্য়ু হতে পারে না। নিজের দাবি ব্যাখ্যা করে যোগেন্দ্র বলেন, 'হরিয়ানায় প্রচুর সেনাকর্মী থাকেন। আমি ওখানে এক মাসে প্রায় একশোর উপরে সভায় বক্তব্য রেখেছি। একজনও আমাকে ৩৭০ ধারা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করেননি। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে হরিয়ানার মানুষেরও সমর্থন ছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে প্রাসঙ্গিক নয়।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতাও দলের কৌশলগত ভুলের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনিও মনে করছেন, ভোটে দলের প্রত্যাশার তুলনায় ফল খারাপ হওয়ার পিছনে অনেক ছোট ছোট কারণ রয়েছে। হরিয়ানায় লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোটের হারও অনেকটাই কমে গিয়েছে। ওই বিজেপি নেতার মতে, এতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে এক একটি ভোটে এক একটি বিষয়ে প্রভাবিত হন ভোটাররা। সবক্ষেত্রেই রুটি রুজির মতো মৌলিক বিষয়কে চাপা দিতে জাতীয়তাবাদের জিগিড় তুলে দেওয়ার কৌশল যে কাজে লাগে না, তাও স্বীকার করে নিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা।
আর বিজেপি নেতা অবশ্য মনে করছেন, কৃষি কেন্দ্রিক ইস্যু এবং প্রচুর সংখ্যায় বিরোধী নেতাদের বিজেপি- তে যোগ দেওয়া মহারাষ্ট্রে দলের বিপক্ষে গিয়ে থাকতে পারে। তিনি অবশ্য মনে করছেন, কাশ্নীরের মতো ইস্যু নিয়ে ভোটারদের আবেগ উস্কে না দিলে এর থেকেও খারাপ ফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।