১৯৬৪-তে করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন এই মহিলা বিজ্ঞানী, কেউ তখন মানেনি তাঁর দাবি

১৯৬৪ সালে তাঁর বয়স ছিল মোটে ৩৪

সেই সময়ই করোনাভাইরাস আবিষ্কারের দাবি জানিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন জুন আলমেইদা

স্কটিশ ভাইরোলজিস্ট-এর সেই দাবি তখন অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছিলেন অন্যান্যরা

সেই ভাইরাসই মাত্র ৫০ বছর পরই সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে

 

amartya lahiri | Published : Apr 22, 2020 1:27 PM IST / Updated: Apr 25 2020, 03:51 PM IST

১৯৬৪ সাল, তখন কতই বা বয়স তাঁর, মোটে ৩৪। করোনাভাইরাস আবিষ্কারের দাবি জানিয়েছিলেন স্কটিশ ভাইরোলজিস্ট জুন আলমেইদা। করোনাভাইরাস বলে অবশ্য বলেননি। তিনি বলেছিলেন, তিনি এক নতুন ধরণের ভাইরাস চিহ্নিত করেছেন, যার চারপাশে একটি হ্যালো বা মুকুট-এর মতো রয়েছে। কিন্তু, সেই সময়ে তাঁর কথায় কেউ কান দেননি। তাঁর তোলা প্রথম করোনাভাইরাস-এর ছবিগুলিকে পন্ডিতরা 'ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কণাগুলির খারাপ ছবি' বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা কল্পনাতেও আনতে পারেননি সেই ভাইরাসই মাত্র ৫০ বছর পরই সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দেবে।

অনেকের একটু খটকা লাগতে পারে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ২০১৯ সালে চিনে শুরু হল, তাহলে ১৯৬৪ সালে তার ছবি তুললেন কীকরে এই মহিলা বিজ্ঞানী? বস্তুত করোনাভাইরাস একটি ভাইরাস পরিবারের নাম, যাদের চারপাশে কাঁটা কাঁটা মুকুটের মতো প্রোটিনের স্তর থাকে। এই ভাইরাস পরিবারের বিভিন্ন সদস্যরাই মানবদেবে তীব্র শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। সার্স রোগের ভাইরাসটিও এই করোনাভাইরাস পরিবারেরই সদস্য, যা ২০০৩-০৪ সালে মহামারির আকার ধারণ করেছিল। আর কোভিড-১৯ রোগের কারণ যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, সেটিও এই করোনাভাইরাস পরিবারেরই সদস্য। এই পরিবারেই প্রথম ছবিটি তুলেছিলেন আলমেইদা।

১৯৩০ সালে গ্লাসগো শহরে জন্মেছিলেন জুন আলমেইদা। বাসচালকের মেয়েটি অর্থাভাবে ভালো ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। ১৬ বথর বয়সে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, এবং গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারি-তে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান হিসাবে চাকরি নেন। পরে ভেনেজুয়েলার এক শিল্পীকে বিয়ে করে কানাডায় চলে যান। কারণ ডিগ্রিবিহীন বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি অর্জন করা তখন ব্রিটেনের চেয়ে সেই দেশে সহজ।

আলমেইদা-কে ইমিউন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপির মাধ্যমে সহজ ভাইরাস-দের দেখার কৌশলের অন্যতম পথিকৃত এই মহিলা বিজ্ঞানী। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই আজও ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়। কানাডা থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে আলমেইদা ডিএজে টাইরেল নামে আরেক গবেষকের সঙ্গে কাজে নিয়ুক্ত হয়েছিলেন। টাইরেল সেইসময় ব্রিটেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৈরি হওয়া র কমন কোল্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক। গত শতাব্দির ষাটচের দশকের গোড়ায় তাঁরা দেখেছিলেন স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে নাকে জমে থাকা সর্দির যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গবেষণাগারে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস-এর তৈরি করা যাচ্ছে না।

'শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করুন', মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সজল চোখে আর্তি মৃত করোনা-যোদ্ধার স্ত্রীর

লকডাউন উঠতেই চিনে চুমু খাওয়ার প্রতিযোগিতা, দেশেই উঠল সমালোচনার ঝড়

করোনা সংকটে জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্রায় সব রাষ্ট্রনেতাদের, ব্যতিক্রম শুধু তিনজন

বিশেষ করে বি ৮১৪ নামে পরিচিত একটি নমুনা, যা সারে বোর্ডিং স্কুলের এক শিক্ষার্থীর থেকে নেওয়া হয়েছিল, সেটি তাদের ভাবিয়ে তুলেছিল। অর্গান কালচার পদ্ধতিতে সেই ভাইরাস কনার সংখ্যা বাড়িয়ে আলমেইদার কাছে পাঠিয়েছিলেন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় ভাইরাসটিকে দেখা যায় কিনা তা জানতে।

আলমেইদা শুধু এই নতুন ধরণের ভাইরাসগুলির ছবি তুলতে সক্ষম হননি, এটি যে একেবারে অন্য ধরণের ভাইরাস সেই ধারণাও তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন। টাইরেল এবং আলমেইদা-ই ভাইরাসটির চারপাশে মুকুট-জাতীয় গঠনের জন্য এটির করোনভাইরাস নামকরণ করেছিলেন। প্রথমে সেই সময়রে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা একজন ডিগ্রি না থাকা বিজ্ঞানীর দাবি মানতে না চাইলেও ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে তাদের এই আবিষ্কারটি স্বীকৃতি পেয়েছিল। আলমেইদার তোলা করোনাভাইরাস-এর প্রথম ছবিটি দুই বছর পরে জার্নাল অফ জেনারেল ভাইরোলজিতেও প্রকাশিত হয়েছিল।

করোনাভাইরাস অবিষ্কার ছাড়াও তিনি ইমিউন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের দুটি পৃথক উপাদান-এর কথাও প্রথম জানিয়েছিলেন। যা এই রোগের টিকা তৈরিতে সহায়তা করেছিল। ডাক্তার এ জেড কাপিকিয়ান, যিনি নরোভাইরাস সনাক্ত করেছিলেন, তাঁকে আবার কে ইমিউন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপির কৌশল শিখিয়েছিলেন আলমেইদাই। প্রথাগতভাবে শিক্ষা না নিলেও ১৯৭০ সালে তাঁর লেখা বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলিকে ডক্টরেট অব সায়েন্স বা ডিএসসি উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

 

Share this article
click me!