আদানি গোষ্ঠীর সম্পত্তির পরিমাণ কমছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের এক মাস পরে সংস্থার ১২ লক্ষ কোটি টাকা সম্পত্তি হারিয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর থেকে আদানি গোষ্ঠীর সম্পত্তির পরিমাণ ক্রমশই কমছে। আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির মূল্য গত এক মাসে প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা বা ১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে গিয়েছে। দেশের স্টক মার্কেটের ইতিহাসে একটি কোনও একটি সংস্থার সবথেকে দ্রুত অর্থনৈতিক পতন বলেও মনে করা হচ্ছে।
আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন গত ২৪ জানুয়ারির আগে প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু মার্কিন শর্ট বিক্রেতা হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের পরই গৌতম আদানির সম্পত্তি প্রায় লন্ডভন্ড হয়ে যায়। গত এক মাসে আদানি গ্রুপের সম্পত্তি প্রায় ৭.২ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ ১২ লক্ষ কোটি টাকা উধাও হয়ে হেছে। আদানিদের বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের মূল অভিযোগই ছিল স্টক ম্যানিপুলেশন ও ট্যাক্সের অনুপযুক্ত ব্যবহার।
ওয়াকিবহাল মহল আদানি গ্রুপে ক্রমবর্ধমান ঋণের বিষয় নিয়েও যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তেমনই সতর্ক করেছে। বলেছে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সাতটি প্রধান কোম্পনির ৮৫ শতাংশ নিম্নমুখী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আজ গ্রুপের তিনটি সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থা হল আদানি টোটাল গ্যা, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্রান্সমিশন। গত এক মাসে তিনটি সংস্থার সম্পত্তি প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে।
গত ৫২ সপ্তাহ ধরেই আদানি গ্রুপের এই তিনটি সংস্থার শেয়ার ছিল উর্ধ্বগামী। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের মাত্র এক মাসের মধ্যেই শেয়ারের দাম ৮২ শতাংস পর্যন্ত কমে গেছে। গত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে তিনটি সংস্থাই সবথেকে খারাপ অবস্থার মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ যখন মাত্র এক মাস আগেই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছিল তখনও আদানিতে এই রিপোর্টের ওপর তেমন গুরুত্ব দেয়নি। আপেল থেকে শুরু করে এয়াপোর্ট, বন্দর, সর্বক্ষেত্রেই তাদের বাণিজ্যের জাল বিস্তার ছিল। তাই ক্ষতির পরিমাণ যে এত বেশি হবে তা ধারনা ছিল না। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরাও আদানিদের যে এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। অনেকেই আবার রিপোর্টটি প্রত্যাথ্যান করেছিল। বলেছিল এই রিপোর্ট আদানি গোষ্ঠীর ওপর প্রত্যক্ষ কোনও প্রভাব ফেলবে না। শেয়ার মার্কেটেও দ্রুত পুনরুত্থান হবে।
কিন্তু একমাস পরেও হাল ফেরেনি আদানি গোষ্ঠীর। শেয়ারের দাম বর্তমানে ২৫-৮০ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষজ্ঞদের কথাই শেয়ার মার্কেটই প্রমাণ করে দেয় হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট গৌমত আদানির কোম্পানিগুলিতে কতটা খারাপ প্রভাব ফেলেছে। শেয়ার মার্কেটের স্টক ১২০ থেকে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে গেছে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের প্রভাব শুধুমাত্র আদানিদের ওপর বিশ্বের একাধিক সংস্থা ও ঋণদাতা সংস্থ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত করেছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে একাধিকবার খারিজ করে দিয়েছেন গৌতম আদানি নিজেই। কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই অবস্থায় ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। যদিও আদানিরা জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পর্যাপ্ত নগদ মজুত রয়েছে। ব্যবসা থেকে নগদ প্রবাহ তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ কমছে।
আরও পড়ুনঃ
বিশ্বভারতীর উপাচার্যর নামে নালিশ করবেন, তারাপীঠের মন্দিরে দাঁড়িয়ে হুংকার তৃণমূল নেতার
অবশেষে 'সুপ্রিম' স্বস্তি পবন খেরার, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য কংগ্রেস নেতার