করোনা টিকা নিয়ে শরীর চুম্বক হয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন নাসিকের এক ব্যক্তি
সেই খবর ছড়ালো পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জের গ্রামেও
হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেকেই দেখলেন, তাদেরও শরীরে চৌম্বকশক্তি এসেছে
শেষে ভ্রম দূর করলেন সাংবাদিকরা ও এক শিশি ট্যালকম পাউডার
নাসিকের এক ব্যক্তি দাবি করেছিলেন, কোভিড টিকা নিয়ে তাঁর শরীর নাকি চুম্বকে পরিণত হয়েছে। ধাতব যে কোনও জিনিস গায়ে লেগে যাচ্ছে। সেই খবর মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রামপঞ্চায়েতের রায়পুর এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামের অনেকেই টিকা নিয়েছেন, শরীর চুম্বক হয়েছে কিনা, কে বলতে পারেন? আছেন স্বদেশ দাস নামে এক হাতুড়ে ডাক্তার। ফলে তাঁর বাড়িতে হামলে পড়েছিল আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। একদিনের জন্য যেন তিনিই নায়ক। কিন্তু, কিছু সাংবাদিক আর এক শিশি ট্যালকম পাউডারেই হাতুড়ে ডাক্তারের হিরোগিরি এবং গ্রামবাসীদের আতঙ্ক দুইই দূর করল।
জানা গিয়েছে স্বদেশ দাসের বাড়িতে টিকা গ্রহণকারী গ্রামবাসীরা আসার পর দেখা গিয়েছিল, কয়েকজনের গায়ে বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের শরীরে স্টিলের খুন্তি, চামচ, পয়সা, লোহার চাবি ইত্যাদি ধাতব পদার্থ আটকে যাচ্ছে। গ্রামবাসীদের আতঙ্ক আরোই বাড়ে। হাতুড়ে চিকিৎসক স্বদেশ দাসের বাড়িতে ভিড়ও বাড়ে। মুখে মুখে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সাংবাদিকরাও সেই খবর সংগ্রহের জন্য ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা তাংদের জানান, টিকা নিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের অনেকের শরীরেই এই চৌম্বক শক্তি দেখা যাচ্ছে। স্বদেশ দাস জানান, দুটি ডোজ নিলে চৌম্বক শক্তিও বেশি হচ্ছে। টিকা নেননি যেসব গ্রামবাসী তাঁদের অনেকেই ভয়ে টিকা নেবেন না বলেই ঠিক করে নিয়েছিলেন।
কিন্তু, সাংবাদিকদের তো কৌতূহলী মন। তাই তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন 'চৌম্বকশক্তি প্রাপ্ত' সেইসব মানুষের শরীরে ট্যালকম পাউডার লাগিয়ে দিলে কি তাদের সেই শক্তি থাকছে? না, শেষ পর্যন্ত যেই পাউডার লাগানো হল, দেখা গেল চৌম্বকীয় আকর্ষন হারিয়েছে তাদের শরীর। প্রমাণ হয়ে যায়, আসলে চৌম্বক শক্তি নয়, গরমে শরীর থেকে বের হওয়া চ্য়াটচেটে ঘামের আঠালো শক্তিতেই পয়সা থেকে চামচ, চাবি, কাচি আটকে যাচ্ছিল তাদের শরীরে। এতে গ্রামবাসীদের আতঙ্ক দূর হয় ঠিকই, তবে বিষয়টা নেহাতই ঘাম জেনে তাদের কৌতূহলও দমে যায়।
অন্যদিকে, পাউডারের কামাল দেখে হাতুড়ে চিকিৎসকও শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে নেন, না করোনা টিকা নিয়ে শরীরে কোনও চৌম্বক শক্তি তৈরি হচ্ছে না। তাঁরা যেটা চৌম্বক শক্তি বলে মনে করছিলেন, তা আসলে শরীরের ঘাম ছাড়া কিছুই না। স্বদেশ দাস জানিয়েছেন, এখন থেকে তিনি সাধারন মানুষের কাছে টিকা নেওয়ার বিষয়ে গ্রামের মানুষকে সচেতন করবেন।
আরও পড়ুন - রহস্য বাড়ছে ধৃত চিনা যুবককে ঘিরে - শরীরে কি লুকোনো গোপন যন্ত্র, হবে বডিস্ক্যান
বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরাও এখন করোনার টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। গৃহবধু মামনি দাস জানিয়েছেন, তাঁর শ্বাসুরি টিকার দুটি ডোজ নিয়েছিলেন। তারপর এদিন স্বদেশ দাসের বাড়ি আসার পর দেকেছিলেন তাঁর শরীরে চুম্বকের মতো ধাতব জিনিস আটকে যাচ্ছে। তাই ঠিক করেছিলেন, টিকা নেবেন না। কিন্তু, এখন আর সেই ভয় নেই। অন্যদিকে বীনা সরকার নিজেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাঁর শরীরে ধাতব পদার্থ না আটকালেও, এই ঘটনায় কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি এখন বুঝেছেন সম্পূর্ণটাই গুজব। সংবাদ মাধ্যমের তৎপরতায় এই গুজবের আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়ায় তাঁরা খুশি।