সকাল থেকেই টাকির রাজবাড়ির রীতি মেনে ঠাকুর বরণ অর্থাৎ যাত্রা মঙ্গল বরন তারপর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নিয়ম অনুযায়ী আগে টাকির রাজবাড়ির ঠাকুর ইছামতি নদীতে বিসর্জন হবে তারপর একে একে অন্যান্য বাড়ির ও বারোয়ারি পুজোর দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
টাকির রাজবাড়ির দুর্গাপুজো এবছর ৩০০ বছরে পা দিল। এবাড়িতে মা দুর্গা পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতিতে বিসর্জনে যান। আজও শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস বয়ে চলেছে এই রাজবাড়িতে। বিজয়া দশমীর সকাল থেকেই টাকির রাজবাড়ির রীতি মেনে ঠাকুর বরণ অর্থাৎ যাত্রা মঙ্গল বরণ তারপর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
টাকি এলাকার নিয়ম অনুযায়ী আগে রাজবাড়ির ঠাকুর ইছামতি নদীতে বিসর্জন হয়, তারপর একে একে ঘোষ বাড়ি, রায়চৌধুরী বাড়ি, মুখার্জি বাড়ি, গুরুর বাড়ি, চক্রবর্তী বাড়ি সহ অন্যান্য বাড়ি ও বারোয়ারি পুজোর দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। বসিরহাটের টাকি পুবের বা রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দুই বাংলার এখনও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে। এই পুজোকে ঘিরে বহু প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে সতীদাহ প্রথা রদ করেতে ব্রিটিশ সিনেটে রাজা রামমোহন রায়ের আনা বিলে রামমোহনের পর যে দ্বিতীয় ব্যক্তি সই করেছিলেন, তিনি এই রাজবাড়ির জমিদার কালিনাথ মুন্সী। সুস্থভাবে জমিদারী ও রাজকার্য চালানোর জন্য ইংরেজরা তাঁদের রায় চৌধুরী উপাধি দেন এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের সামিল করেন। যেমন আজও ইতিহাসের সাক্ষী কলকাতা থেকে টাকি পর্যন্ত টাকি রোড, টাকি গভমেন্ট কলেজ, একাধিক ভারতবর্ষের উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের অবদান উজ্জ্বল রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
এক সময় নবমীর দিন এই বাড়িতে বন্দুকের টোটা ফাটিয়ে মহিষ বলি দিয়ে পুজোর নিয়ম পালন হত এই বাড়ির প্রাঙ্গণে। তবে, আধুনিক কালের নিয়মে আজ সেটা বন্ধ। অবিভক্ত বাংলা অর্থাৎ ওপারে বাংলাদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী ইছামতি নদী পেরিয়ে এই রাজবাড়িতে ভিড় জমাতেন। মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত পুজোর ক’টা দিন। এখানে সমস্ত ধর্মের মানুষ রাজবাড়ির পুজোর দালান কোঠায় এসে দুর্গাপুজোর ক’টা দিন ভুরিভোজের সামিল হন। এবারে রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছরে পা দিয়েছে, তার জন্য এবারের থিম পুরনো দিনের গোলা ভরা ধান। এই বাড়ির প্রাচীন সংস্কৃতি পুজো উদ্যোক্তারা আলোকবাতির মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন-
দশমীর বিদায় বেলা, সাঙ্গ হল সিঁদুর খেলা, রাঙা আভায় মেতে উঠলেন বাগবাজার সার্বজনীনের মহিলারা
জেলের গান শুনে পিছন দিকে ফিরেছিল দেবীর পুজোর ঘট, কাঁথির কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির দুর্গা তাই পূজিতা হন পশ্চিমমুখে
দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজে না, কাঁসর সানাই সহযোগে ঢোলের তালে আনন্দে নাচেন বীরভূমের সুরুল রাজবাড়ির পুরুষরা