বিশ শতকের শুরুর দিকে গোয়া থেকে একটি পরিবার এসে উঠেছিল খাস কলকাতায়। গোয়াতে থাকাকালীন এই পরিবারটি নিয়মিত গানের চর্চা করত। কলকাতায় এসেও তাঁরা গানকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেলেন। গোয়ান এই পরিবারটির মাথা ছিলেন ইগনেশিয়াস সালদানহা।
ব্রিটিশ আমলে গোয়ার সালদানহা পরিবারের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল সালদানহা বেকারি দেখতে দেখতে এই বেকারি পা দিয়েছে নব্বই বছরে।গোয়ান এই পরিবারটি আজও বজায় রেখে চলেছে কলকাতায় হাতে তৈরি কেকের ট্রাডিশন। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার
নিউ মার্কেট থেকে রফি আহমদ কিদওয়াই রোড দিয়ে হেঁটে বাঁদিকে বেঁকে নবাব আবদুর রহমান স্ট্রিট দিয়ে খানিক দূরে অন্ধকার গলিপথ, পুরোনো কোঠা, অলিন্দ, গলি পার হয়ে চোখে পড়বে হলুদ রংয়ের একটা বাড়ি। মার্বেলের প্লেটে লেখা রয়েছে ‘আই. সালদানহা’। জন্মদিনের কেক, বড়োদিনের কেকের পাশাপাশি খ্রিস্টান বিয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কেক। আর সেই কেকে সালদানার জুড়ি মেলা ভার। দেশজোড়া এই কেকের খ্যাতি।
সেই বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলে চোখে পড়বে সালদানহাদের অফিসঘর। যার পাশের ঘরেই বেকারি। যেখানে তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের কেক। শহর কলকাতার বুকে শতাব্দীপ্রাচীন নাহুম’স-এর কেকের পরেই যদি কোনো বেকারি শপের নাম করতে হয়, তা হলেই একবাক্যে নাম আসবে সালদানহার নাম।
একটি বিশেষ কারণে সালদানহার বেকারি শপের নাম ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে আর সেটি হল এর স্থপতি। পুরনো কলকাতায় যখন একের পর এক ব্যবসার মাথা পুরুষ তখন গোয়ার এক নারীর হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল
সালদানহার ব্যবসা- ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়--
বিশ শতকের শুরুর দিকে গোয়া থেকে একটি পরিবার এসে উঠেছিল খাস কলকাতায়। গোয়াতে থাকাকালীন এই পরিবারটি নিয়মিত গানের চর্চা করত। কলকাতায় এসেও তাঁরা গানকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেলেন। গোয়ান এই পরিবারটির মাথা ছিলেন ইগনেশিয়াস সালদানহা।
সেই কনফেকশনারি ব্যবসার সূত্রপাত। প্রথমে ব্যবসা ছোটো করেই শুরু করেছিলেন সালদানহা পরিবার। কিন্তু নিজস্ব রেসিপিতে তাঁদের বানানো কেক বানানো অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
দেখতে দেখতে সালদানহা কেক তৈরিতে নাহুম’স-এর পরেই নিজের নাম লিখিয়ে ফেলল। সালদানহার ব্যবসা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। উইবেলাইনের আমলের ঘরোয়া বেকারি থেকে গড়ে ওঠে সালদানহার কারখানা। সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে বাড়তে থাকে কর্মীদের সংখ্যা। ইগনেশিয়াস-ইউবেলাইনের পর বেকারির হাল ধরেন তাঁদের ছেলে ও ছেলের বউ। ছেলে ডেনজিল ও তাঁর স্ত্রী মোনার পর এখন দোকানের দায়িত্বে আছেন তাঁদের মেয়ে ডেব্রা।
বেকারির কর্মচারী থেকে খরিদ্দার, সকলের কাছেই তিনি "ডেব্রা-- আন্টি" নামে পরিচিত। গোয়ান এই পরিবারটি আজও বজায় রেখে চলেছে কলকাতায় হাতে তৈরি কেকের ট্রাডিশন। ফ্রুট কেক, ওয়ালনাট, চকোলেট কেক, ম্যাকারুন টার্ট, ফ্রেঞ্চ ম্যাকারুন, ক্রিম রোল, থেকে চিকেন প্যাটিস, চিজ স্ট্যস থেকে হাজারো স্যান্ডুইচ, গার্লিক ব্রেডের মত নানান আইটেম নিয়ে সালদানহা হাজির সবসময়।এর পাশাপাশি রয়েছে সুস্বাদু হরেক রকমের ডেজার্ট। চারপাশের হাল ফ্যাশনের ঝাঁ চকচকে কেক-পেস্ট্রি শপের মধ্যে আজও সালদানা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। যেখানে কেকের জন্য নয়, ভিড় হয় নস্টালজিয়ার জন্য।