রথের দিন কেন আমরা জিলাপি আর পাঁপড় ভাজা খাই? তাই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কারণ দুটি খাবর কিন্তু বাংলার বাইরের।
বাঙালির কাছে রথযাত্রা মানেই গরম গরম জিলাপি আর কুড়মুড়ে পাঁপড় ভাজা। কিন্তু ওড়িশার জগন্নাথ মন্দিরে প্রভুর মহাভোগ থেকে এই দুটি খাবার একেবারেই ব্রাত্য। তারপরেও রথের দিন কেন আমরা জিলাপি আর পাঁপড় ভাজা খাই? তাই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কারণ দুটি খাবর কিন্তু বাংলার বাইরের। একটি এসেছে সূদুর আফগানিস্তান থেকে। আর অন্য খাবারটির জন্ম পঞ্জাবে। তারপরেই রথযাত্রার উৎসবের দিন এই দুই খাবার না হলে কেমন যেন দিনটা খালি খালি মনে হয়।
আসুন জেনেনি রথের দিন কেন জিলাপি আর পাঁপড় ভাজা খাওয়া হয়। প্রথম পাতে অবশ্যই মিষ্টি নিয়েই আলোচনা করি। শেষপাতে নয় আলোচনা হবে নোনতা ভাজা নিয়ে।
জিলাপি- ১৫শ শতরেক সংস্কৃত পুঁথিতে জিলাপির কথা রয়েছে। কিন্তু মোগল বাদশাদের রান্নাঘরে রসে ডোবানো এই মিষ্টির পদটি স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। বাঙালিদের কাছে যা জিলাপি অবাঙালিদের কাছে তাই জালিবি। এই খাবরটি আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান, লিবিয়া, মালদ্বীপ , আলজেরিয়াতেও পাওযা যায়। নেপালে জিলাপি বিক্রি হয় জেলি নামে।জিলাপির প্রাচীন বর্ণনা রয়েছে মুহাম্মদ হাসান আল বাগদাদীর লিখিত ত্রয়োদশ শতকের রান্নার বইয়ে। শব্দকোষ হবসন জবসনে বলা হয়েছে আরবের জুলিবিয়া থেকেই এসেছে জিলাবি বা জিলাপি। রশুরাম কৃষ্ণ পোড়ের লেখা ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত ” দ্য নিউ ইন্ডিয়ান অ্যান্টিকুয়ারি ” জার্নাল থেকে যায়, ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বেই সংস্কৃত ভাষায় রচিত ” গুণ্যগুণবোধনী” পুথিতে জিলাপির উল্লেখ আছে। যার অর্থ প্রাচীনকাল থেকেই এই খাবারটি ভারতে পাওয়া যায়। তবে রথের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। কিন্তু বর্ধমানের মহারাজ মহতাবচন্দ্র বাহাদুর তাঁর পাচকদের দিয়ে মানকচুর জালাপি তৈরি করে তা ইফতারের দিন বিলি করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় ছিল মানকচুর জিলাপি। অনেকেই মনে করেন গ্রাম বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মেলা রথের মেলা। সেখানে তৈরি করে গরম গরম বিক্রি হত জিলাপি। আর সেই থেকেই রথের সঙ্গে এই খাবারের গাটছড়া বাধা হয়ে গেছে। কারণ একাধিক বাংলা ছড়ায় জিলাপির উল্লেখ রয়েছে। রামায়নেও এই খাবারের উল্লেখ রয়েছে।
পাঁপড়- এটি মূলত উত্তর ভারত বিশেষ করে পঞ্জাব আর গুজরাতের প্রাচীন খাবারগুলির একটি হল পাঁপড়। তবে রামায়নে এই খাবারের উল্লেখ রয়েছে। ভরদ্বাজ মুণি রামচন্ত্র ও তার অক্ষৌহিনী সেনার জন্য যে বাঙালি ভোজনের আয়োজন করেছিলেন সেখানে পাঁপড়ের কথা উল্লেখ ছিল।
আসলে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে জিলাপি বা পাঁপড়ের যোগ না থাকলেও দুটি খাবারই বাঙালি আপন করে নিয়েছে। বিশেষত এই রথের দিন। এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মনে করা হয় রথের দিন জিলাপি আর পাঁপড় খেতেই হয়। আসল রসেবসে বাঙালি। ভোজন রসিক আমরা পছন্দের খাবার সর্বদা আপন করে নিতে পারে। আর নানান পদ চেখে দেখতেও আমাদের আপত্তি তেমন নেই। আসলে রথের মেলা রাসের মেলা- সর্বত্রই এই খাবার দুটি বিক্রি হয়। মেলার সঙ্গে এদুটি খাবারের যোগ রীতিমত দৃঢ়়।