হেমচন্দ্র যখন স্বামী বিবেকানন্দকে ক্রিকেট খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন সেভাবে তিনি এই খেলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। হেমচন্দ্রের তত্বাবধানে স্বামী বিবেকানন্দ বেশকিছুদিন অনুশীলন করে ক্রিকেট খেলাটা শিখে নেন।
গীতাপাঠের থেকে শারীর শিক্ষা যে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় তা বারবারই বলতেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি মনে করতেন যে একটি জাতি যদি শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী না হয় তা হলে সেই জাতির মাথা তুলে দাঁড়ানো কঠিন। সন্ন্যাস জীবনের বহু আগে নরেন্দ্রনাথ দত্ত যখন স্বামী বিবেকানন্দের নাম ধারণ করেননি তখন তিনি পুরোদস্তুর শারীর শিক্ষা এবং খেলাধূলোয় মেতে থাকতেন। ফুটবল ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। এমনকী, বন্ধু বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের প্রেরণায় ক্রিকেটের ময়দানেও অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বামীজির এমন একটি বোলিং রেকর্ড রয়েছে যা হয়তো প্রথম কোনও ভারতীয় বোলারের যে কোনও ধরনের ক্রিকেটে প্রথম। কারণ, ক্লাব লিগে খেলতে নেমে নরেন্দ্র নাথ দত্ত ওরফে স্বামী বিবেকানন্দ ২০ রান দিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-মোক্ষম চাল নরেন্দ্র মোদীর, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের সামরিক সমঝোতা ভয় বাড়াল পাকিস্তানের
ক্রিকেট ময়দানে স্বামী বিবেকানন্দ খেলতেন টাউন ক্লাবের হয়ে। কলকাতার ময়দানে টাউন ক্লাব এক ঐতিহ্যশালী সংগঠন। ১৮৮৪ সালে আধুবনা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে এই ক্লাবের পত্তন করেছিলেন কাটিয়াদীর মাশুয়া গ্রামের বিখ্যাত রায়-চৌধুরী পরিবারের সন্তান সারদারঞ্জন রায়। যিনি একাধারে গণিতবিদ এবং উপমহাদেশের ক্রিকেটের প্রথম স্বদেশি সংগঠক ছিলেন। সারদারঞ্জন আবার সত্যজিৎ রায়-এর পিতামহ। এই টাউন ক্লাবের শিকড় পরবর্তী সময়ে কলকাতায় উঠিয়ে আনা হয়। টাউন ক্লাবের সঙ্গে জোড় লড়াই হত ব্রিটিশদের হাতে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের। ১৭৯২ সালে ব্রিটিশদের হাতে কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের পত্তন হয়েছিল।
হেমচন্দ্র যখন স্বামী বিবেকানন্দকে ক্রিকেট খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন সেভাবে তিনি এই খেলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। হেমচন্দ্রের তত্বাবধানে স্বামী বিবেকানন্দ বেশকিছুদিন অনুশীলন করে ক্রিকেট খেলাটা শিখে নেন। বোলিং করতে তিনি খুব ভালবাসতেন। যে ম্যাচে স্বামী বিবেকানন্দ ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তা খেলা হয়েছিল ইডেন গার্ডেন্সে। সে সময় ইডেন গার্ডেন্সের বয়স ২০ বছর।
আরও পড়ুন-Delhi Rain: ৭৭ বছরে রেকর্ড বৃষ্টি, দিল্লির রাস্তায় সাঁতার কাটছে শিশুরা
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বল করার সময় উত্তেজনায় টগবগ করে নাকি ফুটছিলেন নরেন্দ্রনাথ ওরফে স্বামীজি। তাঁকে শান্ত করেন বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ। অধিনায়ক হিসাবে পরামর্শ দেন শান্ত থেকে বোলিং-এ মনোনিবেশ করতে। ১৮৮৭ সালে সন্ন্যাস নেন নরেন্দ্রনাথ। সন্ন্যাস জীবনে তাঁর নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ। এই সন্ন্যাস গ্রহণের দুই বছর আগে পর্যন্ত তিনি টাউন ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট এবং ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন।
খেলাধূলা এবং শারীর শিক্ষা নিয়ে অনেকেই অনেক সময় স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলেন। কিন্তু এর অধিকাংশটাই ভুল তথ্যে ভর্তি বলে দাবি করেছেন বিবেকানন্দ-র বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকায় বিশ্ব ধর্ম মহা সম্মেলন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পরে তিনি চেন্নাই যান। সেখানে বেদান্ত ইন ইটস অ্যাপ্লিকেশন টু ইন্ডিয়ান লাইভ বলে একটি শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বিবেকানন্দ। সেখানে তিনি বলেন, '.... আমাদের উপনিষদ যতই বড় হউক, অন্যান্য জাতির সহিত তুলনায় আমাদের পূর্বপুরুষ ঋষিগণ যতই বড় হউন, আমি তোমাদিগকে স্পষ্ট ভাষায় বলিতেছি- আমরা দূর্বল, অতি দূর্বল। প্রথমত আমাদের শারীরিক দৌর্বল্য- এই শারীরিক দৌর্বল্য আমাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশ দুঃখের কারণ। আমরা অলস, আমরা কাজ করতে পারি না, আমরা একসঙ্গে মিলিতে পারিনা, আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি না, আমরা ঘোর স্বার্থপর, আমরা তিনজন একসঙ্গে মিললেই পরস্পরকে ঘৃণা করিয়া থাকি, ... শারীরিক দূর্বলতাই এর প্রধান কারণ। দূর্বল মস্তিষ্ক কিছু করতে পারে না। আমাদিগকে সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে- আমাদের যুবকগণকে প্রথমত সবল হইতে হইবে, ধর্ম পরে আসিবে। হে আমার বন্ধু যুবকগণ তোমরা সবল হও- তোমাদের নিকট ইহাই আমার বক্তব্য। গীতাপাঠ অপেক্ষা তোমরা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরো নিকটবর্তী হইবে। আমাকে অতি সাহসপূর্বক এই কথাগুলো বলিতে হইতেছে। কিন্তু না বলিলেই নয়।' সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে স্বামীজি সবসময় হিন্দুর জাতির মনন এবং এক শক্তিশালী মানব হিসাবে আত্মপ্রকাশের ভাবনাকেই সামনে রেখে এসেছেন। হিন্দু ধর্মের যে মহানুভবতা সেটাকেই তিনি তুলে ধরেছেন। আর সেই কারণে তিনি বারবার শরীর এবং মনন গঠনে জোর দিয়েছেন। ধর্মের থেকেও যাকে উপরে রাখার সাহস দেখিয়েছিলেন স্বামীজি।
আরও পড়ুন- 'সামশেরগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে ঠেকাতে পারবে না কেউই', 'খেলা' বদলের ইঙ্গিত অধীরের
আরও পড়ুন- 'বেকারত্ব ঘরে ঘরে, পিসিমণি হারবে ভবানীপুরে', উপনির্বাচনে নয়া স্লোগান শুভেন্দুর