থাইরয়েড গ্রন্থি বা থাইরয়েড হল অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যার অবস্থান গলায়। পুরুষের এডাম'স এপলের ঠিক নিচে এর অবস্থান। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলো মেটাবলিক রেট ও প্রোটিন সিন্থেসিসকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোনের মধ্যে ট্রাইডোথাইরোনাইন টি-থ্রি ও থাইরক্সিন টি-ফোর আয়োডিন ও টাইরোসিন দ্বারা গঠিত হয়।থাইরয়েড ক্যালসিটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন তৈরি করে যা ক্যালসিয়াম হোমিওস্ট্যাসিসে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
আরও পড়ুন- পরিবেশ রক্ষার নতুন পদক্ষেপ, এনআইটির ছাত্রদের অভাবনীয় আবিষ্কার ভুট্টা দিয়ে তৈরি প্লাস্টিক
থাইরয়েডের সমস্যায় অনেকের মধ্যেই বর্তমানে লক্ষ্য করা যায়। নির্দিষ্টি পরিমানের তুলনায় কম বা বেশি পরিমানে হরমোন নিঃসৃত হলেই শুরু হয় থাইরয়েডের সমস্যা। আমাদের স্বরযন্ত্রের দুই পাশে থাকা একটি বিশেষ গ্রন্থি হল থাইরয়েড। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হলো আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করা। শরীরের জন্য এই থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরের উপর বিভিন্ন রকমের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিসম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিসম। এক নজরে দেখে নেয়া যাক থাইরয়েড হরমোনের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যার লক্ষণগুলি।
থাইরয়েড হরমোনের অভাবে বা হাইপোথাইরয়েডিসমের ফলে গলা ফুলে উঠার সম্ভাবনা থাকে। গলায় হাত দিয়ে অস্বাভাবিক ফোলা কিছু পেলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। এ ছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গলার স্বরের পরিবর্তন হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। থাইরয়েডের অভাবে ঘাম কম হয় এবং ত্বক তার প্রয়োজনীয় আদ্রর্তা পায় না। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে রোগীদের মধ্যে নখ ভাঙ্গার বা নখে ফাটল ধরার প্রবণতাও বেশি।
আরও পড়ুন- পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা, মেনে চলুন এই কৌশলগুলি
থাইরয়েডে আক্রান্তদের হঠাৎ করেই কোনও কারণ ছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই হঠাৎ করে ওজন পরিবর্তিত হয়ে থাকলে থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করানো উচিত। একই ভাবে হঠাৎ করেই বেশ খানিকটা ওজন কমে গেলেও হাইপারথাইরয়েডিসম থাকার সম্ভাবনা থাকে। হাইপো থাইরয়েডিসম হল শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় কম থাইরয়েড হরমোন তৈরি হওয়া। তাই নিয়মিত শরীর অবসন্ন লাগার অন্যতম কারণ হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিসম। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও যদি সকালে অবসন্ন লাগে অথবা সারাদিন ধরে ঝিমুনি আসে তাহলে থাইরয়েড হরমোন ঠিক মতো কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
একইভাবে হাইপোথাইরয়েডিসম হলে অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। সারাক্ষণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা হাইপারথাইরয়েডিসম-এর লক্ষণ হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিসম হল শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি থাইরয়েড হরমোন তৈরী হওয়া। সারাক্ষণ শরীরে অস্থির ভাব এবং বিশ্রামহীন বোধ হলে হাইপারথাইরয়েডিসমের সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো দরকার। থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বা আধিক্য, দুই ক্ষতিকর। তবে সময় মতো সনাক্ত করতে পারলে নির্দিষ্ট মাত্রার অসুধ খেয়ে পুরোপুরি সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই থাইরয়েড হরমোন সমস্যার কোনও লক্ষণ দেখা গেলে তা অবহেলা করে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।