হ্যাঙওভারের আতঙ্কে পান থেকে দূরে থাকেন! সমস্যা সমাধানে রইল কিছু কৌশল

সময় যত এগোচ্ছে ততই পান নিয়ে বহু অহেতুক শঙ্কা এবং আতঙ্ক দূর হচ্ছে। এমনকী আগে পান করাকে বাঁকা চোখে বা তির্যক দৃষ্টিতেই দেখা হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এটা আপাতত প্রমাণিত যে পান করা মানেই বখে যাওয়া নয়। বরং পান করার অভ্যাস ধূমপান বা অন্য মাদকের নেশার মতো ক্ষতিকর নয়। একটু আধটু পানের অভ্যাস বরং মানুষকে অনেকটা রিল্যাক্স রাখতে এবং মন ও শরীরের পক্ষেও সাহায্যকর। তবে, হ্যাঙওভারের ভয়ে অনেকেই পান করতে চান না। এখানে রইল হ্যাঙওভার কাটানোর কিছু কৌশল। 

হ্যাঙ-ওভারের ভয়ে অনেকেই পান থেকে দূরে থাকতে চান। বিশেষ করে পানের পরের দিনটা যদি অফিসের জন্য হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ-তাহলে তো কথাই নেই। এমনকী হ্যাঙওভার নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা বলেন তা যদি শুনে চলতে হয় তাহলে পান-এর প্রতি ভালোবাসাটা ত্যাগ করতে হবে। এমনকী এই সব পরামর্শ যদি জীবনে মানতে হয় তাহলে হলফ করে বলাই যায় যে যতদিন আপনার কর্মজীবন থাকবে ততদিন আর পানের কথাটা ভুলে থাকলেই ভালো। হ্যাঙওভারের সমস্যাকে অধিকাংশ মহিলাই খুবই গুরুত্ব সহকারে বিচার করেন। তবে, পানের মধ্যে একটা কৌশল রয়েছে, আর সেই কৌশল অবলম্বন করলে হ্যাঙওভারের সমস্যা অনেকটাই কমানো যেতে পারে। এই কৌশলের নাম মডারেশন বা পানীয়তে অ্যালকোহলের পরিমাণ কমানো। 

পানের আগে এই জিনিসগুলো মনে রাখুন
-------------------------------------------------------- 
আগে পেট ভরে খেয়ে নিন। খাবার খাওয়ার পর অন্তত ১ ঘণ্টা বিরাম দিতে হবে পেটকে। নিয়ম বলছে খাবার খাওয়ার অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে পান শুরু করাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। আর সেই সঙ্গে পেটে আগে থেকে খাবার থাকায় অ্যালকোহল শরীরের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সাধারণত খালি পেটে পান করলে যেটা হয়, তা হল, পানীর মধ্যে থাকা অ্যালকোহল পেটের ভিতরের গিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র বা ইনটেস্টাইন-এর উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং রক্তের সঙ্গে অ্যালকোহলকে দ্রুত মিশে যেতে সাহায্য করে। যার জেরে মাথার মেনব্রেমে খুব দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে অ্যালোকোহল। কিন্তু, পানের কিছুক্ষণ আগে পেটে পুরে খেয়ে নিলে খাবারের কণা রক্তের সঙ্গে মিশে থাকায় অ্যালকোহলের প্রভাব বিস্তারের জায়গাটা অনেকটা কমে যায়। ফলে শরীরের উপরে অ্যালোকোহলের প্রভাব কমলে হ্যাঙওভারের সমস্যাও অনেকটা কমে যায়। 

চিকিৎসকদের মতে পানের কিছুক্ষণ আগে বা পানের সময় এমন কিছু খাবার খেতে হবে যা রক্তের মধ্যে নিজের আধিপত্য বেশি করে বিস্তার করে থাকে। যেমন- রেড মিট জাতীয় কিছু খাওয়া অথবা মাশরুম, অ্যাভোকাডোর স্লাইস, চিংড়ি মাছ জাতীয় কিছু, এমনকিছু শস্যদানা যাতে পর্যাপ্ত পরিণামে জিংঙ্ক, নিকোটিনিক অ্যাসিড রয়েছে। ২০১৯ সালে একটি গবেষণাপত্রে এই খাবারগুলোকে হ্যাঙওভার প্রতিরোধকারী বলেও চিহ্নিত করা হয়েছিল। জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল মেডিসিন-এ এই গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছিল। 

Latest Videos

বহু চিকিৎসক আবার পানের আগে ঘাম ঝরানোর মতো কোনও ধরনের ফিজিক্যাল এক্সোর্শন থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন। অনেককেই দেখা যায় পান করার আগে খুব করে জিমে ঘাম ঝরাতে। চিকিৎসকদের মতে, ঘাম ঝরানো মানে শরীরের এক্সটা ক্যালোরি বার্ন করা এবং শরীরের মধ্যে এনার্জির চাহিদাকে বৃদ্ধি করা। কিন্তু, পান করা মানে নিজেকে আরামে রাখা এবং রিল্যাক্স করা। এই দুটো মুড ভিন্ন। একে অপরের বিরুদ্ধবাদী। ফলে যেটা হয় যে জিম করে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে যদি কেউ কড়া পানীয়তে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় তাহলে তাঁর শরীরে অ্যালকোহন দ্রুত প্রভাব বিস্তার করবে। এতে ওই মানুষটি কিছুক্ষণের মধ্যে যেমন নিজের স্বাভাবিক জ্ঞানশক্তি হারাবেন, তেমনি ২৪ ঘণ্টার জন্য হ্যাঙওভার-এর সমস্যা চালু থাকাটাও নিশ্চিত করে ফেলেন। তাই পানের পরিকল্পনা থাকলে অন্তত শরীরকে একটু বিশ্রামে রাখুন। বিশেষ করে পানের অন্তত ঘণ্টা দুয়েক আগে শরীরে মাত্রারিক্ত ঘাম ঝরানো কোনও কসরত না করলেই ভালো।  

পান-এর সময় যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে
---------------------------------------------------------------- 
যদি হ্যাঙওভারের সমস্যা থেকে বাঁচতে চান তাহলে যতটা পারুন পানীয়তে জল মেশান। এর ফলে পানীয়তে অ্যালকোহলের পরিমাণ কমে যাবে এবং তা লাইট ড্রিঙ্ক হয়ে যাবে। এছাড়াও, কোনও মকটেলর মধ্যে অ্যালোকহলযুক্ত পানীয়কে মিশিয়ে নিতে পারেন। এতেও অ্যালকোহলের পরিমাণ কমে যাবে। অনেক চিকিৎসক বলেন যে যারা হ্যাঙওভারকে ভয় পান তারা হলকা একটা পেগ নেওয়ার পরে অন্য কোনও অ্যালকোহলহীনপানীয় নিন। এতে শরীরে অ্যালকোহলের পরিমাণ কমে যাবে। আর সেই সঙ্গে যেটুকু অ্যালকোহল শরীরে যাবে তা শরীরের সঙ্গে সামাঞ্জস্য তৈরি করতে খানিকটা সময় পাবে। 

বাইরে গিয়ে পান করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হুঁশ থাকে না। তাই ভালো হয় যদি সঙ্গে থাকা সঙ্গীকে বলেন পেগের হিসাবটা রাখতে। চিকিৎসকরা বলেন ৩ পেগের বেশি কোনওভাবেই পান করা উচিত নয়।  অনেকেই তিন পেগ থেকে এমন একটা নেশার মধ্যে চলে যান যে তখন মনে পাঁচ-ছয় পেগ-ও ছোট বলে মনে হয়। এমনটা করবেন না। এতে সমস্যা বাড়বে। অথবা ফোনের মধ্যে পেগ হিসাব করার অ্যাপ রাখুন। যখন প্রথম পেগ নেবেন তখন অ্যাপটাকে চালু করে দিন। চিকিৎসকরা এটাও বলেন যে পার্টিতে বিয়ার, ওয়াইন বা মিক্সড ড্রিংক অর্ডার করুন। কোনওভাবেই শটর্স নেবেন না। অর্গানিক ওয়াইন হ্যাঙওভার কম করে, তাই প্রিজার্ভেটিভ দেওয়া ওয়াইন-এর থেকে এই ওয়াইন ট্রাই করতে পারেন। ড্রিংকের মধ্যে কোকোনাট ওয়াটার মিক্স করে পান করলেও হ্যাঙওভার কম হয়। 
হ্যাঙওভারের আরও একটা কারণ পান করার সময় ধূমপান। পারলে এটা এড়িয়ে চলুন। পারলে ক্লিয়ার ড্রিংক বাছুন- যেমন ভোদকা, জিন। এগুলো পান করলে কম হ্যাঙওভার হয়। সেই তুলনায় রাম বা হুইস্কি পানে হ্যাঙওভার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে, একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভোদকা ও জিন বেশি পান করলেও হ্যাঙওভার হতে পারে। আর পান করার পর অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন। একে কোভিড ১৯ অতিমারির একটা শঙ্কা। তারমধ্যে পার্টিতে কোনওভাবে সর্দি-কার্শি-র মতো ফ্লু-সংক্রমণের আওতায় চলে আসেন তাহলে হাতের মাধ্যমে তা শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ড্রিংক নেওয়ার পর যদি ফ্লু-তে আক্রান্ত হন তাহলে হ্যাঙওভারের অসুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই নিজেকে নিরাপদ রাখতে পান সম্পন্ন করার পর ভালো করে হাত ও মুখ ধুয়ে নিন। 

পান-এর পর ঘুমোতে যাওয়ার আগে কী কী করবেন
----------------------------------------------------------------------  
পান করার পর ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঢক-ঢক করে জল খেয়ে নেওয়াটা হ্যাঙওভারের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকে বলেন শরীরে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গেলে বেশি করে জল খেয়ে নেওয়াটা দরকার। এতে শরীরের ডি-হাইড্রেশন কম হয়। এটা কাজে লাগে তখন যখন পানের পর বেশ কয়েক ঘণ্টা আপনি জেগে রয়েছেন। কিন্তু পান করার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমোতে যান তাহলে অতিরিক্ত জল খেলে ঘুমের মধ্যে থেকে উঠে বারবার বাথরুমে যেতে হতে পারে। এতে শরীরের উপর চাপ বাড়ে এবং সাউন্ড সিল্প বা ভালো ঘুম বলতে যেটা বোঝায় সেটা হয় না। ফলে ক্লান্তি থেকে হ্যাঙওভারের মাত্রা চড়তে পারে। পাশাপাশি একটা জিনিস মাথায় রাখবেন পানের পর যদি রাত করে ঘুমোতে যান তাহলে স্লিপিং মাস্ক ব্যবহার করুন। কারেন্ট ড্রাগ অ্য়াবিউজ-এর একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ঠিকমতো ঘুম না হলে তাহলে হ্য়াঙওভারের মাত্রা মারাত্মকরকমের বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকী অ্যালকোহলিজম- ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ -এর গবেষণাপত্রেও বলা হয়েছে যে পানের পর রাতে দেরি করে ঘুমোতে গেলে ঘুমের দ্বিতীয়ভাগ নিরুপদ্রব হয় না। কারণ, সূর্যের আলো চোখে পড়লে মস্তিস্কের সেলগুলো সজাগ হয়ে ওঠে এবং ঘুমের টাইম ক্লককে বিরত করতে উদ্যত হয়। তাই পানের পর লেট নাইট স্লিপিং-এর জন্য স্লিপিং মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আরও পরামর্শ যে পানের সময় এমন কোনও খাবার খাবেন না যা আপনার শরীরে অ্যাসিডিটি বা বদহজম অথবা চোয়া ঢেকুরের মতো প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে। এমনটা হলে হ্যাঙওভারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পানের সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে হাইড্রেশন সাবস্টেন্স প্রচুর মাত্রায় রয়েছে অথবা এমন কোনও ফল বা স্যালাড যাতে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়াও শরীরের জলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে প্রচুর মাত্রায় জুস বা স্মুথিও নেওয়া যেতে পারে। 

পানের পর ঘুম আর তারপরের প্রথম সকাল
---------------------------------------------------------- 
পানের পর ঘুম থেকে উঠে মানুষ যে সমস্যায় পড়ে তা হল বাথরুম না হওয়া। কারণ অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেড করে দেয় এবং অ্যান্টিডায়ুরেটিক হরমোনকে প্রভাবিত করে, এই হরমোন মূলত প্রস্রাব না হওয়ার প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে। এর জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হাতের কাছে এমন কিছু স্পোর্টস ড্রিঙ্ক রাখুন যা পান করলে বাথরুমের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ঘুম থেকে উঠে ঘন ঘন প্রস্রাব হ্যাঙওভারের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্রেকফ্রাস্টের টেবিলে এই খাবারগুলো রাখার চেষ্টা করুন। যেমন- চিজ দেওয়া ডিমের ওমলেট, এর সঙ্গে একটু পালং শাক সিদ্ধ, একটু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, এক গ্লাস কমলালেবু অথবা মৌসম্বী অথবা মাল্টা-র জুস। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রচুর পরিমাণে এন-অ্যাসিটিল সিস্টেআইন বা এনএসি থাকে। যা শরীরে থাকা অ্যালকোহলকে পাতলা করে দিতে সাহায্য করে। পালং শাক হল আলফা লিপোইক অ্যাসিড বা এএলএ-এর একটা ভরসাযোগ্য উৎপাদকস্থল। যা অ্যালকোহলকে শারীর জুড়ে ছড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। একই কাজ করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। এছাড়া লেবুর জুসে থাকে প্রচুর মাত্রায় বি ১ ভিটামিন। এটা অ্যালোকহলের প্রভাবে ধীরে চলা মস্তিস্ককে সজাগ করে তোলে এবং শরীরে এনার্জি ফেরাতে সাহায্য করে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে পানের পর প্রথম সকালের ব্রেকফাস্টের খাবার যেন আপনার নতুন কোনও এক্সপেরিমেন্ট বা খাদ্য রসিকের স্বাদের স্বর্গ না হয়। এতে হ্যাঙওভারের সমস্যা বাড়তে পারে। আর অবশ্যই মাথায় রাখবেন কোনওভাবেই পান-এর পর ঘুম থেকে উঠে হার্বাল টি নেবেন না। এতে হ্যাঙওভারের সমস্যা আরও বাড়তে পারে। 

আরও পড়ুন- অতিরিক্ত তেল-মশলা যুক্ত খাবার খেয়ে শরীর অস্থির লাগছে, রাতে ঘুমানোর আগে খান এই বিশেষ পানীয় 
আরও পড়ুন- শরীর ঠান্ডা থেকে ওজন কমানো-ছাতুর এই গুণগুলো জানতে অবাক হবেন 
আরও পড়ুন- ফ্রিজের নয়-মাটির পাত্রের জল খেয়ে দেখুন, এইসব রোগ কাছে ঘেঁষবে না 

"

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
‘Bangladesh-কে মারতে হবে না চোখ দেখালেই যথেষ্ঠ’ বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Dilip Ghosh | Bangladesh News