একজন বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী যখন তার গর্ভে অন্য আরেক দম্পতির সন্তান ধারণ করে এবং তাকে প্রসব করেন তখন সেই পদ্ধতিকে মূলত সারোগেসি পদ্ধতি বলা হয়।
মা (Mother) শব্দ শোনার জন্য অপেক্ষা করেন প্রত্যেক মহিলা। এই শব্দ পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কয়েকটি শব্দের মধ্যে একটি। কিন্তু অনেক সময়েই নানা কারণে সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত হন বহু দম্পতি (Couple)। কেউ কেউ শারীরিক সমস্যা (Physical Problems) ও প্রতিবন্ধকতার কারণে সন্তান ধারণে অক্ষম হন। সারোগেসি (Surrogacy) তাদের জন্য আশীর্বাদ। সারোগেসি মূলত সন্তান ধারণ করার একটি বিকল্প পদ্ধতি বা মেডিকেল সায়েন্সের একটি বিশেষ উপায়। একজন বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী যখন তার গর্ভে অন্য আরেক দম্পতির সন্তান ধারণ করে এবং তাকে প্রসব করেন তখন সেই পদ্ধতিকে মূলত সারোগেসি পদ্ধতি বলা হয়।
সারোগেসির এই পদ্ধতি বেশ সময় সাপেক্ষ। সারোগেসি পদ্ধতিতে মূলত একজন দম্পতি যখন তার সন্তান ধারণ করার জন্য সারোগেট মাদারকে পছন্দ করেন এবং সারোগেসি পদ্ধতিতে যাবতীয় রুলস রেগুলেশন মেনে নিয়ে বাবা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন দম্পতি পুরুষের শুক্রাণু এবং নারীর ডিম্বানু আলাদাভাবে করে সংগ্রহ করে বাইরের নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এর মাধ্যমেই যখন সারোগেট মাদার এর গর্ভে তা স্থাপন করা হয় তখন সেই পদ্ধতিকে সারোগেসি পদ্ধতি হিসাবে আমরা উল্লেখ করি।
সারোগেসি মানে কী?
সারোগেসি মানে বা সারোগেসি পদ্ধতি মূলত একজন নারী বা মহিলার গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণ করার পদ্ধতিকে বলা হয়। যেখানে যে মহিলা সন্তান ধারণ করেন তাকে সারোগেট মাদার বলা হয় বা সারোগেট মা সম্বোধন করা হয় আর যাদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন এর সন্তান সৃষ্টি হয় তারা বৈধ মা ও বাবা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
কখন সারোগেসি করা যায়
১) যখন কোনো দম্পতি বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও সন্তান ধারণ করতে বা প্রেগনেন্সি টেস্টে পজিটিভ আসতে ব্যর্থ হন তখন তারা সারোগেসির সাহায্য নেয়
২) যখন কোন মহিলার ঋতুস্রাব বা মাসিক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় তখন বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে আইবিএ করতে তিনি ব্যর্থ হন তাহলে সারোগেসি পদ্ধতির মাধ্যমে সারোগেট মাদার এর সাহায্য নিয়ে সন্তান ধারণ করতে পারেন।
৩) যখন ইনফার্টিলিটি এক্সপার্ট ডক্টর চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে দেখেন যে কোন নারী তার সন্তান ধারণ বা গর্ভধারণ করতে অক্ষম হন এবং বারবার আইভিএফ চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তখন সারোগেট মাদার এর মাধ্যমে সারোগেসি করতে বলেন।
৪) যখন কোনো নারীর জরায়ুতে বিশেষ সমস্যা দেখা দেয় টিউমারের জন্য বা অন্য কোন ওভারি সিস্ট এর জন্য জরায়ু বাদ দিতে হয় জরায়ু সন্তান ধারনে যদি অক্ষম হয় তখন সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
৫ ) যখন কোনো নারী গর্ভধারণকালীন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সম্মুখীন হতে অপ্রস্তুত এবং গর্ভধারণ কালীন বিভিন্ন কষ্ট ও যন্ত্রণা নিতে আগ্রহী হন না তখন সারোগেট মাদার এর মাধ্যমে এবং সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করে মা হওয়ার চেষ্টা করেন।
উপরোক্ত কারণগুলোর যেকোনো একটি হলে বা কোন বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হলে দম্পতিরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ গাইনী বিশেষজ্ঞ আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় সারোগেসি পদ্ধতিতে পিতা-মাতা হওয়ার সুযোগ নিতে পারেন।
সারোগেসির খরচ কেমন?
আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে ভারতের খরচ আনুমানিক ৬০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা। এছাড়াও সারোগেসি পদ্ধতিতে সারোগেট মাদারকে যদি আর্থিক অনুদান বা সাহায্যের জন্য কিছু দিতে হয় সেটি অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় টাকায় এক লক্ষ থেকে কুড়ি লক্ষ কাছাকাছি খরচ হয়। যদিও সারোগেসি পদ্ধতির খরচ আইভিএফ পদ্ধতি খরচ সমকক্ষ কিন্তু সারোগেসি পদ্ধতিতে গর্ভ ভাড়া নেওয়া হয় তাই সারোগেট মাদার ভরণপোষণ ও তার যত্ন পৌষ্টিক আহারের ব্যবস্থা করা ও তা গর্ভধারণ কালীন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থা করার জন্য খরচের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।