পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির মানব কম্পিউটার খ্যাত শকুন্তলা দেবীকে হার মানালেন হায়দরাবাদের নীলকান্ত ভানু প্রকাশ। সেই সঙ্গে ইতিহাস গড়লেন বছর কুড়ির এই যুবক। মেন্টাল ক্যালকুলেটর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অ্যাট মাইন্ড স্পোর্টস অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল জিতেছেন ভানু প্রকাশ।
ভারতের হয়ে মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম সোনা জেতা এই তরুণকে ‘বিশ্বের দ্রুততম মানব ক্যালকুলেটর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। লিমকা বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডসের খাতায় ইতিমধ্যে নাম লিখিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতির মানব কম্পিউটার হায়দরাবাদের নীলাকান্ত ভানু প্রকাশ।ক্যালকুলেটারের চেয়ে দ্রুতগতিতে গণনা করতে পারেন ভানু প্রকাশ। এর জের ধরেই এমএসওতে,বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বড় সম্মান যা লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ভারতের হয়ে প্রথম গোল্ড মেডেল জিতেছেন তিনি।
করোনার জন্য এ বছর ভার্চুয়ালভাবে এমএসও অনুষ্ঠিত হয় । চলতি বছর ভারতের স্বাধীনতার দিন ১৫ আগস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় মাইন্ড স্পোর্টস অলিম্পিয়াড। ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, লেবানন, গ্রিস-সহ বিশ্বের ১৩টি দেশের ৩০ জন প্রতিযোগী এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন। সেই প্রতিযোগিতাতেই মেন্টাল ক্যালকুলেশন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ৬৫ পয়েন্ট পেয়ে সোনা জিতে নেন নীলকণ্ঠ।
এবারে অনুষ্ঠিত অনলাইন ইভেন্টে ভারতের মোট দুই প্রতিযোগী পদক পেয়েছেন। নীলকান্তর পাশাপাশি জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ব্রোঞ্জ জিতেছেন আরিয়ান শুক্ল।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন কলেজে গণিতে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন নীলকণ্ঠ। ইতিমধ্যে তাঁর দখলে রয়েছে চারটি বিশ্ব রেকর্ড এবং ৫০টি লিমকা রেকর্ড। বিশ্বের ‘দ্রুততম মানব ক্যালকুলেটর’-এর তকমা পেয়ে ভানু বলেন, “ক্যালকুলেটরের থেকে আমার মস্তিষ্ক দ্রুত হিসেব করতে পারে। এক সময় শকুন্তলা দেবী এবং স্কট ফ্ল্যান্সবার্গের এই রেকর্ড ছিল। তাঁদের রেকর্ড ভাঙতে পেরে আমি আনন্দিত। এটা দেশের জন্যও একটা গর্ব।”
বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা হায়দরাবাদী যুবক আরোও বলেন, “বিশ্ব গণিতে ভারতকে একটা বিশেষ স্থান দিতে পারাটা কম গর্বের বিষয় নয়। সেটা করতে পেরেছি। এই প্রথম এমএসও-তে ভারত সোনা পেল।” এমএসও হল মেন্টাল স্কিল এবং মাইন্ড স্পোর্টস-এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। প্রতি বছর লন্ডনে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতাকে অলিম্পিকের সমতুল্য ধরা হয়।
নীলকান্ত জানিয়েছেন, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি মাথায় মারাত্মক চোট পান। এর ফলে তাঁকে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকতে হয়। এরপর নিজেকে সুস্থ এবং মানসিকভাবে তরতাজা রাখার জন্য তিনি মেন্টাল ম্যাথ ক্যালকুলেশন শুরু করেন। সেই শুরু। এরপর তিনি অঙ্কের প্রেমে পড়ে যান। এর ফলেই দুর্দান্ত সাফল্য এল। বিভিন্ন বয়সের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াই করে তবেই তাঁকে এই প্রতিযোগিতায় সোনা জিততে হয়েছে। বছর কুড়ির এই যুবক অঙ্কভীতি দূর করতে বলেন, ‘ভারতে সরকারি স্কুলে যে পড়ুয়ারা পড়ে, তাদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনেরই অঙ্ক বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে। অঙ্কভীতি এবং হতাশ হয়ে পড়ার কারণেই অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। আমি এটা দূর করতে চাই। ম্যাথ ল্যাব তৈরি করাই আমার লক্ষ্য।’
নীলাকান্ত ভানু প্রকাশ এখন ভিশন ম্যাথ ল্যাব তৈরির কথা ভাবছেন যার ফলে লাখো শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। সাক্ষরতা যেমন কোন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সবার ম্যাথ ফোবিয়াকে দূর করতে চান ভানু। এর জের ধরেই বাচ্চাদের মধ্যে গণনার পরিমাণ চান ভানু। এতে করে সবার মধ্যে গণিত ফোবিয়া দূর হবে বলে আশাবাদী এই মানব কম্পিউটার। ভানুর আগে এই রেকর্ড গড়ে তুলেছিলেন স্টক ফ্ল্যান্সবার্গ ও শকুন্তলা দেবী।