ফের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মর্মান্তিক পরিণতি, ৪ দিন পর ট্রেনের শৌচালয় থেকে উদ্ধার পচাগলা দেহ

  • যোগীরাজ্যে ফের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু
  • ট্রেনের শৌচালয় থেকে এবার উদ্ধার হল দেহ
  • ৪ দিন ধরে দেহ পড়ে থাকলেও এল না কারও নজরে
  • একের পর এক শ্রমিকের মৃত্যুতে রেলের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

Asianet News Bangla | Published : May 29, 2020 12:09 PM IST / Updated: May 29 2020, 05:43 PM IST

কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিহারের মুজাফ্ফরপুর স্টেশনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল প্ল্যাটফর্মে নিঃসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে মা, আর অবুঝ শিশু তাঁকে জাগানোর চেষ্টা করছে। এই মর্মান্তিক ভিডিও কঠিন হৃদয়ের মানুষের মানুষের চোখেও জল এনে দিয়েছিল। এদেশের পরিযায়ী শ্রমিকরা যে কতটা দুর্দশার মধ্যে রয়েছে তা ফুটে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এইসব ভিডিও ও ছবির মধ্যে। তেমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এল উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেনের শৌচালয় থেকে এবার উদ্ধার হল এক পরিযায়ী শ্রমিকের পচাগলা দেহ।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। প্রথমের দিকে ট্রেন না চলায়  কাজ হারান মানুষগুলো হাজার হাজার মাইল দূরে বাড়ি ফিরতে পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছিলেন। তবে অনেকেরই আর বাড়ি ফেরা হয়নি। পথদুর্ঘটনার শিকার হয়ে রাস্তাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে সফর। গত পয়লা মে থেকে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ীদের বাড়ি ফেরাতে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছে ভারতীয় রেল। কিন্তু তাতেও চরম অব্যবস্থার চিত্র প্রায় প্রতিদিনই উঠে আসছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন যাত্রার বিভীষিকা যেন শেষ হতেই চাইছে না।

আরও পড়ুন: পুলওয়ামায় বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ির মালিক হিজবুল জঙ্গি, হামলার পরিকল্পনা করেছিল মাসুদ আজহারের ভাগ্নে 

উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি রেল স্টেশনে একটি ট্রেনের শৌচাগার থেকে এবার মিলল ৩৮ বছরের এক পরিযায়ী শ্রমিকের নিথর দেহ। মনে করা হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরেই দেহটি ওখানে পড়েছিল। রেলকর্মীরা ট্রেনটিকে জীবাণুমুক্ত করার সময়ই দেহটি দেখতে পান। 

 

 

মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিক উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলার বাসিন্দা বলে জানা যাচ্ছে, তাঁর নাম মোহনলাল শর্মা। মোহনলাল মুম্বইয়ে দৈনিক মজুর হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউন পরবর্তী সময়ে দেশের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের মতোই তিনিও কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিলেন। 

জানা যাচ্ছে গত ২৩ মে মোহনলাল আরও অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে  ঝাঁসি পৌঁছন।  তারপর বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলেন। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের গোরক্ষপুর স্টেশনে পাঠানো হয়। সেই ট্রেনেই সম্ভবত চড়েছিলেন তিনি। সেটি রাউন্ড ট্রিপ করে ঝাঁসি ফিরলে রেলকর্মীরা দেহ উদ্ধার করেন।

আরও পড়ুন:ফের সংসদে করোনার থাবা, এবার সিল করে দেওয়া হল অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের অফিস

গোরক্ষপুর থেকে ৭০ কিমি দূরে বস্তি জেলায় ছিল মোহনলাল শর্মার বাড়ি। তবে এটি এখনও পরিষ্কার নয় যে, ট্রেনটি গোরক্ষপুর পর্যন্তই গিয়েছিল, নাকি পরে সেটিকে বিহারে পাঠানো হয় সেখানকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে। এবিষয়ে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। ট্রেনটি শেষ পর্যন্ত ঝাঁসিতে ফিরে আসে বুধবার। আর তারপরই বৃহস্পতিবার রেলকর্মীরা সাফাইয়ের সময় চমকে ওঠেন শৌচাগারের মধ্যে মোহনলালের নিথর দেহ দেখে।

পুলিশ জানিয়েছে, ময়না তদন্তের পরে মোহনলালের দেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাঁর পরিবার পরিজনের কাছে। তবে তার আগে তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। এদিকে মোহনলালের আত্মীয় কানহাইয়া লাল শর্মা জানাচ্ছেন, ‘‘ঝাঁসি পুলিশ গ্রামের মুখিয়াকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি মোহনলালের সঙ্গে ২৮,০০০ টাকা ছিল। সেই সঙ্গে সাবান ও কিছু বইও ছিল। কাজ না থাকায় বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিলেন তিন‌ি। পুলিশ আমাদের ওঁর দেহ নিয়ে যেতে বলেছেন।''

এদিকে গত কয়েকদিনে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে একাধিক যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। প্রচণ্ড গরম, ক্ষিদে এবং ডিহাইড্রেশনের কারণেই ওই শ্রমিকদের মৃত্য হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রেলের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। যদিও রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, মৃতরা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন।

 

Share this article
click me!