অমৃত কুমার আর মহম্মদ ইয়াকুব- দুই অভিবাসী শ্রমিকের ছবি ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক জনকে কোলে নিয়ে বসে আছে অন্যজন। বছর ২৩-এর দুই অভিবাসী শ্রমিক গুজরাতের দুটি আলাদা আলাদা সুতোর কলে কাজ করত। দুজনের বাড়ি উত্তর প্রদেশের বাস্তি এলাকায়। তাই তারা একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। কিন্তু ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা লকডাউনে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে দিয়ে কাটছিল তাঁদের। খাবার প্রায় জোটেইনি। দিনে দিনে বাড়ছিল সংকট।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য গুজরাতে কর্মরত উত্তর প্রদেশের বাকি প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁরা। একটি ট্রাক ভাড়া করেছিলেন। সেই ট্রাকে করেই কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঝরাস্তায় অমৃত অসুস্থ হয়ে পড়ায় সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
মহম্মদ ইয়াকুব বলেন ক্রমেই জ্বর বাড়ছিল অমৃতের। এই অবস্থায় তিনি ট্রাক থামাতে বলেন। সহযাত্রীদের কাছে বন্ধুর চিকিৎসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। তাঁর অনুরোধে ট্রাক থামলেও অমৃতের জন্য চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না সহযাত্রীরা। এই অবস্থায় তীব্র জ্বরে আচ্ছন্ন অমৃতকে নিয়ে ট্রাক থেকে নেমে পড়েন মহম্মদ ইয়াকুব। মধ্যপ্রদেশের কোলারাস এলাকায় রাস্তার ধারেই বন্ধুকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন তিনি। সঙ্গে দুজনের দুটি জামা কাপড়ের ব্যাগ আর আধ বোতল বোতল সঙ্গে ছিল। মাঝে মাঝেই নিজের রুমাল জলে ভিজিয়ে অমৃতের মুখে বুলিয়ে দিচ্ছিলেন সায়ুব। জ্বর কমানোর চেষ্টা করে চলেছিলেন তিনি। পথ চলতি কোনও মানুষই তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরই যোগাড় হয় একটি অ্যাম্বলেন্স। কিন্তু তখনও বন্ধুকে একা একা হাসপাতালের পথে ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন না তিনি। অ্যাম্বলেন্সেও সঙ্গে যান সায়ুব। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় অমৃতের।
অ্যাম্বলেন্সে যাওয়ার পথে এক অ্যাম্বলেন্সের চালক ও বাকিদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি ওকে ছেড়ে কিছুতেই যাব না। আবার ভয় লাগছে না। শুধু প্রার্থনা করছি ও (অমৃত) যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। ওকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি যাব। তিনি আরও বলেন বাড়িতে আমার মাম্মি পাপা যেমন অপেক্ষা করে আছে তেমনি অপেক্ষা করে রয়েছে ওর বাবা মাও। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত অমৃতকে নিজে যত্ন করে গাড়িতেও তোলেন ইয়াকুব।
আরও পড়ুনঃ মাইলের পর মাইল হেঁটেই চলেছেন 'ওঁরা', তৃতীয় দফার লকডাউনের শেষ দিনেও ছবিটা একই ...
অমৃতের চিকিৎসা চলছিল মধ্য প্রদেশের শিবপুরি জেলা হাসপালে। তাঁর শরীরে জলের অভাব দেখা দিয়েছে। কমে গেছে চিনির মাত্রাও। হিট স্টোক হয়েছে বলেই প্রাথমিক অনুমান চিকিৎসকদের। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল কি না তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে। ইয়াকুব জানিয়েছেন পরিবারের একমাত্র ছিল রোজগেরে তাঁর বন্ধু। তাই লকডাউন শুরু হওয়া থেকেই প্রবল চিন্তায় দিন কাটছিল। তাঁরা বাড়ি ফিরতে নিজেদের উপার্জনের প্রায় ৪ হাজার টাকা করে প্রত্যেকে ট্রাকের ভাড়া হিসেবে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আর ট্রাকে কোনও বসার জায়গা ছিল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়েছিল।