আদিত্য নারায়ণ পাত্র নামে ২১ বছর বয়সী ডাক্তারি পড়ুয়া সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, "বুধবার যখন খারকিভ থেকে আমরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তখন ঠিক আমাদের সামনে রাশিয়ার একটি বোমা এসে পড়েছিল। আমাদের থেকে বোমার দূরত্ব ছিল ১০০ মিটার।"
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আজ অষ্টম দিনে পা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই খারকিভ দখল করেছে রুশ সেনা। একের পর এক মিসাইল ছুড়ছে তারা। আর তার জেরে কেঁপে উঠছে শহরের বহুতলগুলি। এই পরিস্থিতির মধ্যে সবথেকে খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন একাধিক ভারতীয়। কারণ ইতিমধ্যেই সবাইকে খারকিভ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ইউক্রেন সেনার তরফে। কারণ সেখানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই কোনও উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটেই শহর ছাড়ার চেষ্টা করছেন ভারতীয় ছাত্ররা।
আদিত্য নারায়ণ পাত্র নামে ২১ বছর বয়সী ডাক্তারি পড়ুয়া সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, "বুধবার যখন খারকিভ থেকে আমরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তখন ঠিক আমাদের সামনে রাশিয়ার একটি বোমা এসে পড়েছিল। আমাদের থেকে বোমার দূরত্ব ছিল ১০০ মিটার।" সংবাদ সংস্থাকে এই পরিস্থিতির কথা জানানোর সময় কেঁপে উঠছিল তাঁর গলা।
যতই দিন যাচ্ছে ইউক্রেনে ততই খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। চলতি সপ্তাহেই সেখানে রুশ সেনার মিসাইল হামলার জেরে এক ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। এরপর শারীরিক অসুস্থতার জেরে গতকাল আরও এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে সেখানে। এই ঘটনাগুলির পর থেকে ভারতীয়দের মনে আরও বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মস্কোর তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে অবিলম্বে মানবিক করিডোর তৈরি করে সেখান থেকে ভারতীয়দের পালাতে সাহায্য করা হবে। তবে ভারতীয়দের পালানোর ক্ষেত্রে রাশিয়া কোনও সাহায্য করছে কিনা সেই বিষয়টি এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেনের সেনারা সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন ওই পড়ুয়া।
আরও পড়ুন- রাশিয়ান মহাকাশযান থেকে মুছে গেল আমেরিকা-জাপান-ব্রিটেনের পতাকা, রইল ভারতের তেরঙা পতাকা
আদিত্য বলেন, "পালানোর সময় বেশ কিছু ভারতীয় ছাত্র হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে ইউক্রেন সেনা। দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার বলতে থাকে তারা। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ ছিল কিন্তু প্রাণের কথা চিন্তা করে আমরা কোনও দিকে না তাকিয়ে শুধু হাঁটছিলাম।" তবে এই মুহূর্তে তাঁরা সবাই নিরাপদ স্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছন ওই পড়ুয়া। অবশ্য এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনে আর কতজন ভারতীয় আটকে রয়েছেন সেই বিশয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি।
খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির হোস্টেলের একটি বাঙ্কারে ৬ দিন কাটান আদিত্য-সহ একাধিক পড়ুয়া। বুধবার ভোরের দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন প্রায় কয়েক হাজার পড়ুয়া। শহরের রেলস্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। সেখান থেকে ট্রেন ধরে সীমান্ত এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু, বেশিরভাগ ভারতীয়কে স্থানীয়রা এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেনে চড়তে দেয়নি বলে জায়িছেলেন তিনি। এরপরই হঠাৎ হামলার সাইরেন বেজে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে সবাই খারকিভের মেট্রো স্টেশনে ঢুকে পড়েন।
ভারতীয় দূতাবাসের তরফেই খারকিভ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পড়ুয়াদের। তারপরই পায়ে হেঁটে শহর ছাড়ার চেষ্টা করেন হাজার হাজার পড়ুয়া। হোস্টেল থেকে নিজের ব্যাগ, কিছু দরকারি নথি ও ল্যাপটপ নিয়েই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন আদিত্য-সহ একাধিক পড়ুয়া।
আরও পড়ুন- 'পুতিনকে জীবিত চাই বা মৃত' রুশ ব্যবসায়ীর পোস্ট ঝড়ের গতিতে ভাইরাল নেটদুনিয়ায়
অন্যদিকে ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনতে আরও বেশি উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ‘অপারেশন গঙ্গা’-র মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বায়ুসেনার সি-১৭ বিমানে বেশ কিছু পড়ুয়াকে দেশে ফেরানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরী, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কিরেন রিজিজু এবং ভিকে সিং ইউক্রেনের প্রতিবেশি দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই পৌঁছে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন।