গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক দেশ লকডাউনের পথে পা বাড়িয়েছে। ফলে বিমান থেকে বাস বা গাড়ি, সব ধরণের পরিবহণের চাহিদাই প্রায় শূণ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতিদিন অপরিশোধিত তেলের দাম পড়ছে। আর এর মাঝেই আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে ঘটে গেল অভাবনীয় ঘটনা। শূন্য ডলারের নিচে নেমে গেল মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম।
মে মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মজুত করার কোনও জায়গা থাকবে না এই আশঙ্কায় সোমবার আমেরিকার বাজারে তেলের দাম শূন্য ডলারের নিচে চলে যায়। মে মাসের জন্য মার্কিন অপরিশোধিত তেলের বাজার সোমবার খোলা মাত্র দাম ঋণাত্মক হয়ে যায়। যা অতীতে কখনও হয়নি। দিনের শেষে এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে মাত্র এক সেন্টে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম অবশ্য ২৫ ডলার ছিল।
করোনা সংক্রমণের প্রভাব অর্থনীতিতে, নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে অভিবাসন বাতিল ট্রাম্পের
বাণিজ্য রাজধানী মুম্বইয়ের পর এবার দক্ষিণের চেন্নাই, ফের করোনার শিকার সাংবাদিকরা
রাষ্ট্রপতি ভবনেও এবার করোনার থাবা, আইসোলেশন পাঠান হল এস্টেটের ১২৫টি পরিবারকে
অপরিশোধিত তেলের দাম শূন্যেরও নিচে নেমে যাওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। সোমবার বাজার যখন বন্ধ হয়েছে, তখন মে মাসের তেলের জন্য ব্যারেল প্রতি দাম দাঁড়িয়ে -৩৭.৬৩ ডলারে। এই ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা বিশ্ব। মঙ্গলবার সেই দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে হয়েছে ১.১০ ডলার।
সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৩৭ বছরে সর্বনিম্ন হয়ে রেকর্ড গড়ল। মাত্র তিন দিন আগে তা ২১ বছরে সর্বনিম্ন হওয়ার রেকর্ড করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মে মাসের শুরুতে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ বছরে সর্বনিম্ন হবে। এমনও হতে পারে, তেল কেনার জন্য তেল সংস্থা ক্রেতাকে টাকাও দিতে পারে।
সোমবার আমেরিকায় জ্বালানি তেলের সূচক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টামিডিয়েট (ডব্লুটিআই)-এর দাম অর্থাৎ তেলের দাম শূন্য ডলারের নিচে চলে যায়। । ১৯৮৩-র পর সর্বনিম্ন। রবিবার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ৪৫ শতাংশ কমে ১০.০১ ডলার হয়। যা ১৯৮৬ সালের পর সর্বনিম্নই শুধু নয়, ১৯৮২ সালের পর তেলের দামে একদিনে এতটা পতন হয়নি।
শুক্রবার এশিয়ার বাজারে ডাব্লিউটিআই অপরিশোধিত জ্বালানী তেল ব্যারেল প্রতি বিক্রি হয়েছে ১৪ শতাংশ কমে ১৫.৬৫ ডলারে। ১৯৯৯ সালের পর তেলের দর এতো নিচে আর নামেনি। তবে বিনিয়োগকারীরা জুন মাস নাগাদ তেলের দাম আবার উঠতে পারে বলে আশা করছে। করোনার কারণে চাহিদা একেবারে কমে যাওয়ায় তেলের বাজার বড় ধরণের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। আমেরিকার রিজার্ভারগুলো নতুন উত্তোলিত তেল রাখার জায়গা পাচ্ছে না। ফলে দাম আরও কমে যাচ্ছে। মার্চ থেকে আমেরিকার রিজার্ভারগুলিতে তেল রিজার্ভের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে এগুলোতে নতুন করে তেল রাখা যাবে না।
আন্তর্জাতিক বাজারে সাধারণত এক মাস অন্তর তেলের দাম নির্ধারিত হয়। এর আগে মে মাসে বিক্রির জন্য তেল কেনা-বেচার যে চুক্তি হয়েছিল তার মেয়াদ আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা। বিক্রেতারা মে মাসে অর্থাৎ এখন থেকে দু’সপ্তাহ পরে যে তেল বিক্রি করবেন তা যদি এখনই সংরক্ষণাগারে রাখতে চান তা হলে তাদের তেল সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে৷ এই কারণেই তাঁরা তেলের দাম শূন্যের নীচে নামিয়ে দিয়ে তেল সংরক্ষণাগারের খরচ কমানোর চেষ্টা করেছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের সব উন্নত দেশেই চলছে লকডাউন। ভারত-সহ একাধিক উন্নয়নশীল দেশেও লকডাউনের কারণে রাস্তায় গাড়িঘোড়া কার্যত নেই। বন্ধ কলকারখানাও। এর ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমছিলই। স্বাভাবিক কারণেই তাই অপরিশোধিত তেলের চাহিদাও কমছিল। কিন্তু সেই সংকট সোমবার ভারতীয় সময়ের প্রায় মধ্য রাতে আকাশ ছুঁয়ে ফেলল, যখন নিউইয়র্কে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের মে মাসের জন্য ট্রেডিংয়ে দাম শূন্য ডলারেরও নীচে চলে গেল। বাজার যখন বন্ধ হয়েছে, তখন মে মাসের তেলের জন্য ব্যারেল প্রতি দাম দাঁড়িয়ে -৩৭.৬৩ ডলার।
এ বছর গোড়ার দিকে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৬০ টাকা প্রতি ব্যারেল। সেই ৬০ ডলার থেকে দাম পড়তে পড়তে সোমবার তেলের দামই পিছলে গেল।
তবে ইউরোপ-সহ বাকি বিশ্বের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এখনও ২৫ ডলারের বেশি। সোমবার এর দর ০.৮ শতাংশ কমে ২৭.৮৭ ডলার প্রতি ব্যারেলে নেমে আসে। ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে এক লিটার অপরিশোধিত তেলের দাম এখন ৭ টাকা হয়ে গিয়েছে যা জলের বোতলের দামের থেকেও কম৷ বর্তমানে এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১,১৪০ টাকা হয়ে গিয়েছে৷ এক ব্যারেলে ১৫৯ লিটার তেল থাকে৷ এই হিসেবে ১ লিটার তেলের দাম ৭.১৩ টাকা৷ অন্যদিকে প্যাকেজড জলের বোতলের দাম ২০ টাকা।