এবার থেকে প্রতি বছর এপ্রিলে ৪০ ডিগ্রি ছাড়াবে গরমের মাত্রা? ভয় ধরাচ্ছে নয়া রিপোর্ট
এবারের গরম খেল দেখিয়েছে। যতদিন না বৃষ্টি হয়েছে, ততদিন পর্যন্ত নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। এই বছর কলাইকুন্ডায় যা তাপমাত্রা উঠেছে, তা অনায়াসে সাহারা-কালাহারিকে জোর টক্কর দিতে পারে। ৪০ ডিগ্রি তো হামেশাই ছাড়িয়ে গিয়েছে এই বছর। এবার সামনে এসেছে নয়া তথ্য।
এই বছর সত্যি এপ্রিল ইস দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ। হাড়ে হাড়ে সেটা বুঝেছি আমরা। 'ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন'-এর একটি রিপোর্ট বলছে, এই নির্মম এপ্রিলকেই মানিয়ে চলতে হবে প্রতি বছর। দক্ষিণ এশিয়ায় তাপপ্রবাহ যেভাবে চড়চড়িয়ে বাড়ছে, তাতে আগামী বছরে এপ্রিলে রেকর্ড ভাঙা গরম পড়ার সম্ভাবনা ৪৫ গুণ বেশি হতে চলেছে।
মালয়শিয়া থেকে সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, গ্রেট ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন দেশের মোট ১৩ জন গবেষক এই সমীক্ষাটি চালিয়েছেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র বাংলাদেশেই তাপপ্রবাহ-জনিত কারণে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
তাপপ্রবাহের থাবা সবচেয়ে বেশিমাত্রায় বসে এশিয়ায়। এই বছরের এপ্রিল মাস মোটামুটিভাবে একশো বছরের মধ্যে উষ্ণতম। টানা এগারো বছর ধরে এপ্রিল মাস গরমের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মায়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনামেও এই বছর উষ্ণতম এপ্রিল হওয়ার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
ভারতে ৪৬ ডিগ্রি উঠেছে কোথাও কোথাও। রিপোর্টে না থাকলেও, মরুভূমির চাইতে গাঙ্গেয় সমভূমির কলাইকুন্ডাতে এরকম ভয়ানক গরমে চিন্তা ছড়িয়ে সর্বত্র। পশ্চিম এশিয়া জুড়েও তাপপ্রবাহ চলেছে। বিশেষ করে প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েলে তাপমাত্রা বহু জায়গায় ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি তিরিশ বছর অন্তর তিরিশ-দিন ব্যাপী তাপপ্রবাহ চলবে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে এই তাপপ্রবাহে এল নিনো একটা বড় ভূমিকা পালন করবে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনো মিলিয়ে এপ্রিলের তাপমাত্রার পারদ অনেকটাই চড়তে পারে বলে জানিয়েছে রিপোর্ট।
রয়্যাল নেদারল্যান্ডস আবহবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে গবেষণারত ক্যারোলিনা পেরেইরা মারহিদান বলেছেন, 'এশিয়া প্রায় চার বিলিয়ন মানুষের বাসভূমি। এখানে যারা গরিব, যারা প্রান্তিক, এই তাপপ্রবাহে তাদের ভয়ানক সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে।'
ইম্পিরিয়াল কলেজ, লন্ডনের গ্র্যান্থাম ইনস্টিটিউটের গবেষক মারিয়াম জাকারিয়া বলেন, 'যদি না কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড়সড় কোনও পদক্ষেপ করা না হয়, বা যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে আটকে রাখা না যায়, তাহলে এশিয়ায় তাপপ্রবাহ আরও ভয়ানক আকার ধারণ করবে। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতি বছর বাড়বে।'
এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনও জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা কমবে। তারপর থেকেই রাজ্যে বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশই চড়বে। আগামী ৬ দিনের মধ্যেই কলকাতা ও গাঙ্গেয় উপত্যকার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। আজকের পর থেকে দক্ষিণবঙ্গের হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা কমছে তবে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি। এদিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছ দক্ষিণবঙ্গের আরও কয়েকটি জেলায়। আগামীকালও এই জেলাগুলিতের অতি হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
গরম ও হালকা বৃষ্টির খেলায় বাড়ছে তাপমাত্রা। বর্ষা না আসা পর্যন্ত এই ধরনের বৃষ্টিতেই বাড়ছে ভ্যাপসা গরম।