প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে কি আদৌ চিনা মাঞ্জার ব্যবহারকে আটকানো যাবে? বিশেষ করে এই চিনা মাঞ্জা বিতর্ক ফের সামনে এসেছে বিশ্বকর্মা পুজোর আবহ শুরু হতে। শুক্রবার বিশ্বকর্মা পুজো। আর এর মানে এদিন শহরের আকাশ ছেয়ে যাবে ঘুড়িতে।
মা উড়ালপুলে তিন মাসে চিনা মাঞ্জায় জখম ১৩ জন বাইক চালক। বছরখানেক আগেও এই উড়ালপুলে তিন দিনে একজন করে চিনা মাঞ্জায় জখম হয়েছেন। এরপর কলকাতা পুলিশ মা উড়ালপুলের আশপাশে চিনা মাঞ্জায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু, তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। শেষমেশ মা উড়ালপুলের রেলিং-এর উপর দিয়ে দেড় মানুষের উচ্চতা পর্যন্ত জাল দিয়ে বেড়া বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হচ্ছে ২০ লক্ষ টাকা।
প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে কি আদৌ চিনা মাঞ্জার ব্যবহারকে আটকানো যাবে? বিশেষ করে এই চিনা মাঞ্জা বিতর্ক ফের সামনে এসেছে বিশ্বকর্মা পুজোর আবহ শুরু হতে। শুক্রবার বিশ্বকর্মা পুজো। আর এর মানে এদিন শহরের আকাশ ছেয়ে যাবে ঘুড়িতে। এই ঘুড়ি ওড়ানোর খেলায় সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ কাটাকুটিতে। কে কার ঘুড়ি-কে ভোকাট্টা করতে পারবে- সেই নিয়ে মাতবে মানুষ। এর জন্য যার ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জার ধার বেশি থাকবে সে কাটাকুটিতে জয় পাওয়ার ব্যপারে এগিয়ে থাকবে। এই কাটাকুটির খেলার নেশাতেই মানুষ মজে কড়া মাঞ্জায়। এই কারণেই এই মাঞ্জা সুতোর বাজারে চিনা মাঞ্জার কদর এত বেশি।
আরও পড়ুন- সরস্বতী নয়, বসন্ত পঞ্চমীতে পুরুলিয়ায় পূজিত হলেন বিশ্বকর্মা
কলকাতা শহরের চৌহদ্দিতে কলকাতা পুলিশের কড়াকড়ি রয়েছে চিনা মাঞ্জা বিক্রির ক্ষেত্রে। এরপরও চুপেচাপে বিভিন্ন স্থানে এই মাঞ্জা বিক্রি হচ্ছে। যা পুলিশের নজরদারিতেই আসছে না। অথচ কলকাতার শহরতলিতে একটু ঘুরে বেড়ালেই মিলে যাচ্ছে চিনা মাঞ্জা। কোথাও দর ৩৫০ টাকা। আবার কোনও দোকানে চিনা মাঞ্জার দর ৪৫০ টাকা। এরপরও রয়েছে সুপার কোয়ালিটির চিনা মাঞ্জা। যার দর আরও বেশি। ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে মিলছে ৯০০ মিটার চিনা মাঞ্জা মাখানো সুতো। হাওড়া থেকে শুরু করে খড়দহ-তে রমরমিয়ে চলছে চিনা মাঞ্জার ঢালাও বিক্রি। বিশেষ করে খড়দহের টি এন বিশ্বাস রোড এবং স্টেশন রোডে প্রায় সব দোকানেই মিলছে চিনা মাঞ্জা।
দেখুন ভিডিও- একাদশ শ্রেণির সুপর্ণার হাতে রূপ পেল বিশ্বকর্মা
খড়দহে এমনভাবে মারণ সুতোর বিক্রি চলছে অথচ পুলিশ কাজ করছে না, এমন প্রশ্নও অনেকে তুলেছে। বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার দাবি করেছেন চিনা মাঞ্জার বিরুদ্ধে মাঝেমাঝেই ধরপাকড় অভিযান হয়। কয়েক দিন আগেও পুলিশ খড়দহের বাজারে হানা দিয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিশ্বকর্মা পুজো-তেও এই অভিযান জারি রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- দেবীপক্ষের আগে বাঙালির শেষ উৎসব, রাতভর চলবে অরন্ধন, রাত পোহালেই পান্তা
চিনা মাঞ্জা বিক্রি-র তালিকায় নাম রয়েছে হাওড়া-র। সেখানেও কোনও লুকোচুরি নেই। চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতোর দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর জানিয়েছেন, গত ১৫ দিন ধরে চিনা মাঞ্জা ধরতে অভিযান হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। চিনা মাঞ্জার বিক্রেতাদের ধরতে পারলে পুলিশ ১৮৮ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করতে পারে। আইনি নোটিস ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির আধারেই চিনা মাঞ্জা বিক্রেতার জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রয়েছে পুলিশের।
কলকাতা পুলিশের যদিও দাবি, শহরে কোথাও চিনা মাঞ্জা বিক্রি হয় না। পুলিশি ঝামেলার ভয়ে এবার অধিকাংশ বিক্রেতা চিনা মাঞ্জা না পাওয়া যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেখেছে। কলকাতা শহরের বুকে কোনও বিক্রেতাই খুল্লমখুল্লা চিনা মাঞ্জা বিক্রি করতে পারছে না। তারা সাফ জানিয়েছে এই মাঞ্জা নিয়ে যেভাবে পুলিশি ঝামেলা বেড়েছে তাতে কেউ সমস্যায় পড়তে চাইছে না। তবে সাধারণ মানুষ থেকে ঘুড়ি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশের দাবি যে পুলিশ কেন চিনা মাঞ্জার গোড়ায় আঘাত না করে খালি এমন একটা দিকে যাচ্ছে- যেখানে শুধু নেটের জাল লাগিয়ে এই মারণ সুতোর খেলা বন্ধ করা সম্ভব নয়।