বেলুড় মঠের অনুষ্ঠান থেকে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিরোধীদের জবাব দিয়েছিলেন। আর কলকাতা বন্দরের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে নাম না করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাটমানি, সিন্ডিকেট নিয়ে খোঁচা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বললেন, 'গরিবের আশীর্বাদ আছে বলেই শান্তিতে ঘুমোতে পারি।'
এ দিন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট-এর দেড়শো বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই গরিব মানুষের সুবিধায় কেন্দ্রীয় সরকার কী কী প্রকল্প এনেছে, তার উল্লেখ করছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই আয়ুষ্মান ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের কথা টেনে আনেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেন, এই দু'টি প্রকল্পেই দেশের অন্যান্য অংশের গরিব এবং কৃষকরা উপকৃত হলেও তার সুবিধা পাচ্ছেন না এ রাজ্যের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন- নাম বদলে গেল কলকাতা বন্দরের, কলকাতায় এসে বড় ঘোষণা মোদীর
প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় সরকারের এই দু'টি প্রকল্পকেই এ রাজ্য কার্যকর করতে রাজি হননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এমন প্রকল্প আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রয়েছে। প্রকল্পগুলির বিরোধিতায় নামে রাজ্যের শাসক দলও।
এই প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে দেশের পচাত্তর লক্ষ মানুষ বিনা পয়সায় জটিল চিকিৎসা করানোর সুযোগ পেয়েছেন। কারও নাম না করেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গরিব মানুষের আশীর্বাদ আছে বলেই তো রাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারি।' একইভাবে কৃষকদের বার্ষিক ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করতে সরকার যে কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প এনেছে তারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। কটাক্ষের সুরে বলেন, সিন্ডিকেটের নাগাল এড়িয়ে, কাটমানি না দিয়েই এই টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন. 'সোজাসুজি সিন্ডিকেট, 'কাট' ছাড়াই' টাকা পৌঁছে যায় যে যোজনায়, তা কেউ চালু করতে চাইবেন কেন? দেশের আট কোটি কৃষক এত বড় সাহায্য পাচ্ছেন। আমি প্রার্থনা করি, নীতি নির্ধারকদের ঈশ্বর সদবুদ্ধি দিন। গরিবদের চিকিৎসায় সুবিধার জন্য আয়ুষ্মান যোজনা এবং কৃষকদের সুখ সমৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধি প্রকল্পের সুবিধা বাংলার গরিব, কৃষকরা পান।'
এর পরেই কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলার জনতার মেজাজ আমি জানি। বাংলার জনতার যা শক্তি, তাতে এই যোজনাগুলি থেকে এ রাজ্যের মানুষকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।'
এই অনুষ্ঠান থেকেই এ দিন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট- এর নাম বদলের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলকাতা বন্দরের নতুন নাম হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়েও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং শাসক দলের আপত্তি জানানোর সম্ভাবনা প্রবল। এ দিন সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চকেই যেভাবে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক বার্তা দিতে ব্যবহার করলেন, তাতে ২০২১ সালে বাংলার ক্ষমতা দখলে নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহরা কতখানি মরিয়া তা স্পষ্ট। মোদীর বক্তব্য শুনে দর্শকাসন থেকেও তাই এ দিন বার বার 'মোদী' 'মোদী' রব উঠেছে।