পুলিশি অভিযান শুরু হয় রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। আন্দোলনকারিদের অবস্থান মঞ্চও ভেঙে দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের আটক করা হয়।
চাকরি না পাওয়ার আট বছর, তারপর আন্দোলনে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস, আমরণ অনশন পণেরও প্রায় এক সপ্তাহ সম্পূর্ণ। কলকাতায় টেট চাকরিপ্রার্থীদের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে সেই দাবির স্বপক্ষে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্টও। কিন্তু, হঠাৎ একটি রাতের বিরাট পুলিশি অভিযানে টালমাটাল হয়ে গেল পর্ষদ চত্বর, মধ্যরাতে স্লোগানে, চিৎকারে আর তারপর স্তব্ধতায় জেগে রইল শুধু টেট উত্তীর্ণদের রেখে যাওয়া ‘ন্যায্য’ দাবি। আর তাঁদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চটি-জুতো।
আগেই টেট চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ। সেই পুলিশ হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু তাতেও প্রতিবাদ থেকে সরে দাঁড়াননি তাঁরা। অবশেষে ২০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে টেনে হিঁচড়ে সল্টলেকের রাস্তা থেকে টেট চাকরিপ্রার্থীদের তুলে দিল পুলিশ। ধাপে ধাপে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের আটক করা হয়। তাঁদের বাসে করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। ধ্বস্তাধস্তি চলার সময়ে বেস কিছু আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে চিকিৎসার জন্য নিয়ে চলে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল র্যাফ এবং পুলিশের বিশাল বাহিনী। করুণাময়ীর যে জায়গায় গত তিন দিন ধরে অনশন বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা, সেই চত্বর হয়ে যায় একেবারে শুনশান।
আন্দোলনকারীদের আটক করার আগে পুলিশের তরফ থেকে মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে তাঁদের উঠে যেতে বলা হয়। সেই অনুরোধে কাজ না হওয়ায় উচ্চপদস্থ আধিকারিকের নির্দেশে পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুলিশ। ২০১৪ সালের প্রার্থীদের যখন টেনে হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তখন এত কিছুর দেখেও নিজেদের প্রতিবাদে অনড় ছিলেন ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণরা। পুলিশ এসে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলে। তাঁদের মধ্যেও কিছু জনকে বাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। তবে, বেশির ভাগই নিরাপত্তার কারণে অত রাতে কোথাও চলে যেতে রাজি হননি। পরে আরও বড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা পুলিশকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁরা সকাল হলেই করুণাময়ী চত্বর ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু, তাঁদের সেই ভরসা সত্ত্বেও অবশেষে পুলিশ তাঁদের সকলকেই সরিয়ে দেয়।
করুণাময়ী এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে বলেই প্রথমে টেট আন্দোলনকারীদের একত্রে থাকা নিয়ে বারবার সতর্ক করেছিল পুলিশ। এই ১৪৪ ধারা জারি করার বিরুদ্ধে শুক্রবার হাইকোর্টে আবেদন জানাবেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালও। অন্যদিকে, আন্দোলস্থলে উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। এসএফআই, ডিওয়াইএফআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার আন্দোলনস্থলে ফের জমায়েত করা হবে।
আরও পড়ুন-
২০১৪ বনাম ২০১৭, টেট চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে পালটা আন্দোলনে নামলেন টেট চাকরিপ্রার্থীরাই
ভারতের সীমানায় ‘বিচিত্র’ পরিস্থিতি, মোকাবিলা করতেই ‘অগ্নিপথ’ স্কিম চালু করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার?
‘রানিকে খান খান করে ছাড়ব’, শাসকদলকে কড়া হুঁশিয়ারি সুকান্ত মজুমদারের, প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নেওয়ার বার্তাও