ভূত-প্রেত নিয়ে খেলা করেন বিভূতিভূষণ, এই অপবাদ দিয়ে স্কুল থেকে তাড়ানো হয়েছিল তাঁকে

  • দ্বারিকানাথ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন তিনি
  • তিনি স্ত্রীর উদ্দেশে প্ল্যানচেট করতেন
  • শ্রীরামপুরের সাব-ডিভিশনাল অফিসারকে জানানো হয়
  • একজন স্কুল শিক্ষক ভূত-প্রেত নিয়ে খেলা করেন

হুগলির জাঙ্গীপাড়া দ্বারিকানাথ হাইস্কুলে বিভূতিভূষণ তখন শিক্ষকতা করেন। কিছুদিন আগেই তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। মাঝে মাঝেই তিনি স্ত্রীর উদ্দেশে প্ল্যানচেট করতেন। সে সময় স্কুলের অস্থায়ী প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন সিংহরায় শিক্ষকতা ছেড়ে ওকালতি পেশায় ফিরতে চান। তাঁর ইচ্ছা বন্ধু ও ছাত্রদরদি শিক্ষক বিভূতিভূষণ ওই পদে বসুক। অন্যদিকে  বিএ পাশ বিভূতিভূষণের বদলে ওই গ্রামের সদ্য এমএ পাশ করা রাজকুমারকে তাঁর একদল অনুগামী ওই পদে বসাতে চাইলেন। বিভূতিভূষণকে সরাতে তাঁর প্ল্যানচেট করাকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলো। শ্রীরামপুরের সাব-ডিভিশনাল অফিসারকে জানানো হল একজন স্কুল শিক্ষক ভূত-প্রেত নিয়ে খেলা করেন। এসডিও সাহেব তদন্ত শুরু করলেন।  


এরপর স্কুল কমিটির সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজকুমার ভড় হলেন প্রধান শিক্ষক। নতুন প্রধান শিক্ষকের তৈরি এক রিপোর্টের ভিত্তিতে স্কুল-কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিল তা একটি বন্ধ খামে বিভূতিভূষণকে ধরিয়ে দেওয়া হল। খাম খুলে বিভূতিভূষণ দেখলেন, তাতে লেখা আছে,  ‘বিভূতিভূষণ ব্যানার্জি ইজ্ আন-স্যাটিসফ্যাকটোরি অ্যাজ এ টিচার, সো হি সুড বি রিমুভড ফ্রম দি টিচিং স্টাফ’।  ছাত্ররা বিভূতিভূষণকে ছাড়তে নারাজ। কিন্তু তা বললে তো হয় না। অপমানিত বিভূতিভূষণের আর কোনো উপায় রইল না। প্রধান শিক্ষকের আপত্তিতে স্কুলে তাঁকে ফেয়ারওয়েল দেওয়ার অনুমতিও পেল না ছাত্ররা। তবে ওই গ্রামেরই মহেন্দ্র সাঁপুইয়ের আটচালায় চোখের জলে তাদের প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানায় ছাত্ররা।  আত্মঘাতী বাঙালি কতখানি মূঢ় অথবা পাঁজি যে তাঁরা ‘পথের পাঁচালী’-র স্রষ্টাকে পর্যন্ত এভাবে অপদস্ত করতে পারে। 
আরও পড়ুন- প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী প্রথম কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছিলেন
ভারাক্রান্ত মনে বিভূতিভূষণ কলকাতায় ফিরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সুপারিশে ফের শিক্ষকতার চাকরি পেলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হরিনাভি অ্যাংলো সংস্কৃত স্কুলে। সহজ সরল উদাস প্রকৃতির এই মানুষটিকে তাঁর চেয়ে ১১-১২ বছরের বড়, এই গ্রামেরই গৃহবধূ নিভাননী নিজের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করতেন। হরিনাভি থাকার সময় বিভূতিভূষণের মাতৃ-বিয়োগ ঘটলে সেই স্নেহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু গ্রামের মানুষের সংকীর্ণতা ও কূট রাজনীতি বিভূতিভূষণের পিছনে উঠে পরে লাগে। হরিনাভিতে থাকাকালীনই ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় বিভূতিভূষণের ‘উপেক্ষিতা’ নামে একটি গল্প প্রকাশিত হয়। সেই গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্রে ছিল নিভাননী-র ছায়া।  গ্রামে গুঞ্জন শুরু হয়, মাস্টার গ্রামের বউকে নিয়ে কাগজে কেচ্ছা ছাপাচ্ছেন। 

Latest Videos

আরও পড়ুন- মহালয়ায় দক্ষিণেশ্বর মন্দির বন্ধ রাখার প্রস্তাব, চিঠি পাঠাল পুলিশ-প্রশাসন, দেখুন ছবি
এরপর একই পত্রিকায়  ‘উমারাণী’ নামে আরেকটি গল্প ছাপা হলে গ্রামে রটে যায় ওই গল্প নাকি নিভাননীর মেয়ে অন্নপূর্ণাকে নিয়ে লেখা। রটনা লোকে বলতে লাগল যে, শুধু বউ নয়, গাঁয়ের কমবয়সি মেয়েদের নিয়েও মাস্টার কেচ্ছা চালাচ্ছেন। এরপর বিভূতিভূষণ একটি ইস্তফাপত্র লিখে স্কুল ছুটির পর তা তুলে দিলেন হেডস্যারের হাতে। কোনও অনুরোধেই আর বিভূতিভূষণকে আটকে রাখা যায় নি। চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। কিন্তু পরপর দুটি জেলার দুটি স্কুলে বিভূতিভূষন জীবনে যে অভিঙ্গতা অর্জন করলেন তাতে গ্রামের সমাজ জীবন সম্পর্কে তার ঘেন্না বিদ্বেষ জন্মানোরই কথা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তা হয় নি, বরং গ্রাম্য জীবনকে তিনি এঁকেছিলেন মনের নীবিড় রঙ দিয়ে।   

আরও পড়ুন- জানেন কি, মিষ্টি খেলে আর শরীরের ক্ষতি নয় বরং কমছে এই জটিল রোগ
পরবর্তী চাকরিও কিছুদিনের জন্য মাড়োয়ারি কোটিপতি ব্যবসায়ী কেশোরাম পোদ্দারের গো-রক্ষণী সভার প্রচারক হিসেবে! দেশ ঘুরে ঘুরে সাধারণ শ্রোতাদের সামনে গো-জবাইয়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতা। এরপর পাথুরে ঘটার জমিদার খেলাতচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে শিক্ষক, সেখান থেকে তাদেরই ভাগলপুর জঙ্গলমহালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হয়ে ভাগলপুর। এস্টেটের কাজের মধ্যে ছিল, জঙ্গল আবাদ, জমির বিলি বন্দোবস্ত, তহসিলের তহবিল ঠিক রাখা, মাইলের পর মাইল ঘোড়ার পিঠে ঘুরে ঘুরে মহলের তদারকি। একজন লেখকের জন্য অদ্ভুত চাকরি হলেও দূরে পাহাড়, জঙ্গল আর বিস্তীর্ণ প্রান্তর ঘেরা পরিবেশ বিভূতিভূষণকে কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। তিনি ‘বিচিত্রা’-য় ধারাবাহিকভাবে লিখতে লাগলেন ‘পথের পাঁচালী’। প্রিয়তমা স্ত্রীকে প্ল্যানচেট করার দায়ে স্কুল এবং গ্রামে অপমানিত হয়ে বিতাড়িত হয়েছেন। অথচ বিভূতিভূষণের সাহিত্যে যত শ্রেষ্ঠ চরিত্র তারা সবাই গ্রাম্য জীবনেরই মানুষ। সে গুলোর অনেকের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ও আছে! অপু-দুর্গা তো আমাদের অনেকের কাছেই চিরচেনা চরিত্র।

Share this article
click me!

Latest Videos

২৬ এর নির্বাচনে কী থাকবেন ফিরহাদ হাকিম? বাতলে দিলেন শমীক ভট্টাচার্য #shorts #shortsfeed #bjp #tmc
হাড়োয়ায় তৃণমূল জিততেই বিজেপি প্রার্থীর জমি তচনচ, ক্ষোভ উগরে যা বললেন Samik Bhattacharya
'ভোট ব্যাঙ্কের জন্যই WAQF Board তৈরি করেছে Congress' বিস্ফোরক PM Modi | PM Modi Speech
Live | India vs Australia : পারথে সাড়ে তিন দিনে টেস্ট জয়, বিদেশের মাটিতে ভারতের সেরা সাফল্য?
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু! তার আগেই বিরোধীদের কড়া বার্তা PM Modi | Parliament Winter Session 2024