Cartoonist Narayan Debnath: চলে গেলেন "কার্টুন সম্রাট" নারায়ণ দেবনাথ

নারায়ণবাবু ভালোবাসতেন নিজেকে কার্টুনিস্ট বা কমিকস আর্টিস্ট বলার চেয়ে "শিশু সাহিত্যিক" হিসেবেই পরিচয় দিতে। হাঁদা-ভোঁদাকে নিয়ে নারায়ণ দেবনাথের করা প্রথম কাজটির নাম ছিল 'হাঁদা ভোঁদার জয়'। আর সেই গল্পের বিষয়বস্তু ছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পটভূমিকায় ১৯৬৫ সাল নাগাদ জন্ম নিয়েছিল "বাঁটুল দি গ্রেট"। তিনিই একমাত্র ভারতীয় কার্টুনিস্ট যিনি কার্টুনিস্ট হিসেবে ডি.লিট লাভ করেন। 

নারায়ণবাবু ভালোবাসতেন নিজেকে কার্টুনিস্ট বা কমিকস আর্টিস্ট বলার চেয়ে "শিশু সাহিত্যিক" হিসেবেই পরিচয় দিতে। হাঁদা-ভোঁদাকে নিয়ে নারায়ণ দেবনাথের করা প্রথম কাজটির নাম ছিল 'হাঁদা ভোঁদার জয়'। আর সেই গল্পের বিষয়বস্তু ছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পটভূমিকায় ১৯৬৫ সাল নাগাদ জন্ম নিয়েছিল "বাঁটুল দি গ্রেট"। তিনিই একমাত্র ভারতীয় কার্টুনিস্ট যিনি কার্টুনিস্ট হিসেবে ডি.লিট লাভ করেন। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার 
শিবপুর রোডে শিবপুর হিন্দু গার্লস স্কুলের কাছে একটি দোতলা বাড়ির একতলায় একাকীই কাটছিল কমিকস সম্রাটের শেষের দিনগুলি। সম্প্রতি 'নন্টে ফন্টে'র ৫০ বছর পূর্তি হলেও বাংলা বাজার সেভাবে কোনও উদ্যোগ নেয় নি। নারায়ণবাবু ভালোবাসতেন নিজেকে কার্টুনিস্ট বা কমিকস আর্টিস্ট বলার চেয়ে "শিশু সাহিত্যিক" হিসেবেই পরিচয় দিতে। কারণ তিনি তো শুধু আঁকেনই নি, গল্প লিখেছেনও। বরং বলা যায়, একই সাথে গল্প লেখা ও আঁকার 'ডাবল ডিউটি' পালন করেছেন। 
নারায়ণ দেবনাথের পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। যদিও তার জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়ার শিবপুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে পড়াশোনা শেষ হয়নি। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের পেইন্টিং বিভাগে। সেখান থেকেই আঁকাআঁকির যাবতীয় কলাকৌশল  শিখেছিলেন নারায়ণ। এছাড়া পারিবারিক ব্যবসা ছিল সোনা-রূপোর। যার জেরে স্বর্ণালঙ্কারের ডিজাইনও করতে পারতেন তিনি।

বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর ভাগ্যের খোঁজে নারায়ণবাবু নেমে পড়েন শিল্প-সংস্কৃতির জগতে। প্রথমদিকে তার চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। মনের মতো কাজ তো দূর অস্ত, 'বাংলা বাজারে' আঁকাআঁকি করে যে অন্তত খেয়ে-পরে টিকে থাকবেন, তেমন কোনো রাস্তাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যতদিন মনের মতো কাজ পেয়েছেন, ততদিন প্রসাধন সামগ্রীর লোগো বানাতেন। আর বানাতেন সিনেমা কোম্পানির বিভিন্ন লিফলেট। টুকটাক বইয়ের অলঙ্করণের কাজও করতেন। 

Latest Videos

হঠাৎ করে একদিন নারায়ণের হাতে এসে পড়ল 'শুকতারা' পত্রিকা। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় একটি কাজ করতে গিয়ে জানলেন, 'শুকতারা' পত্রিকাটির প্রকাশক 'দেব সাহিত্য কুটির' নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা। খোঁজ খবর করে তাঁদের প্রুফ রিডারের সহায়তায় পত্রিকার কর্ণধার সুবোধ মজুমদারের সাথে পরিচয় করলেন নারায়ণ। রত্ন চিনতে ভুল করলেন না সুবোধবাবু। নারায়ণের প্রতিভার প্রমাণ পেয়ে প্রথম দেখাতেই তাকে ধরিয়ে দিলেন তিনটি অলঙ্করণের কাজ। নারায়ণ তা করে ফেলল দক্ষতার সাথে। সুবোধবাবুও যথাযোগ্য সম্মান দিলেন নারায়ণকে। তৎক্ষণাৎ হাতে ধরিয়ে দিলেন পারিশ্রমিক। সুবোধবাবুর ছোটো ভাই ক্ষিরোদবাবু একদিন নারায়ণকে ডেকে বললেন,"গ্যাগ ধরনের যে মজার কমিকস হয় সেটি কি আপনি বাংলায় করতে চান? বাংলায় এইধরনের কাজ আগে হয়নি।" নারায়ণ রাজি হল। শিবপুরের পাড়ার রকে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় স্থানীয় ছেলেদের নানান কাণ্ডকারখানা দেখতেন। সেই কাণ্ডগুলো নিয়েই গল্প তৈরি করে ফেললেন। আর তৈরি হল হাঁদা-ভোঁদা চরিত্র। ১৯৬২ সালে শিশুদের মাসিক পত্রিকা 'শুকতারা'য় 'হাঁদা ভোদা' বের হওয়া শুরু হল। তার তিন প্রজন্ম পরেও অব্যাহত ছিল হাঁদাভোঁদার কাণ্ডকারখানা। হাঁদা-ভোঁদাকে নিয়ে তার করা প্রথম কাজটির নাম ছিল 'হাঁদা ভোঁদার জয়'। আর সেই গল্পের বিষয়বস্তু ছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ।কারোকারো মতে ১৯৫০-এর দশকে হাঁদা-ভোঁদাকে নিয়ে অনিয়মিতভাবে একটি কমিক স্ট্রিপ বের হত 'শুকতারা'য়। সেখানে কথা ও ছবির জায়গায় থাকত একটি বোলতার ছবি। আদতে যিনি ছিলেন সেযুগের এক বিখ্যাত শিল্পী প্রতুলচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। পরে নারায়ণ দেবনাথ সেই কাজ শুরু করেন ভিন্ন আঙ্গীকে। নারায়ণ যখন 'হাঁদা ভোঁদা' শুরু করেছিলেন, তখন বাংলা ভাষায় কমিকসের আবেদন প্রায় ছিল না বললেই চলে। অনেকটা একা হাতেই একটি জয়যাত্রার জন্ম দিয়েছিলেন নারায়ণ দেবনাথ।

ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পটভূমিকায় ১৯৬৫ সাল নাগাদ জন্ম নিল "বাঁটুল দি গ্রেট"। গোলাপি রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি আর কালো হাফপ্যান্ট পরা, ৪০ ইঞ্চি বুকের ছাতি সমৃদ্ধ, কাঠির মতো সরু ও খালি পা-ওয়ালা বাঁটুল সঙ্গে দুই ভাগ্নে ভজা আর গজা।বাঁটুল এক অপ্রতিরোধ্য চরিত্র যে অসীম বাহুবলী। সে একা হাতে পাকিস্তানের যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, সেনা সহ শত্রুপক্ষের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছি। ভজা-গজা যতই অপরাধ করুক না কেন বাঁটুল শেষ অবধি মানবিক থেকেছে। 

১৯৬৯ সালে 'কিশোর ভারতী' পত্রিকার জন্য জন্ম নেয় নন্টে ফন্টে চরিত্রদুটি। কমিক স্ট্রিপের দুই কিশোর চরিত্র 'নন্টে-ফন্টে' প্রথম দুবছর অনেকটাই হাঁদা-ভোঁদার মত ছিল। পরে ১৯৭২ সালে নন্টে ফন্টেতে বৈচিত্র্য আসে। নন্টে-ফন্টের হোস্টেল জীবন যোগ হয়। চরিত্র হিসেবে আসে হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট পাতিরাম হাতি, কেল্টুদা আর রাঁধুনি।  
এছাড়া নারায়ণ দেবনাথের হাতে জন্ম নেয় পটলচাঁদ চরিত্রটি। যে ছিল একজন জাদুকর, সে তার মেধা দিয়ে পাড়াতো সব সমস্যার সমাধান করে। ১৯৮২ সালে জন্ম নিল বাহাদুর বেড়াল। বাহাদুর বেড়াল খুবই অদ্ভূত ও বুদ্ধিমান। ১৯৮৩ সালে এল ডানপিটে খাদু আর কেমিক্যাল দাদু। এই চরিত্র দুটির সাথে পাঠকরা অনেকটাই সাদৃশ্য খুঁজে পান মর্টি ও রিকের। এরপর নারায়ণ দেবনাথের হাত ধরে আসে বটুকলাল। ১৯৮৪ সাল নাগাদ। বটুকলাল নামে শিক্ষকটি খুব পেটুক। যে সবসময় সুযোগ খোঁজে খাবার চুরির। কিন্তু ছাত্রদের কারণে তার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এসব ছাড়াও  নারায়ণ দেবনাথ জন্ম দেন গোয়েন্দা কৌশিক রায়ের। কৌশিক রায়কে নিয়ে নিজের লেখা ১৪টি গল্পের ধারাবাহিককে রূপ দেন নারায়ণ। গোয়েন্দা কৌশিক রায়ের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৯৭৫ সালে। গল্পটির নাম ছিল 'সর্পরাজের দ্বীপে'। 
পদ্মশ্রী, সাহিত্য অকাদেমি, বিদ্যাসাগর পুরস্কার,  বঙ্গভূষণ সহ একাধিক সম্মানে ভূষিত হন নারায়ণ দেবনাথ। তিনিই একমাত্র ভারতীয় কার্টুনিস্ট যিনি কার্টুনিস্ট হিসেবে ডি.লিট লাভ করেন। 

গতবছর ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় তিনি কয়েকবছর ধরেই ভুগছিলেন। এরআগেও একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল শিল্পীকে। চিকিৎসার ভার নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ১৬ জানুয়ারি শিল্পীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফেরা হল না। মঙ্গলবার সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবাদপ্রতিম শিল্পী নারায়ণ দেবনাথ। রেখে গেলেন তাঁর অমর সব সৃষ্টি। 

আরও পড়ুন- বাটুল, হাঁদা ভোঁদা নন্টে-ফন্টেকে অনাথ করে, চলে গেলেন তাদের স্রষ্ঠা

আরও পড়ুন- টানা ২৫ দিনের লড়াই, শেষ তিন দিনেই নারায়ণ দেবনাথের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি

আরও পড়ুন- নারায়ণ দেবনাথের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে শিবপুরে, বাড়ি থেকে শুরু শেষযাত্রা

Share this article
click me!

Latest Videos

‘West Bengal-এ জঙ্গিদের সরকারের মুখোশ Mamata Banerjee’ Suvendu Adhikari-র ঝাঁঝালো তোপ মমতাকে
লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
PM Modi Live : কুয়েতে Gulf Spic-এর ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মোদীর, দেখুন সরাসরি
Narendra Modi : কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে জোর ভারতের, দেখুন কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী