এই অ্যাসিড স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে, এটি কিডনি ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। এমন অবস্থায় ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে, সুষম খাদ্য এবং উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে, যার প্রভাব স্বাস্থ্যের ওপর স্পষ্টভাবে দেখা যায়। অল্প বয়সেই মানুষ মারাত্মক রোগের শিকার হচ্ছে। ইউরিক অ্যাসিডও আজকাল সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলির মধ্যে একটি। ইউরিক অ্যাসিড আমাদের লিভারে উৎপন্ন একটি বর্জ্য পদার্থ, যা কিডনি ও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। তবে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, এই অ্যাসিড স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে, এটি কিডনি ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। এমন অবস্থায় ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে, সুষম খাদ্য এবং উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হল কিডনি বা লিভারের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত। কিডনি বা লিভারে কোনও সমস্যা হলে ইউরিক অ্যাসিড ঠিকমতো বের হতে পারবে না এবং এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হল হাই পিউরিন এবং হাই প্রোটিনযুক্ত খাবারের অত্যধিক ব্যবহার। এর বাইরে তৃতীয় বৃহত্তম কারণ হল শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া জীবনযাপন। সাধারণত এসব কারণে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ইউরিক অ্যাসিড কি কি সমস্যার সৃষ্টি করে?-
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে তা আমাদের শরীরের ছোট ছোট জয়েন্টে জমা হয় এবং গাউটের সমস্যা তৈরি করে। গেঁটেবাত হল এক ধরনের আর্থ্রাইটিস, যাতে হাত, পা ও অন্যান্য অংশের জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং মানুষের হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হয়। কিছু মানুষের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথরের সমস্যা হয়। ইউরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত বেড়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলিওর হতে পারে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো ইউরিক অ্যাসিড কোনও দুরারোগ্য রোগ নয় এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এই ৫টি ডাল খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে-
পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে, ডাল প্রোটিনের একটি ভাল উত্স হিসাবে মনে করা হয় এবং প্রায় সমস্ত ডালেই ভাল পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরিক অ্যাসিডে রোগীদের ডাল খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত। মাস কলাই, মুগ, অরহর ডাল, সয়াবিন, ছোলা এবং ছোলার ডাল প্রোটিন সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয় এবং যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি তাদের যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। এটা করলে সমস্যা বাড়তে পারে। এ ছাড়া সব উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া কমাতে হবে। নিরামিষাশীরা এ বিষয়ে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট চার্ট তৈরি করতে পারেন।
এই নন-ভেজ খাবারে ভয়ানক পিউরিন থাকে-
চিকিৎসকের মতে, ভেজ খাবারের চেয়ে নন-ভেজ খাবার ইউরিক অ্যাসিড বেশি বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড রোগীদের জন্য লাল মাংস সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। এতে উচ্চ পরিমাণে পিউরিন রয়েছে, যা দ্রুত ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড রোগীদের সামুদ্রিক খাবার এবং লাল মাংস সহ সমস্ত আমিষজাতীয় খাবার থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকতে হবে। মানুষ যদি তাদের খাদ্যাভ্যাস উন্নত করে, তাহলে তা অনেকাংশে স্বস্তি দিতে পারে। সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে যাদের গুরুতর সমস্যা রয়েছে তাদের পরামর্শের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ইউরিক অ্যাসিড উপেক্ষা করা বিপজ্জনক।